নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে। আর উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঠিক করতে হবে, কী দিয়ে শুরু করবেন। এজন্য দরকার অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এমন ব্যবসা। মাশরুম একটি পুষ্টিকর সবজি। সবজির মতো এটি মাটিতে জন্মায় না। এটি নি¤œ শ্রেণির ছত্রাকজাতীয় পরজীবী উদ্ভিদ। দেখতে ব্যাঙের ছাতার মতো। জীবন ধারণের জন্য এরা জৈবিক বস্তু থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করে। মাশরুম ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে হলেও এদের মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্ম নেওয়া মাশরুম বিষাক্ত হয়। সেগুলো খাওয়া যায় না। মাশরুম এখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে। এ ধরনের মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর। অনেক দেশে সবজি হিসেবে এটি জনপ্রিয়। এখন আমাদের দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। কর্মসংস্থান হিসেবে এর চাষ যে কেউ শুরু করতে পারেন। সুবিধা তুলনামূলক কম পুঁজি লাগে মাশরুম খোলা জায়গায় চাষ করা যায় না। তাই আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না অল্প জায়গায় চাষ করা যায় লাভ বেশি, মাশরুম চাষের উপকরণ সহজেই পাওয়া যায় সাবধানতা বীজের পলিব্যাগে কোনোভাবেই সূর্যের আলো পড়তে দেওয়া যাবে না। সব সময় ঘরটি ঠা-া রাখতে হবে। খুব বেশি গরম পড়লে ঘরের চারদিকে বস্তা ঝুলিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে মাশরুম ঘর ও ঘরের বাইরের চারদিক সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অপরিচ্ছন্ন জায়গায় মাশরুম ফ্লাই নামের পোকা মাশরুমের ক্ষতি করে কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না বাজার সম্ভাবনা আমাদের দেশের বড় শহরগুলোর বিভিন্ন হোটেল ও চাইনিজ হোটেলে মাশরুমের চাহিদা অনেক। গ্রামের তুলনায় মাশরুমের বাজার মূলত শহরে গড়ে উঠেছে। এছাড়া বিদেশে এর চাহিদা রয়েছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে শুকিয়ে রফতানি করা সম্ভব। এজন্য যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিদেশে সবজি ও কাঁচামাল পাঠায়, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। উপকরণ গামলা, ছোট চা-চামচ, ব্লেড, ছুরি, পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগ প্রভৃতি পুঁজি ১০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন লাভ মাশরুমের পাপড়ি বেশি ছড়ানোর আগেই গোড়া থেকে সামান্য কেটে ফেলতে হবে। পলি প্যাকেটে কয়েকটি ছিদ্র করে এর মধ্যে মাশরুমগুলো মুখ বন্ধ করে এই প্যাকেট বাজারজাত করতে হবে। প্রতিটি বীজ পলিব্যাগ থেকে ২০০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়। সুতরাং ২০০টি বীজ পলিব্যাগ থেকে ৪০ কেজি মাশরুম পাওয়া সম্ভব। প্রশিক্ষণ ধনবাড়ী হটিকালচার সেন্টারেই পাবেন। আর এই হটি কালচার সেন্টারই হচ্ছে মাশরুম চাষের সাব সেন্টার। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে মাশরুম চাষ কেন্দ্রের ১৬টির মতো শাখা আছে। সবজিটি চাষ সম্পর্কে বাজারে অনেক বই পাওয়া যায়। সেসব বই পড়ার মাধ্যমেও মাশরুম চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। এছাড়া অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে মাশরুম চাষের বিস্তারিত জেনে নিলে চাষ করতে সুবিধা হবে এবং উন্নতমানের মাশরুম পাওয়া সম্ভব হবে। ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে জমির অপ্রতুলতা, বেকারত্ব, পুষ্টিহীনতা, মাথাপিছু আয়ের স্বল্পতা, মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান, সর্বোপরি দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় মাশরুম একটি সম্ভাবনাময় ফসল। যে কেউ মাশরুম চাষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে অল্প পুঁজিতে হতে পারবে উদ্যোক্তা। ধনবাড়ী হটিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ, মো: রাসেল পারভেজ তমাল বলেন, ধনবাড়ী উপজেলার আবহাওয়া মাশরুম চাষের জন্য অত্যান্ত উপযোগী। অমিত সম্ভাবনাময় ফসল মাশরুম চাষের জন্য কোনো উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না বিধায় দেশে মাশরুম উৎপাদন যতই বাড়ানো হোক না কেন তাতে কোনো ফসলেরই উৎপাদন কমার সম্ভাবনা নেই।