সুলতানা কামালের অভিযোগ
বৈষম্য কমাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা বলা হলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের কোনো সংযোগ নেই বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। এমনকি পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছ থেকে ধোলাইখালে চোবানোর হুমকি পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমারই এলাকার মানুষ। আমরা যখন পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গেলাম, অত্যন্ত স্নেহের পাত্র আমার। আমি নামও বলে দেই, আমাদের মেয়র তাপস। ছোটবেলা থেকে দেখছি, কারণ আমাদের একই পাড়ায় তারা থেকেছেন। আমরা যখন পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গেলাম তিনি বললেন যে, যদি বেশি কথা বলেন ধোলাইখালে নিয়ে চুবাবো।’
গত সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন আখ্যান ও সমান্তরাল বাস্তবতা: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাবনা’ শিরোনামের প্রকাশনা উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘এই চুবানোর সংস্কৃতি আবার একার মধ্যে নেই, আরও অনেক জায়গায় শুনেছি। কথা বলতে গেলে যদি চুবানোর ধমক খেতে হয়, আসলে কোন রাজনীতিবিদের কাছে যাবো?’
তিনি বলেন, ‘বৈষম্য কমাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা বলা হচ্ছে। সেটা আসবে কোথা থেকে? আসবে তো রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে। রাজনীতিবিদরা কোথায়, আমি কিন্তু তাদে খুঁজে পাই না। আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করি। ৃ. আমি জায়গার নাম উল্লেখ করছি না। কারণ ডিএসএ আছে। আমার ওপর না হতে পারে অন্য মানুষের ওপর হতে পারে। জায়গার নাম বলছি না।’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমি অত্যন্ত প্রত্যন্ত অ লে গেলাম, সেখানে আমার সঙ্গে বসেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ ব্যক্তিরা। কেউ সভাপতি ছিলেন, কেউ বর্তমান সভাপতি, কেউ মেয়র হয়েছেন, কেউ আগে মেয়র ছিলেন। তারা আসায় আমি ধন্যবাদ জানালাম। তাদের বিনয়ের সঙ্গে বললাম, আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আপনারা এখন এসেছেন। আপনাদের তো খুবই ব্যস্ত সময়। তারা নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন, বললেন আমাদের তো বেশি কিছু করার নেই।’
তিনি বলেন, ‘উনাদের যদি বেশি কিছু করার না থাকে নির্বাচনে- তো কাদের করার আছে? রাজনৈতিকভাবে প্রতিনিধিদের সঙ্গে যদি কোনো সংযোগ না থাকে। তারা যদি না বুঝতে চান আমরা কী চাই। তাহলে কীভাবে রাজনৈতিকভাবে এসব সমস্যার সমাধান হবে?’ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, ‘তিনি কী করে তালেবানি সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করেন?’
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের মানুষেরা কোথায়?- এ প্রশ্ন তুলে সুলতানা কামাল বলেন, ‘যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের দাবি করছেন, তাদের নাগরিক হিসেবে চ্যালেঞ্জ করতে হবে নিজেদের তা প্রমাণ করতে। যেগুলো বলে, সেগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’ ভালো মানুষ যদি চুপ করে থাকেন, তাহলে দুর্বৃত্ত অনেক বেশি শক্তিশালী হয় বলে মনে করিয়ে দেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রমুখ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, একটি রাষ্ট্রের ব্যর্থতার দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যর্থতা, যেখানে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার থাকে না। আরেকটি হচ্ছে ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থার অভাব।