নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের “মহাদেবপুর হাট”। উপজেলার অন্যতম এই হাট-বাজারের অধিকাংশ জমি দখলে রেখেছে প্রভাবশালীরা। জায়গা না পেয়ে বছরের পর কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বসছে শহরের প্রধান পাকা সড়কের উপর। শুধু দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি প্রভাবশালীরা, সরকারি জায়গা লাখ লাখ টাকায় বেচাকেনাও করছে তারা। দখলদারদের কবল থেকে হাটের জমি উদ্ধার করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। এনিয়ে উপজেলা হাট-বাজার কমিটির সভাপতি ও নওগাঁ জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ হাটের জায়গার সসম্যা দীর্ঘদিনের। হাটের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের। গরুর হাট লাগানো হয় ভাড়া করা ব্যক্তি মালিকানা জায়গায়। ছাগল হাট লাগানো হয় এসিল্যান্ড অফিস চত্ত্বরে। আর ধানের হাট লাগানো হয় মেইন রোডে। এছাড়া ফলের দোকান আর হাটবারে কাঁচা বাজারও লাগানো হয় রাস্তার উপর। ফলে শনিবার ও বুধবার হাটবারে পুরো উপজেলাজুড়ে লেগেই থাকে যানজট। সাধারণ মানুষের চলাচল বিঘিœত হয়। সম্প্রতি বকের মোড় থেকে উপজেলার পশ্চিম গেট পর্যন্ত পাকা সড়কের উপর অবৈধ ধানের হাট লাগানোয় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। খাদ্যমন্ত্রীর গাড়িবহর যানজটে পড়ে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের গাড়িও জটে পড়ে। এরপর সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে সড়কে অবৈধ হাট বসানোর দায়ে হাট ইজাদারের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু পরের হাট থেকেই যথারীতি চলছে সড়কের উপর হাট। হাটে জায়গা না হওয়ায় এ হাটটি স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয় আশির দশকে। এনিয়ে উপজেলা সদরের মানুষ দুপক্ষে বিভক্ত হয়। একপক্ষ হাট স্থানান্তরের পক্ষে আর অপর পক্ষ বিপক্ষে। এনিয়ে তদানিন্তন উপজেলা চেয়ারম্যান শ্রী বিশে^শ^র দাস দাগু নিহত হন। মহাদেবপুর হাটের নামে রয়েছে প্রচুর জমি। এর বেশিরভাগই হয়েছে হরিলুট। প্রভাবশালিরাই দখল করছে এসব। এসব জমি উদ্ধারের কার্যকর উদ্যোগ নেই। মহাদেবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, হাটের নামে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে মোট দুই একর ৩৫ শতক জায়গা। এর বেশিরভাগই বেদখল। সারপট্টিতে ৪৭৭ দাগে রয়েছে ৪০ শতক। এটার উপর হাটের পাঁচটি শেড ছিল। শেড ভেঙ্গে টিন দিয়ে ঘিরে নতুন বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। মধ্যবাজার কালিমন্দির এলাকায় ৬০১ দাগে রয়েছে ৩০ শতক। এর বেশিরভাগ অংশে পাকা দোকান নির্মাণ করে দখল করা হয়েছে। কেউ সরকারকে ভাড়া দেন। আবার কেউ কেউ অবৈধভাবে দখল করে আছেন। তরকারি বাজারে ৬০৭ দাগে রয়েছে ৪০ শতক। এর উপর সরকারি শেড নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ শেড কেউ ব্যবহার করেন না। মুড়ি হাটিতে ৬১৯ দাগে রয়েছে ৬ শতক। এটিরও বেশিরভাগ বেদখল। পুরাতন গরুহাটিতে ৬৩৩ দাগে রয়েছে ৫৩ শতক। এখানে গোস্তহাটির সরকারি শেড রয়েছে। এ শেড পরিত্যক্ত। রয়েছে খাজনা আদায়ের ঘর। এ ঘরও প্রভাবশালিদের দখলে। বসানো হয়েছে হোটেল। এখানে উত্তরে হাটের জায়গা দখল করে বসতবাড়িও নির্মাণ করা হয়েছে। গোস্তহাটির পূর্বে বসতবাড়ির এরিয়া বাড়িয়ে দখল করা হয়েছে হাটের জায়গা। ১৯৮৪ সালে হাট স্থানান্তরের জন্য থানা নির্বাহী অফিসারের নামে বরেন্দ্র অফিস এলাকায় কেনা হয় এক একর ৯৫ শতক জমি। এর ৬৬ শতকের উপর নির্মাণ করা হয় বরেন্দ্র অফিস। বাকিটা বেদখলে। হাটের জায়গা উন্মুক্ত থাকবে হাটবারে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আর গৃহস্থদের জন্য। কিন্তু তাদের বসার কোন জায়গা ফাঁকা নেই। হাটের বিশাল জায়গা প্রভাবশালীরা দখল করে স্থায়ী দোকান ঘর নির্মাণ করেছে। অবৈধভাবে এসব ঘরের পজিশন বিক্রি হয় মোটা টাকায়। জানতে চাইলে সহকারি কমিশনার (ভূমি) নুসরাত জাহান জানান, সরকারি নির্দেশনা পেলে হাটের জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়া হবে। উপজেলা হাট-বাজার কমিটির সভাপতি ইউএনও আবু হাসান জানান, ধানহাটি বরেন্দ্র অফিস এলাকায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।