বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

রমজানে মানবসেবা

মাওলানা সাইফুল ইসলাম সালেহী:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৩

আলহামদুলিল্লাহ, প্রতি বছরের মতো এবারো পেয়েছি মাহে রমাজান। আল্লাহ বলেন- ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সূরা বাকারাহ-১৮৩) এই মাসে মুত্তাকি হওয়ার সুযোগ, এই মাসে আল্লাহর খাঁটি বান্দা হওয়ার সুযোগ। শুধু এই মাসে সালাত-সিয়াম, সাহরি ও ইফতারের মাধ্যমে আল্লাহর খাঁটি বান্দা হওয়া যাবে না, আল্লাহর খাঁটি বান্দা হতে হলে সালাত-সিয়াম, সাহরি ও ইফতারের পাশাপাশি মানবসেবা করতে হবে। আমাদের সমাজে অনেক গরিব মিসকিন এতিম বিধবা ও অভাবী রয়েছে, তাদেরকে সাহরি-ইফতারি খাবার দিতে হবে এবং বিভিন্নভাবে সেবা করতে হবে। রমজানে এই মানবসেবার মাধ্যমে আল্লাহর খাঁটি বান্দা হওয়ার বিশাল সুযোগ। প্রিয় নবীজী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং আল্লাহর কাছে সাওয়াব অর্জনের খাঁটি নিয়তে রমজানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
অভাবীদের ইফতার সামগ্রী দেয়া : আমাদের সমাজে অনেক এতিম মিসকিন ও অভাবী রয়েছে, রমজান মাসে তারা ভালো মানের ইফতারি ও সাহরি অর্থের অভাবে খেতে পারে না, অনেক শ্রমিক ও রিকশাওয়ালা রয়েছে তারা ভালো মানের ইফতারি ও সাহরি অর্থের অভাবে খেতে পারে না। কিন্তু তাদের মন চায় ভালো ও সুস্বাদু সাহরি-ইফতারি খেতে। সমাজে ধনী ব্যক্তিরা যদি এসব মানুষকে ইফতারি ও সাহরি খাবার ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে তারা খুশি হবে এবং তাদের আত্মা খুশি হবে। প্রিয়নবী সা: বলেন, ‘যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাহলে সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তবে এতে ওই রোজাদারের সাওয়াব একটুও কমবে না।’ (তিরমিজি ৩/১৭১)
বিধবাকে সহায়তা : সমাজের আরেক অসহায় শ্রেণীর নাম হচ্ছে বিধবা। বিশেষ করে দরিদ্র, নিঃস্ব, অবহেলিত বিধবা নারী। এমন বিধবাকে সাহায্য-সহযোগিতা করাকে রাসূলুল্লাহ সা: ইবাদততুল্য নেকির কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিধবা ও মিসকিনের সমস্যা সমাধানের জন্য ছোটাছুটি করে সে যেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে লিপ্ত।’ বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় রাসূলুল্লাহ সা: এ কথাও বলেছেন, ‘সে যেন ওই ব্যক্তির মতো যে সারা রাত সালাত আদায় করে এবং সারা বছর সিয়াম পালন করে।’ (বুখারি-৫৩৫৩)
নিঃস্ব ও ক্ষুধার্তকে খাবার দান : মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য হলো তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিঃস্ব-দরিদ্র, এতিম ও কারাবন্দীদের খাদ্য দান করে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তারা আল্লাহর মহব্বতে অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দীদের খাবার দেয়। (তারা বলে) শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমরা তোমাদের খাদ্য দান করি। আর আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ (সূরা দাহর : ৮-৯)
রোগীর সেবা করা : রোগীর সেবার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন রোগীকে সেবা করে বা দেখতে যায়, তখন সে জান্নাতের উদ্যানে ফল আহরণ করতে থাকে।’ বলা হলো, হে রাসূল সা:! ‘খুরফা’ কী? তিনি বলেন, ‘জান্নাতের ফল’। (মুসলিম-২৫৬৮, তিরমিজি-৯৬৮) রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম তার কোনো ভাইয়ের রোগ দেখতে যায় অথবা সাক্ষাৎ করতে যায়, তখন আল্লাহ বলেন- ‘তোমার জীবন সুখের হলো, তোমার চলন উত্তম হলো এবং তুমি জান্নাতে একটি ইমারত বানিয়ে নিলে।’ (তিরমিজি-২০০৮)
প্রতিবেশীর হক আদায় : আত্মীয়-স্বজনের পর প্রতিবেশী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে যে ব্যক্তি পেটপুরে খায় সে প্রকৃত মুত্তাকি নয়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয়, যে ব্যক্তি তৃপ্তিসহকারে পেটপুরে খায়, অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (সহিহ আত-তারগিব-২৫৬১, বায়হাকি-২০১৬০)
ত্রাণ বিতরণ : ধনী-গরিব নির্বিশেষে মানুষ দুর্যোগে নিপতিত হয়ে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে নিঃস্ব হতে পারে। যেমন- ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, বন্যা, নদীভাঙনসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যেকোনো সঙ্কটময় অবস্থায় অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়ে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মু’মিনের দুনিয়ার বিপদগুলোর কোনো একটি বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তার আখিরাতের বিপদগুলোর মধ্য থেকে একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দেবেন।’ (বুখারি-২৪৪২, মুসলিম -২৫৮০)
শরণার্থীদের আশ্রয় দান : মুহাজিরদের আশ্রয়দানকারী আনসারদের প্রশংসায় মহান আল্লাহ বলেন- ‘আর যারা মুহাজিরদের আগমনের আগে এ নগরীতে বসবাস করত এবং ঈমান এনেছিল। যারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং তাদের (ফাই থেকে) যা দেয়া হয়েছে, তাতে তারা নিজেদের মনে কোনোরূপ আকাক্সক্ষা পোষণ করে না। আর তারা নিজেদের ওপর তাদের অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তাদের আছে অভাব। আসলে যারা হৃদয়ের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।’ (সূরা হাশর-৯)
তাই প্রত্যেক মুসলমান বিশেষ করে সচ্ছল মু’মিনের উচিত রমজান মাসে মানবসেবা কাজে আত্মনিয়োগ করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং জান্নাত লাভের পথ তালাশ করা। লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com