এসিডদগ্ধ মেয়েকে চিকিৎসার জন্য ভারতের হাসপাতালে নিয়ে গেলেও খরচ জোগাতে না পেরে সেখানে মেয়েকে ফেলে রেখে তার মা-বাবা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে চিকিৎসাহীন অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাতে থাকা মেয়ে কলেজছাত্রী সুমাইয়া ফেরদৌসী (১৭) হোয়াটসঅ্যাপে বিষয়টি পটুয়াখালীর পুলিশকে জানিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে আকুতি জানিয়েছেন।
সুমাইয়া পটুয়াখালী সদর উপজেলার গেঁড়াখালী গ্রামের রাজা গাজীর মেয়ে এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম শুক্রবার জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে হোয়াটসঅ্যাপে ভারতের ভেলোরের সিএমসি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এসিডদগ্ধ ভুক্তভোগী তাকে ফোন করে জানান, তিন মাস আগে মা-বাবা তাকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যান। এর তিন সপ্তাহ পর তার বাবা রাজা গাজী বাংলাদেশে চলে আসেন। সর্বশেষ তিন দিন আগে তার মা আকলিমা বেগমও তাকে ফেলে বাংলাদেশের চলে আসেন। বাবা-মা দুজনেই চলে আসায় এখন তার চিকিৎসা চলছে না, ওষুধ খেতে পারছেন না। প্রচ- ব্যথায় কাতরাচ্ছেন তিনি।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমরা ভুক্তভোগীর বাবা রাজা গাজীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তার সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ বিষয়ে শনিবার (২১ জানুয়ারি) হোয়াটসঅ্যাপে এ প্রতিবেদকের সাথে এসিডদগ্ধ ভুক্তভোগীর কথা হয়। তিনি জানান, তিনি পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গত বছরের ২ আগস্ট রাতে তার উপর এসিড নিক্ষেপ করা হলে তার মুখমন্ডল ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। এরপর তাকে প্রথমে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, সেখান থেকে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকার শেখ হাসিনার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। পরে ব্র্যাকের সহযোগিতায় এসিড সারভাইভাল ইনস্টিটিউটে কিছুদিন তার চিকিৎসার পর তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকায় তার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা ২০ লাখ টাকা লাগবে জানালে তার বাবা তাকে বাড়ি নিয়ে যান বলে জানান ওই ভুক্তভোগী।
অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকলে তিন মাস আগে তার বাবা রাজা গাজী ও মা আকলিমা বেগম তাকে নিয়ে ভারতের ভেলোরের সিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসা খরচও তার কৃষক বাবার পক্ষে চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই ভারতে আসার তিন সপ্তাহ পরই তার বাবা দেশে চলে যান। তার বাবা আর টাকা না পাঠানোর কারণে তিন দিন আগে তাকে না বলে তার মা-ও তাকে ছেড়ে চলে গেলে তিনি এখন নিঃসঙ্গ এবং চিকিৎসাহীন অবস্থায় আছেন।
সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানান, ‘আমি এখন আর হাসপাতালে নেই। হাসপাতাল থেকে আমার নাম কেটে দিয়েছে। তাই হাসপাতালের পাশে এক বাংলাদেশী আন্টির বাসায় আশ্রয় নিয়েছি। চিকিৎসা বন্ধ।’
ওই হাসপাতালে তার চিকিৎসার জন্য আরো ৮০ হাজার রুপি প্রয়োজন বলে চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন বলে জানান সুমাইয়া। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাইদের সাথে একই এলাকার প্রতিপক্ষের সাথে নানা বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাই এনায়েত গাজী ও রাসেল গাজী তার উপর এসিড নিক্ষেপ করেন। ভুক্তভোগীর খালা রেবেকা বেগম এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে এনায়েত গাজী ও রাসেল গাজীর বিরুদ্ধে গত বছর ১৫ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারীর কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীর বাবা রাজা গাজী জানান, ‘আমি একজন প্রান্তিক কৃষক। সামান্য জমি-জমা চাষ করে সংসার চালাই। মেয়ের চিকিৎসার টাকা সংগ্রহ করতে আমি দেশে এসেছি। এখনো টাকা সংগ্রহ করতে পারিনি এছাড়াও আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাই যেতে পারছি না।’