শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

মাহে রবিউল আউয়ালের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

হিজরি সনের তৃতীয় মাস হলো রবিউল আউয়াল। ‘রবি’ অর্থ বসন্তকাল, ‘আউয়াল’ মানে প্রথম; ‘রবিউল আউয়াল’ মানে হলো প্রথম বসন্ত বা বসন্তকালের প্রথম মাস। প্রিয় নবীজি (সা.)-এর বহুমাত্রিক স্মৃতিধন্য এই মাস মানবসভ্যতার ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। মুসলিম মানসে এই মাস শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মহিমায় পরিপূর্ণ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ রবিউল আউয়াল দুনিয়াতে শুভাগমন করেন। রিসালাতের মহামিশনের সফলতা ও পরিপূর্ণতার অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, ইসলামি ধর্মরাষ্ট্র তথা সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার সূচনা যে হিজরত, তা-ও সংঘটিত হয়েছিল এ মাসেই। এই মাসের ১২ তারিখেই আখেরি নবীর তিরোধান বা ওফাত হয়েছিল।
রবিউল আউয়াল মাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরূপে সর্বস্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে নাস্তানাবুদ করে দিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামের সাম্য ও ন্যায় সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করা রবিউল আউয়াল মাসটি মুসলিম সমাজে নবী করিম (সা.)–এর জন্মেরও স্মারক হিসেবে পালিত হয়, যা ‘ফাতিহায়ে দোয়াজ–দাহম’ নামে পরিচিত। ‘ফাতিহায়ে দোয়াজ–দাহম’ কথাটি ফারসি ভাষা থেকে আগত। দোয়াজ–দাহম মানে ১২, ফাতিহায়ে দোয়াজ-দাহম অর্থ হলো ১২ তারিখের ফাতিহা অনুষ্ঠান।
কালক্রমে দিনটি ‘মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এর অর্থ হলো প্রিয় নবী (সা.)–এর জন্মানুষ্ঠান। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে ‘ঈদ’ শব্দ যোগ হয়ে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ রূপ লাভ করে। যার অর্থ হলো মহানবী (সা.)–এর জন্মোৎসব। এ পর্যায়ে আরেকটি পরিভাষাও প্রচলিত হতে থাকে ‘সিরাতুন নবী (সা.) অর্থাৎ নবী (সা.)–এর জীবন চরিত বা জীবনী আলোচনা অনুষ্ঠান।
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ নিয়ে সিরাত গ্রন্থ, জীবনীকার, ইতিহাসবেত্তা ও জ্যোতির্বিদদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে প্রায় সবাই এ বিষয়ে একমত যে তাঁর জন্ম হয়েছিল রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার প্রত্যুষে বা ভোরবেলায় তথা উষালগ্নে। প্রসিদ্ধমতে, সেদিন ছিল ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল (১২ রবিউল আউয়াল)। আর তিনি ইহলোক থেকে চিরবিদায় নেন রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ দ্বিতীয় সোমবার অপরাহ্ণে বা গোধূলিলগ্নে।
তাঁর বেলাদাত ও ওফাত ১২ রবিউল আউয়াল হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন ও প্রস্থান একই দিনে, একই সময়ে এ কথাই সর্বজনবিদিত।
মনুষ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর পরিচয় প্রকাশ করা। নবী-রাসুল প্রেরণের লক্ষ্য হলো মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। তাই আল্লাহকে পেতে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ রাসুলে আকরাম (সা.) যা যা করেছেন বা করতে বলেছেন, তা করতে হবে। আর যা করেননি বা করতে বারণ করেছেন, তা বর্জন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের ঘোষণা, ‘যা দিয়েছেন তোমাদের রাসুল (সা.), তা তোমরা ধারণ করো; আর যা থেকে তিনি বারণ করেছেন, তা হতে বিরত থাকো।’ (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত: ৭)
আরও বলা হয়েছে, ‘বলুন (হে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসবে, তবে আমার অনুকরণ করো; আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৩১) হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি হব তার নিকট তার পিতা-পুত্র ও যাবতীয় সবকিছু হতে প্রিয়।’ (বুখারি, প্রথম খ-: হাদিস: ১৩ ও ১৪)
রবিউল আউয়াল মাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরূপে সর্বস্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে নাস্তানাবুদ করে দিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামের সাম্য ও ন্যায় সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করা।
আর এটাই নবী বা রাসুল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য; যা পবিত্র কোরআনে বারবার বিবৃত হয়েছে, ‘তিনি সে মহান প্রভু যিনি রাসুল প্রেরণ করেছেন, সঠিক পন্থা ও সত্য ধর্মসহযোগে, যাতে সে ধর্মকে প্রকাশ করতে পারেন সর্ব ধর্মের শিখরে।’ (সুরা-৪৮ ফাৎহ, আয়াত: ২৮) লেখক: মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী,যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম, ইমইেল:smusmangonee@gmail.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com