গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী মানিক্য মাধবের রথাযাত্রা ও ২০ দিন ব্যাপী রথ মেলা মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। এদিন সকালে রথযাত্রা ও রথ মেলার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি। এতে সভাপতিত্ব করবেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আবু তোরাব মো. সামশুর রহমান, গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নন্দিতা মালাকার, রথযাত্রা ও রথ মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক, গাজীপুর পুজা উদযাপন কমিটির সদস্য মনিন্দ্র চন্দ্র মালাকার প্রমূখ। প্রধান অতিথি বলেন, ১৯৭১ সালে পাবিস্থানী হানাদার বাহিনী গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী শতাব্দী প্রাচীন শ্রী শ্রী মানিক্য মাধবের মুর্তি ধংস করে দিয়ে ছিল। তখন আমি সাবেক জয়দেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। তখন এই শ্রী শ্রী মানিক্য মাধবের রথযাত্রা ও মেলা হিন্দু সম্প্রদারের লোকজন স্বাধীনভাবে উৎযাপন করতে পারতেন না, তখনকার পরিবেশ এত খারাপ ছিল এসব অনুষ্ঠান করা সম্ভব ছিলনা। এখন দিন পাল্টে গেছে। এখন আর সেই পরিবেশ নেই। স্বাধীনমতো তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করতে পারছেন। রথযাত্রা ও রথ মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক জানান, গাজীপুরের ঐহ্যিবাহী মানিক্য মাধবের রথমেলাটি প্রায় দেড়’শ বছরের পুরনো। যাদের হাতে এ মেলাটির গোড়াপত্তন হয়েছিল সেই ইতিহাসখ্যাত ভাওয়াল রাজবংশের বিলুপ্তি ঘটলেও মেলাটি আজো তার অতীত ঐতিহ্য ধারণ করে টিকে আছে। ভাওয়াল পরগণার রায় চৌধুরী বংশের অষ্টম উত্তর-পুরুষ রাজা কালি নারায়ণ রায় চৌধুরীর আমলে এ রথমেলার প্রচলন হয়। রথমেলার প্রধান উৎসব হয় দুইদিন। প্রথম দিন রথযাত্রা এবং পরবর্তীতে উল্টো রথাযাত্রা বা পুণ:যাত্রা। রথযাত্রা ও পুণ:যাত্রার দিন হাজার হাজার সনাতন ধর্মপ্রাণ মানুষ রথ টানায় অংশ নেন। আগামী ২৮ জুলাই উল্টো রথযাত্রার মাধ্যমে ধর্মীয় এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এ উপলক্ষ্যে শহরের রথখোলায় ইতোমধ্যে রকমারি পণ্যের স্টল বসেছে। মেলায় সার্কাস, রাধাচক্কর ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের কাঠের আসবাবপত্র, মাটির তৈরি জিনিস, তৈজসপত্র, বাঁশ- বেতের জিনিস, চুড়ি, খেলনা ইত্যাদি নানা রকমের পসরা বসেছে। মেলায় তিন শতাধিক বিভিন্ন প্রকার দোকান বসেছে। মেলায় এলাকার হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার লোকের সমাবেশ ঘটে। রথযাত্রা ও রথ মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক আরো জানান, বলেন, ১২৭৮ বঙ্গাব্দ থেকে এ মেলা শুরু হয়েছিল। জনশ্রুতি আছে, রাজা কালি নারায়ণ রায় চৌধুরীর শ্রী সত্যভামা দেবী দেববাণী শুনতে পান। শুধু দৈববাণীই নয়, তিনি স্বপ্নে মাধব বিগ্রহ মূর্তি লাভ ও মূর্তি দিয়ে রথযাত্রা প্রচলনের নির্দেশ পান। রানীর বর্ণনা মতে, শ্রী শ্রী মাণিক্য মাধব, শ্রী শ্রী ঠাকুর মাধব, নীলম্বর মাধব, চক্রপানি মাধব, যশোমাধব ও বসুদের মাধব মূর্তিগুলো তার স্বপ্নে অদিষ্ট স্থান থেকে লাভ করেন। প্রথম থেকেই শ্রী শ্রী মাণিক্য মাধবকে রথের ওপর অধিষ্ঠান করে এই রথযাত্রার প্রচলন করা হয় এবং তা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চলে আসছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় মূল্যবান কষ্টি পাথরের সব বিগ্রহের ক্ষতি সাধন করা হয় এবং পাকিস্তানী হানাদারেরা এসব মূর্তি রাজবাড়ী সংলগ্ন রাজদীঘিতে ফেলে দেয়। স্বাধীনতার পর রাজদীঘি থেকে ২টি মাধব বিগ্রহ মূর্তি উদ্ধার করে পুনরায় রথযাত্রা ও রথ উৎসব শুরু হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে মেলা পরচালিত হয়ে আসছে। ১৯৯২ সালে গাজীপুর পৌরসভার আর্থিক সহায়তায় নতুন একটি রথ নির্মিত হয়েছে।