সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের পেটানোর প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশে রহুল আমীন গাজী
সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাংবাদিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে নগরীর কদমফুল ফোয়ারা, তোপখানা রোড এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে প্রেস ক্লাবে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে করেন তারা। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে এর আয়োজন করে।
সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, নির্যাতিত নাগরিকরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আশ্রয় চায়। আজ সুপ্রিম কোর্টও নিরাপদ নয়। সেখানে সাংবাদিকদের নির্বিচারে পেটানো হচ্ছে। আইনজীবীরা মার খাচ্ছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট আর মানুষের ভরসাস্থল থাকছে না। সাংবাদিক আজ অসহায়।
তারা বলেন, দেশের নাগরিকরা আজ অসহায়। সরকার রাষ্ট্রের অর্গানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সমাবেশ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগ এনে পদত্যাগ দাবি করা হয়।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, একুশে পদক প্রাপ্ত ছড়াকার ও সিনিয়র সাংবাদিক আবু সালেহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি বাছির জামাল, রাশেদুল হক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, জাতীয় প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য কাজী রওনাক হোসেন, শাহনাজ বেগম পলি, সিনিয়র সাংবাদিক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, মহসিন হোসাইন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্মসম্পাদক শাহজাহান সাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম, দপ্তর সম্পাদক ডিএম অমর, রফিক লিটন, জেসমিন জুঁই প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, সুপ্রিম কোর্টে গতকাল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মহড়া হয়ে গেল। আগামী জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে সেটি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন থেকেই অনুমেয়। মানুষের শেষ ভরসাস্থল আদালতেও আজ মানুষের নিরাপত্তা নেই। আদালত পাড়ায় আজ আইনজীবীদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে। বিচারকরা বসে বসে তামাশা দেখছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আদালতের যদি এ অবস্থা হয়, মানুষ কার কাছে যাবে? কোথায় বিচার পাবে? আজ দেশের নাগরিকরা পুরোপুরি অসহায়।
এম এ আজিজ বলেন, দেশে চরম ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন চলছে। গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। প্রবল দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম এবং সরকারের গণবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যাতে কোনো আন্দোলন গড়ে উঠতে না পারে তার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। এই আইন সাংবাদিকতাকে শেষ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীন বিচার বিভাগ হলো জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ প্রয়োগের শক্তি। অথচ স্বাধীন বিচার বিভাগের অনুপস্থিতিতে আইনের শাসনের পরিবর্তে আমলাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা শক্তি অর্জন করে চলছে। বিচারের নামে পুলিশি বিচার চলবে কি না তাই দেখতে হবে। ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে দিন দিন দুর্বল হচ্ছে জনগণ। অধিকার হারাচ্ছে জনগণ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার গঠনের ব্যবস্থা বিলীন হয়ে গেছে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকরা কোনো পক্ষ নয়, তারা শুধু সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিল। কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীদের পরিচয়পত্র এবং মাইক্রোফোন এবং ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও তাদের টার্গেট করে এ হামলা চালানো হয়। যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। বিরোধী মতের আইনজীবীদের ওপর হামলা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট ডাকাতির ছবি ও নিউজ যাতে সংগ্রহ করতে না পারে সে জন্য পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিচারালয়ে সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলা এবং এভাবে ভোট ডাকাতি মেনে নেয়া যায় না। সাংবাদিকদের এভাবে পেটাল, বিচারপতিরা চেয়ে চেয়ে দেখলেন এটা সহ্য করি কীভাবে? তিনি বলেন, পুলিশ নির্দয়ভাবে পিটিয়ে আহত করেছে জাগো নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ফজলুল হক মৃধা, এটিএন নিউজের রিপোর্টার জাবেদ আক্তার, আজকের পত্রিকার রিপোর্টার এস এম নূর মোহাম্মদ, মানবজমিনের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আব্দুল্লাহ আল মারুফ, এটিএন বাংলার ক্যামেরাপার্সন হুমায়ুন কবির, সময় টিভির ক্যামেরাপারসন সোলাইমান স্বপন, ডিবিসির ক্যামেরাপারসন মেহেদী হাসান মিম ও বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিমসহ আরও অনেক সাংবাদিককে। এসময় মনে হলো এটা আদালত পাড়া নয়, একটা টর্চারসেল। বিচারালয়ে এমন অপকর্ম করে অভিযুক্ত পুলিশগুলো চাকরিতে থাকে কী করে?