বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, বিএনপি’র উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দলটি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হয়েছে যে দেশে কোনো সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ নেই। সরকারী দল ছাড়া আর কারো রাজনীতি করার অধিকার নাই। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকার দেশ থেকে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ধ্বংস করে নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখতে রাষ্ট্রযন্ত্রসহ সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করেছে। গতকাল সোমবার নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
প্রিন্স বলেন, গত শনিবার দেশব্যাপী বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাসহ নেতৃবৃন্দের গাড়ি ভাঙচুর করে আওয়ামী দুস্কৃতিকারীরা। এছাড়া নেতাকর্মীদের বাড়িতে ও ইফতার পার্টিতে হামলা চালায়, অনেকের বাড়িতে লুটপাট চালায় ও তার গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আমি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ দিশেহারা। রমজান মাসেও মানুষ ঠিক মতো এক বেলা খেতে পাচ্ছে না। অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী ঋণ করে সঞ্চয় ভেঙে দিনাতিপাত করছে, ঋণে জর্জরিত মানুষ ঋণ শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করছে, অভাবের তাড়নায় মা তার আদরের সন্তানকেও বিক্রি করে দিচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদপুষ্টরা দুর্নীতি করে, ব্যাংক থেকে ঋণের নামে লুট করে দেশ-বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে। আর এসবের প্রতিবাদ করলে এবং সংবাদ প্রকাশ করলে সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে চলছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার খড়গ।
তিনি আরো বলেন, ভয়াবহ দুঃশাসনের কারণে জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের দৃষ্টিকে ঝাপসা করার জন্য একের পর এক নতুন ইস্যু তৈরির অংশ হিসেবে দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, মিথ্যা অভিযোগে মামলায় জড়ানো, নিপীড়ন ও নির্যাতনের এক মহাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও তাদের ওপর নিষ্ঠুর হামলা চালিয়ে আহত করা হয়েছে। এসব ঘটনা সরকারি নির্যাতনের চলমান ভয়াবহ চিত্র।
বিএনপির এই নেতা বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক এক অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের সহধর্মীনি ‘গণতন্ত্রের মা’ বিএনপি চেয়ারপারসন ও চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ কুৎসিত ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারাগারে বন্দী।
তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্র ও বেগম খালেদা জিয়া যেন অভিন্ন সত্ত্বা। দেশের মানুষ আজ সকল অধিকারহারা হয়ে এক ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে প্রতিনিয়ত দেশনেত্রীর মুক্তির প্রহর গুনছে। জনগণ মনে করে, বেগম জিয়া কারামুক্ত হলেই অন্ধকারের কালো রাতের অবসান হবে, মানুষ প্রাণখুলে কথা বলতে পারবে, গুমের ভয়-ক্রসফায়ারের ভয়-মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতারের ভয় থেকে মুক্ত হতে তাদের মধ্যে সাহস স ারিত হবে। দেশে-বিদেশে সকলেই আজ গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সোচ্চার। দেশের সকল জনগোষ্ঠী গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে মুক্তি দিতে হবে।
প্রিন্স বলেন, সরকার তাদের সকল অন্যায় এবং দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে জনদৃষ্টিকে ভিন্নদিকে সরানোর জন্য বেপরোয়া গতিতে দেশব্যাপী হামলা-মামলা, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও আহত করা শুরু করেছে। কিন্তু এভাবে নির্যাতন চালিয়ে আওয়ামী সরকার নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে না। কারণ জনগণ এখন ক্ষমতাসীন সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। জনগণের দাবি, এই মুহূর্তে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আগামী নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। জনগণ আর প্রহসনের নির্বাচন হতে দেবে না।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এবং তার সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে চলছে একের পর এক মিথ্যা মামলার খড়গ। অন্যায়ভাবে আদালতকে ব্যবহার করে তাদের সাজা দিয়ে হয়রানি করার চক্রান্ত তীব্র গতিতে এগিয়ে চলছে। জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলা থাকলেও সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় রাজনীতি, নির্বাচন, জনগণ থেকে জিয়া পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করতে অবৈধ সরকারের হীন প্রচেষ্টা যেন থামছেই না।’ দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে কারাবন্দী ও ভীষণ অসুস্থ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীসহ কারাগারে বন্দী সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গায়েবি মামলা প্রত্যাহার ও ঈদুল ফিতরের আগেই নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান তিনি।