শ্যালো মেশিন দিয়ে খানাখন্দ-গর্তে জমা পানি সরাচ্ছে পুলিশ
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছিল। যানবাহনের দীর্ঘ সারি গাজীপুর থেকে শুরু হয়ে রাজধানীর বনানী এসে ঠেকেছিল। গতকাল রোববার সকাল থেকেই এই যানজটের শুরু। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়, দুপুর গড়িয়ে গেলেও গাড়ির জট কমেনি। এতে অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কর্মজীবী মানুষ। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় টঙ্গী এলাকার রাস্তার খানাখন্দ ও গর্তে পানি জমে যায়। এতে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়, যানজট লেগে যায়। যানজটের কারণে বিমানবন্দর এলাকায় থেকে দীর্ঘ ৩-৪ ঘণ্টায়ও রাজধানীতে পৌঁছতে পারেননি। দুপুর থেকে টঙ্গী-উত্তরার বিভিন্ন স্পটে মোটর বসিয়ে গর্তের পানি সরানোর উদ্যোগ নেয় ট্রাফিক পুলিশ।
জানা গেছে, রোববার সকাল থেকেই বিমানবন্দর সড়কে সড়কে পানি জমায় যান চলাচল প্রায় থমকে ছিল। ঢাকার ভেতরে প্রবেশ এবং বের হওয়ার দুই পথেই ছিল তীব্র যানজট। সেইসঙ্গে সড়কের মোড়গুলোতে ছিল কাজে বের হওয়া মানুষের ভিড়। এ কারণে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটাও দায় হয়ে পড়ে। কাজে বের হওয়া মানুষ যানজটের কারণে বাসে না উঠে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। ঢাকা মহানগর উত্তরা ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, বিমানবন্দর এলাকায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কারণে এমনিতেই মহাসড়ক এখন অনেক সরু। এর মধ্যে বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমে যায়। পানি জমে থাকায় চালকেরা খানাখন্দ ও গর্ত বুঝতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পথে দুপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে অপসারণ করা হয়েছে। এখন যানবাহন চলতে পারছে। যানজটের সারি বিমানবন্দর থেকে নিকুঞ্জ এলাকা পর্যন্ত রয়েছে বলেন তিনি।
এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে বিমানবন্দর এবং রাজধানীর বনানী থেকে টঙ্গীর চেরাগ আলী পর্যন্ত তীব্র যানজট রয়েছে। ঢাকায় ঢোকার মুখে আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যানজট আছে।
এমন পরিস্থিতিতে শ্যালো মেশিন সংগ্রহ করে বিমানবন্দর সড়কের পানি সরাতে উদ্যোগ নেয় পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগ। গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে এই মেশিন দিয়ে তারা পানি সরানোর কাজ শুরু করে। ঘণ্টাখানেক পর কমে সড়কের পানি। তখন বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচলে গতি বাড়ে কিছুটা। তবে বিকেলে ৩টা পর্যন্ত এই সড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ট্রাফিক পুলিশ।
পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগ সূত্র জানায়, গতকাল রোববার ভোর থেকে রাজধানীতে শুরু হয় বৃষ্টি। এতে বিমানবন্দর সড়কের উত্তরার অর্ধেক অংশ পানির নিচে চলে যায়। ফলে সড়কটিতে গতি কমে যায় যান চলাচল। এর মধ্যে আবার সড়কের খানাখন্দ ও গর্তে পড়ার আশঙ্কায় যানবাহনগুলো পানির অংশ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। এতে উত্তরা ছাড়িয়ে খিলক্ষেত, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত যানজট ছাড়িয়ে যায়।
দীর্ঘ সময় আটকে থেকে উপায় না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যে ছুটেন যাত্রীরা। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে যানজট নিরসনে হিমশিম খায় ট্রাফিক পুলিশ। একইভাবে খিলক্ষেত, বাড্ডা, নতুন বাজার, রামপুরা এলাকা পর্যন্ত বিমানবন্দরগামী লেনে সৃষ্টি হয় যানজট। জানতে চাইলে ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার নাবিল কামাল শৈবাল বলেন, বিমানবন্দর সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি। বিআরটিএ’র চলমান কাজের জন্য সড়কে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তের পানি অপসারণ করতে শ্যালো মেশিন লাগানো হয়েছে। এখন সড়কে পানি কমছে, সেই সঙ্গে গতি বাড়ছে যান চলাচলে।
চালক, যাত্রী এবং ট্রাফিক পুলিশের সংশ্লিষ্টরা জানান, যানজটের প্রধান কারণ উত্তরা এলাকায় বিআরটিএ’র প্রকল্প। প্রকল্পের কাজের জন্য সড়কে বড় বড় গর্ত হয়েছে। এসব গর্তে জমেছে পানি। এই পরিস্থিতিতে বিমানবন্দর হয়ে টঙ্গি বা গাজীপুরের দিকে যানবাহন দ্রুত গতিতে চলতে পারছে না। ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক উত্তর বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন আগেও বৃষ্টির কারণে সড়কে পানি জমে এমন যানজট তৈরি হয়েছিল। তখন বিআরটিএ প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের নিচের সড়ক সংস্কার করতে বলা হয়। কিন্তু তারা করবো, করবো বলে এখন পর্যন্ত সড়কগুলো ঠিক করেনি। ফলে আজও বিমানবন্দর সড়ক প্রায় কলাপস করেছে।