রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২১ পূর্বাহ্ন

সায়ীদ আবুবকরের কবিতা

জাকির আবু জাফর
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩

সায়ীদ আবুবকরের (জন্ম : ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭২) কবিতার আমি একজন মুগ্ধ পাঠক। তার কবিতার গাম্ভীর্য আমাকে ভাবায়। প্রবাহমানতা চঞ্চল করে। স্বতঃস্ফূর্ততা আনন্দ দেয়। উপমার বিশ্বস্ততা প্রাণিত করে। এবং বাণীর দৃঢ়তা প্রেরণা জোগায়। তার কবিতায় পরিশ্রমের দাগ দেখি। মগ্নতার চিহ্ন পাই। আগাগোড়া মজে থাকার গন্ধ অনুভব করি। সাধনার অবিশ্রান্ত ধারা উপভোগ করি। তিনি কবিতায় আকণ্ঠ, একথা বলা যায় দ্বিধাহীন। কবিতার জন্য পথ চলেন। কবিতার কথা-ই বলেন। কবিতাকেই করেন সঙ্গী।
সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গে আছে তার বিচরণ। এ বিচরণ আরোপিত নয়। জোরাজুরিরও নয়। স্বতঃস্ফূর্ত। হোক গদ্য, কবিতা কিংবা অনুবাদ, প্রবন্ধ কিংবা নিবন্ধ। সায়ীদ আবুবকরের আত্মবিশ্বাস দৃঢ়। এ বিশ্বাস কবিতার প্রতি যেমন, তেমনই গদ্যের দিকেও। কবিতা এবং গদ্য মিলেই তার লেখার পৃথিবী। এখানে তিনি বিশ্বস্ত। না, অকারণ অহংকার তাকে পেয়ে বসেনি। অযাচিত উপদেশও দান করেন না। তবে কবির অহংকার তো থাকেই। থাকবেও। কবির অহংকার মর্যাদার বিষয়। সম্মানের এবং গৌরবেরও। এই কবির অহংকার আর অকারণ অহংকার গুলিয়ে ফেলেন কেউ কেউ। মনে রাখতে হবে – কবির অহংকার উপভোগ্য। কিন্তু অকারণ অহংকার বড়ই অসুন্দর। কবির অহংকার কবিকে অলংকার দান করে। দামী করে তোলে কবির মর্যাদা। আর গুণহীন অহংকার খাটো করে কবিকেই। একজন কবির কাব্যিক সৌন্দর্যের প্রশংসা না করে উপায় থাকে না। অঙ্গে এবং অন্তরে কবিকে সুষমা ধারণ করতে হয়। একজন কবি তার কবিতার মতো সৌন্দর্যের অলংকারে সজ্জিত হবেন। কবির ভেতর বাহির হবে আনন্দলোকের অঙ্গ। পরিশীলিত সংযমী এবং উত্তম ব্যবহারের উপমা হবেন কবি। তিনি হবেনÑ সরবতায় উজ্জ্বল! নিভুতিতে প্রাণবন্ত! নির্জনতায় বিশ্ব প্রকৃতির একজন। এই তো কবির অহংকার। এ হলো কবির নিজস্ব পৃথিবী।
এখানে সায়ীদ আবুবকরকে উজ্জ্বল পাই। তার কবিতায় সরবতার কলগুঞ্জন যেমন আছে, তেমনই আছে নির্জনতার বিশালত্ব। যেমন মানুষের জীবন আঁকেন, তেমনই আঁকেন স্বপ্নের সৌন্দর্য! বাস্তব পৃথিবী যেমন আছে, তেমনই আছে প্রকৃতির অবারিত সান্নিধ্য।
সায়ীদ আবুবকরের কবিতা বিশ্বাসে পরিপুষ্ট। এ বিশ্বাস ঠুনকো নয়। আরোপিতও নয়। নয় ধার করা কোনো সাময়িক। তার বিশ্বাস হৃদয়-উৎসারিত। হৃদয়ের গভীর থেকে বেড়ে ওঠা। জীবনের সাথে জড়ানো। এখানে ফাঁক নেই। ফাঁকিও নেই। আছে ক্রমাগত সান্নিধ্যের উৎসব।
একটি আধুনিক সময়ে আমাদের বসবাস। পৃথিবী আমাদের হাতের মুঠোয়। হাত খুললেই যেমন উন্মুক্ত হয় হত্যার অভিধান, তেমনই মুক্ত হয় জীবনের কলস্বর। সামাজিক যোগাযোগ আমাদের বিশ্বকে পরিণত করেছে একটি গ্রামে। বিশ্ব নামের একটি মাত্র গ্রামের নাগরিক আমরা। এই গ্রামের নাগরিকদের মন ও মত প্রকাশের রয়েছে প্রবল স্রোত। যোগাযোগের এ প্রবল স্রোতে গা ভাসানোর খেলায় সকলেই খেলোয়াড়। এখানে তারাই কেবল দর্শক যারা এ স্রোতের ভেতর থেকেও নিজেদের ভাসিয়ে দেন না।
ভাসিয়ে না দেয়াদের একজন সায়ীদ আবুবকর। এটি যতটা সহজে বলা যায় কাজটি ততো সহজ কি! না সহজ নয়। নয় বলেই গা ভাসিয়ে না দেয়ার দলের সদস্য আক্ষরিক অর্থেই কম। কারণে তো বটেই অকারণেও যেখানে সবাই আলোচনার কেন্দ্রে থাকার চেষ্টায় প্রাণপণ। সেখানে শুধুমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে জেগে থাকা সত্যিই কঠিন। এ কঠিন কাজটিই করে যাচ্ছেন সায়ীদ আবুবকর। সামাজিক যোগাযোগের জোয়ারে ভেসে না যাওয়ার এ দৃঢ়তা একজন কবিকে ব্যক্তিত্ববান করে।
কবিকে চিৎকার থেকে বিরত থাকতে হয়। কবির গলার স্বর উঁচু করে লাভ নেই যদি না কবিতার স্বর উঁচু হয়। কবিতা কথা বললে কবিকে কথা বলতে হয় না। কবিতা কথা না বললে কবিকে কথা বলতে হয়। যার কবিতা কথা বলে না, সে-কবির কথায় কবিতার চিঁড়া ভিজে না। ভিজেনি কোনো কালে। এবং ভিজবেও না কখনও। কবির চিৎকার যত উঁচুই হোক তাতে কবিতার কিছু যায় আসে না। সায়ীদ আবুবকরের কবিতা কথা বলে। বলছে খুব। তার কবিতা জায়গা করছে অনবরত। একজন কবির পাঠক বড় সম্পদ। কবিতা যদি পাঠযোগ্য না হয়, সে কবিতা গ্রহণ করেন না পাঠক। পাঠক গ্রহণ না করলে কবি বেঁচে থাকবেন কী করে! তাই পাঠক কবির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সায়ীদ আবুবকরের কবিতার পাঠক জমে উঠেছে। বৃদ্ধিও পাচ্ছে ক্রমাগত। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে হয়তো। থাকাটা খুব জরুরি। যার থাকে না তাকে দুর্ভাগার কাতারেও ফেলা যায়!
প্রশ্ন হতে পারে – কেমন কবিতা গ্রহণ করেন পাঠক? কবিতাকে কবিতা হতেই হবে- এখানে কবিতা আপোষহীন। যে-কবিতায় পাঠক যখন তার জীবনকে, জীবনের স্বপ্নকে এবং বিশ্বাসকে খুঁজে পান, সে-কবিতা পাঠক গ্রহণ করতে দ্বিধা করে না। কবিতায় যদি দেশ থাকে, যদি দেশপ্রেম থাকে, যদি জাতি থাকে এবং জাতির আকাক্সক্ষা থাকে সে-কবিতা গ্রহণ করেন পাঠক। তেমন কবিতাই মুখস্থের মাধ্যমে স্মৃতি করে রাখেন অনেকেই। ঠোঁটে প্রকাশ করেন। কণ্ঠে তুলে নেন। আলাপ আলোচনায় বিশদ করেন। আড্ডায় আসরে উল্লেখ করেন। জাতীয় নেতৃবৃন্দ জাতিকে দিক নির্দেশনায় সে-কবিতার উচ্চারণ করেন।
কবিকে সময়ের প্রয়োজনে এবং প্রয়োজনের সময়ে কাজে লাগতে হয়। যে-কবির কবিতা প্রয়োজনে ব্যবহারযোগ্য হয় সে-কবির কবিতা জীবন্ত থেকে যায়। সে-কবির কবিতা মরে না। হারায় না। হারিয়ে যেতে দেয় না তার পাঠক। তার জাতি। কবিতার সাথে ঔদ্ধত্য খাটে না। একদম না। কবিতা পরিশীলিত মানুষের অলংকার। বিনয়ীদের অহংকার!
ধীরে চলা নদীর মতো কবিতার স্রোত। গলাবাজি আর গোষ্ঠী প্রীতির তামাশায় কবিতা থাকে না। কবিতার বসতি বড় নিভৃতির! কবিতা বড় একাকী পথের যাত্রী। নিঃসঙ্গতার উর্ধ্বে নির্জনতায় বসত করে কবিতা। একজন কবিকে এর রহস্য অনুভব করতে হয়। অনুধাবন করতে হয় এর নিগূঢ় নির্যাস। আমার মনে হয়েছে – এসব উপলব্ধির পথিক সায়ীদ আবুবকর। সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কবিতামুখী হওয়ার দৃঢ়তা আছে তার। আছে সবকিছুর ওপর কবিতার ছাতা খুলে দেবার সাহস। কবিতা-প্রেমে কবি হবেন অকপট। না হলে কপটতার মুখোশে কবিতার পোষায় না। সায়ীদ আবুবকর তার কবিতা-প্রেমে ভীষণভাবে অকপট।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com