গাছের উঁচু মগডালে হঠাৎই দেখা মেলেছে দলছুট মুখপোড়া হনুমানের। দু দিন ধরে হনুমানটি গাছের মগডালে অবস্থান নিয়েছে। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতা হনুমানটি দেখতে ভিড় করছে গাছটির নিচে সড়কে। অনেকেই আবার ঢিল ছুড়লে হনুমানটি এক ডাল থেকে আর এক ডালে লাফালাফি করছে। উৎসুক জনতার ভিড়রে কারণে রংপুর-নীলফামারী রোডের কিশোরগঞ্জ উপজেলার দুরাকুটি মোড় রাস্তার দু ধারে যানযটের সৃষ্টি হচ্ছে। উঁচু গাছের মগডালে হনুমান দেখা যাচ্ছে শুনে দূর দূরান্ত থেকে শিশু কিশোররা ছুটছে হনুমানটি দেখতে। আজ সকাল সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখা গেছে গাছটির নিচে কয়েক শতাধিক জনতা হনুমানটি দেখতে উপচে পড়ছে। এদের মধ্যে শিশু, কিশোর, মহিলার সংখ্যাই বেশি। সাধারণত চিড়িয়াখানায় খাঁচা বন্দি হনুমান দেখতে পায় জনতা। আর লোকালয়ে গাছে দেখতে পাওয়ায় জনতার দল ছুটছেই হনুমানটি দেখার জন্য। উৎসুক জনতা সুজন জানান- চিড়িয়খানার হনুমান আমাদের এলাকার গাছে দেখলাম। এর অনুভূতিটিই আলাদা। উৎসুক জনতা শাপলা জানান- আমি হনুমানের কথা শুনে বিশ্বাস করিনি। সবার মুখে শুনে দূর থেকে এসেছি দেখার জন্য। দেখেছি মন জুড়ে গেছে। সাথে ছেলে মেয়েকেও নিয়ে এসেছি। তারাও হনুমান দেখলো। অন্যদিকে উৎসুক জনতা হনুমানটি দেখতে এসে অনেকে ঢিল ছুড়ছে। আবার অনেকেই বাস দিয়ে ঘুতা মারছে। ফলে হনুমানটি আহত হওয়াার আশংকা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে উপচেপড়া জনতার ভিড়ে রংপুর-নীলফামারী রোডের কিশোরগঞ্জ হাসপাতাল সংলগ্ন দুরাকুটি মোড়ে রাস্তার দু ধারে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।খবর পেয়ে হনুমানটিকে উৎসুক জনতা যাতে বিরক্ত করতে না পারে সে জন্য ওই স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে কিশোরগঞ্জ থানার ওসি রাজিব কুমার রায় জানান। সূত্রে জানা যায়- হনুমান- (খধহমঁৎ) প্রাইমেটস (চৎরসধঃবং) বর্গের অন্তর্গত লম্বা লেজযুক্ত বানর। বাংলাদেশে হনুমানের তিনটি প্রজাতি পাওয়া যায়। এটি হচ্ছে মুখপোড়া হনুমান। বৈজ্ঞানিক নাম ঞৎধপযুঢ়রঃযবপঁং ঢ়রষবধঃঁং (পূর্বে নাম ছিল চৎবংনুঃরং ঢ়রষবধঃধ)। অন্যদিকে এটি লালচে হনুমান নামেও পরিচিত। সাধারণত খধহমঁৎ নামে পরিচিত, যার শাব্দিক অর্থ ‘লম্বা লেজওয়ালা’। মূলত গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে বলে ‘পাতা বানর’ও বলা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে এরা বিপন্ন বলে বিবেচিত। মুখপোড়া হনুমান টাঙ্গাইলের পাতাঝরা বন এবং সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। এরা বৃক্ষচারী। চলাফেরা, খাবার সংগ্রহ, ঘুম, খেলাধুলা, বিশ্রাম, প্রজনন সবকিছু গাছেই সম্পন্ন করে। শক্তপোক্ত একটি পুরুষের নেতৃত্বে দলের সব স্ত্রী, যুবক ও বাচ্চারা থাকে। এরা শান্তিপ্রিয়। এরা মূলত পাতাভোজী। গাছের কচি পাতা, বোঁটা, কুঁড়ি ও ফুল খায়। তবে বট, চালতা, আমড়া, আমলকী, হরীতকী, বহেড়া ইত্যাদি ফলও বেশ পছন্দ। বিভিন্ন উদ্ভিদের পরাগায়ন ও বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গাছের গর্ত ও পাতায় জমে থাকা পানি দিয়ে জলপান ও গোসল করে সকাল-বিকেল-সন্ধ্যায় বেশি সক্রিয়। দুপুরে বিশ্রাম নেয়। খেলাধুলা ও লাফালাফিতে ওস্তাদ। বাচ্চা বুকে নিয়ে মা সহজেই এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে পড়ে। এরা অনেকটা কুকুরের ঘেউ ঘেউয়ের মতো করে ভুক ভুক শব্দ করে। অন্য কাউকে ভয় দেখাতে মুখে ভেংচি কাটে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অঃ দাঃ) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা রহমান জানান-আমি রংপুর চিড়িখানায় জানিয়েছি। তারা দ্রুত মানটিকে সুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা করছি। সেখানে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। রংপুর বন বিভাগের রেঞ্জার মোশারফ হোসেন জানান- হনুমান দলবদ্ধভাবে থাকে। দলছুট হয়ে বন থেকে লোকালয়ে এসেছে। এটি সাধারণ টাংগাইল অঞ্চলের বন থেকে দলছুট হয়ে কোন যানবানে করে এ এলাকায় আসতে পারে। আবার এটি ভারতে বডার অতিক্রম করেও আসতে পারে। এ হনুমান ক দিন ধরে নীলফামারীসহ বিভিন্ন এলাকায় লোকজন দেখেছে। এটি আমাদের সম্পদ। আমাদের প্রাণি। এটিকে বিরক্ত না করার আহবান জানান তিনি। তিনি আর জানান-এ হনুমখনটিকে চেতনানাশক ইনজেকশন দূর থেকে পুশ করে উদ্ধার করতে হবে। যা ঢাকা ও রংপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। আমরা দু জায়গায় যোগাযোগ করেছি। হনুমানটিকে সুস্থ্য রাখতে উৎসুক জনগণের প্রতি আহবানোও জানান।