মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

ইহুদিরা মুসলমানদের ভূমি দখলকারী

ড. সাউদ বিন আবদুল আজিজ আল খালাফ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩

ফিলিস্তিন ভূমির ওপর ইহুদিদের দখলদারির মূলে আছে একটি প্রাচীন মিথ। তা হলো আল্লাহ বনি ইসরাইলকে পবিত্র এই ভূমি দান করার অঙ্গীকার করেছিলেন এবং বর্তমান ইহুদিরাই তাদের উত্তরসূরি। এ ছাড়া ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত দাউদ (আ.)-এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনে বনি ইসরাইলের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং সুলাইমান (আ.) সে রাষ্ট্রের পরিধি আরো বিস্তৃত করেন। প্রশ্ন হলো ইহুদিরাই কি কোরআনে বর্ণিত বনি ইসরাইলের উত্তরসূরি? নাকি তাদের এ দাবি দুরভিসন্ধিমূলক? সৌদি আরবের মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বরেণ্য চিন্তাবিদ ড. সাউদ বিন আবদুল আজিজ আল খালাফ উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তর এভাবে দিয়েছেন: বর্তমান যুগের ইহুদিরা প্রচার করে তারা বনি ইসরাইলের উত্তরসূরি। যারা ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাদের ধারণা, তারা একসময় ফিলিস্তিনে বসবাসকারী বনি ইসরাইলের উত্তরাধিকারী। ইহুদিরা তাদের দাবির স্বপক্ষে এ কথাকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরে যে, ইহুদিরা অন্য জাতিগোষ্ঠী থেকে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে। তাদের ধারণা অনুসারে তাদের রক্তের ধারা সংরক্ষিত।
তাদের এই দাবির পেছনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও বিপজ্জনক উদ্দেশ্য আছে। তা হলো খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সহানুভূতি লাভ করা। কেননা খ্রিস্টানরা তাওরাতকে সম্মানের চোখে দেখে। তারা বিশ্বাস করে, তাওরাতের সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর তাওরাত বা ‘ওল্ড টেস্টামেন্টে বনি ইসরাইলের প্রতি বিশেষ কিছু অঙ্গীকার করা হয়েছিল। যেমন ফিলিস্তিন ভূমি দান করা।
প্রকৃত সত্য হলো, রক্তের ধারা সংরক্ষণের ব্যাপারে ইহুদিদের দাবি মিথ্যা। তাদের শারীরিক অবকাঠামো ও অবয়বই প্রমাণ করে তাদের রক্তের ধারা এক নয়। কারণ ইসরাইলে বসবাসকারী ইহুদিরা মূলত তিনটি ধারায় বিভক্ত : ক. ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত, খ. আরব বংশোদ্ভূত, গ. আফ্রিকান বংশোদ্ভূত।
সুস্পষ্ট এই বিভক্তির পর ‘রক্তের ধারা সংরক্ষিত’ দাবির কোনো যৌক্তিকতা থাকে না। কেননা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সংমিশ্রণের ফলেই তাদের ভেতর এই ধারাগুলো সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া ইহুদি রচনাবলি ও সাহিত্য থেকেও প্রমাণিত প্রত্যেক যুগে অসংখ্য ইহুদি নারী ও পুরুষ অন্য সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। এমনকি ঐতিহাসিকরা বলেন, সুলাইমান (আ.) নিজে ভিন্ন সম্প্রদায়ের নারীকে বিয়ে করেছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত মধ্যএশিয়ার খাজার সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করে। তুর্কি বংশোদ্ভূত খাজাররা আগে পৌত্তলিক ছিল। কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের অধ্যবর্তী অ লে তাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রও ছিল, যা আজারবাইজান, আর্মেনিয়া ও ইউক্রেন থেকে শুরু করে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থে কাস্পিয়ান সাগরকে খাজার সাগর নামেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
ইহুদি বিশ্বকোষে খাজারদের সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ‘খাজাররা তুর্কি বংশোদ্ভূত। খাজারদের জীবন ও ইতিহাসের সঙ্গে রাশিয়ায় ইহুদিদের পদার্পণের সম্পর্ক রয়েছে। ফ্রাংকরা রাশিয়ায় রাজত্ব প্রতিষ্ঠার আগে দক্ষিণ রাশিয়ার বেশির ভাগ যাযাবর সম্প্রদায় খাজার রাষ্ট্রের অধীনে সুসংহত হয়েছিল। ৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রাংকরা অত্র অ লে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করলে খাজাররা তাদের সঙ্গে দীর্ঘ সংঘাতে জড়িয়ে যায়। অষ্টম শতাব্দীর শেষভাগে খাজার শাসক, অভিজাত পরিবার ও সাধারণ মানুষের বড় একটি অংশ পৌত্তলিক ধর্ম ত্যাগ করে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করে। খ্রিস্টীয় নবম শতকে প্রায় সব খাজার ইহুদি ধর্মে দীক্ষিত হয়।’
তবে পরবর্তী রুশদের হাতে এই রাজ্যের চূড়ান্ত পতন হয় এবং তারা পুরো খাজার অ ল দখল করে নেয়। খাজার রাষ্ট্রটি ক্রমেই ইউরোপের মানচিত্রে মিশে যায় এবং খাজার ইহুদিরা পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিল। পূর্ব ইউরোপে তাদের মূল কেন্দ্র ছিল হাঙ্গেরি, রাশিয়া, পোল্যান্ড ও রোমানিয়া। ইউরোপীয় এসব ইহুদিদের আশকেনাজিম বলা হয়। ইয়াকুব (আ.) ও তাঁর বংশধরদের সঙ্গে এদের দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই। যদিও মুসলমানদের দৃষ্টিতে তাদের ইয়াকুব (আ.)-এর বংশধর হওয়া ও না হওয়ার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। তারা মূলত মুসলমানদের ভূমি দখলকারী এবং তাদের রক্তপাতকারী। ‘দিরাসাতুন ফি আদয়ানিল ইহুদিয়্যা ওয়ান নাসরানিয়্যা’ থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com