মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন

চিরবিদায় সাংবাদিক কলামিস্ট ও সাহিত্যিক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৪

দৈনিক দিনকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত মঙ্গলবার (১৬ই জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর শ্যামলীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। গত বুধবার বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে তাঁর জানাজার পর বাদ জোহর রায়ের বাজার কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বহু গ্রন্থ প্রণেতা ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী দৈনিক খবরপত্র, দৈনিক সংগ্রাম,দৈনিক নয়াদিগন্ত,আমার দেশ, মানবজমিন, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, ছাত্রসংবাদ, কিশোরকণ্ঠসহ বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও সাময়িকপত্রে কলাস, নিবন্ধ, গল্প লিখতেন। তার ইন্তেকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদক, বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। শোকবাণীতে তারা তার আত্মার মাগফিরাত ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রার্থনা করেছেন।
রুহুল কবির রিজভী শোক: সরকার কর্তৃক ডিক্লারেশন ও মুদ্রণের প্রকাশনা বাতিলে বন্ধ থাকা দৈনিক দিনকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে সর্বশেষ দায়িত্ব পালন করেন ড. রেজোয়ান হোসেন সিদ্দিকী। তার মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শোক প্রকাশ করেছেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: রেজোয়ান হোসেন সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৫৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাঈল জেলার এলাসিন গ্রামে। পিতা আতিকুল হোসেন সিদ্দিকী। মাতা হাওয়া সিদ্দিকী। দু’জনই বহু আগে জান্নাতবাসী হয়েছেন। এসএসসি পাস করেন ১৯৬৮ সালে। বলতে গেলে তার পর থেকেই জীবন সংগ্রাম শুরু। ১৯৬৯ সালে করটিয়ার সা’দত কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তার পড়াশোনার গতি রুদ্ধ হয়। হুলিয়া হওয়ার কারণে তিনি চলে যান চট্টগ্রামে। সেখানে ছিলেন বেশ কিছুদিন। তার চাচা মোফাখখর হোসেন সিদ্দিকীর আশ্রয়ে। এরপর রেজোয়ান সিদ্দিকী চলে আসেন ঢাকায়। জীবন সংগ্রামের এক ভিন্নমাত্রা শুরু হয় তখন থেকেই।
ঢাকায় এসে কী করবেন, কোথায় থাকবেন কোন নিশ্চয়তা ছিল না। প্রেসে কম্পোজিটরের কাজ নেন। প্রাইভেট টিউশনি করেছেন। বাংলাবাজারে গ্রুফ দেখেছেন। তারপর পড়েছেন জগন্নাথ কলেজে। সেখানে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন শওকত আলী, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, আহমদ কবীর, শহীদুর রহমান প্রমুখকে। তাঁরা রেজোয়ান সিদ্দিকীকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। আর তিনিও অবিরাম তাদের কাছ থেকে শিখে শিখে নিজেকে তৈরি করেছেন।
সাংবাদিকতা পেশায় ঢুকেছেন ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক বাংলায়। প্রুফ রিডার হিসেবে শুরু করেছিলেন। সেখানে শেষে ছিলেন সিনিয়র সহকারী সম্পাদক। একই সঙ্গে ছিলেন ফিচার এডিটর, সিনে সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক। খবরের কাগজে সাংবাদিকতার এমন কোন পদ নেই যে পদে কাজ করেননি তিনি। এখন দৈনিক দিনকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। মাঝখানে প্রেষণে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তৃতা লেখক। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন চার বছর। সফল হওয়াই তার জীবনের হবি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৭৩ সালে। ১৯৭২ সাল থেকেই ছোট গল্পকার ও কলাম লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন রেজোয়ান সিদ্দিকী। লেখাপড়া করেন সাহিত্যে। কিন্তু এইচএসসি পর্যন্ত তিনি ছিলেন বিজ্ঞানের ছাত্র। চেয়েছিলেন বড় লেখক হবেন। তাঁর গবেষণা, প্রবন্ধ, কলাম, উপন্যাস, নাটক, ফিকশন কোনটা যে টিকবে তিনি ধারণাও করেন না। তা সত্ত্বেও এই সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী কলম-সৈনিক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন ১৯৯৫ সালে। হল্যান্ডের আইএসএস (ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল স্টাডিজ) থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও উন্নয়ন বিষয়ে তিনি অর্জন করেছেন স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা।
উপন্যাস, গল্প, নাটক, বিজ্ঞান, প্রকৃতি-পরিবেশ, ফিকশন, অনুবাদ, সংকলন- সব কিছু মিলে বায়ান্নটির বেশি বই। ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত তিনি অবিরাম লিখেছেন । দৈনিক খবরপত্রের প্রধান সম্পাদক,সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক তার রূহের মাগফিরাত কামনা করেছেন।
ড. রেজওয়ান সিদ্দিকীর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন: দৈনিক দিনকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. রেজওয়ান হোসেন সিদ্দিকীর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় তার লেকসার্কাস বাসার নিচে প্রথম জানাজা, দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মরদেহ রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর। মৃত্যুকালে ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী তার সহধর্মিনীসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
দুপুর ১২টায় রেজওয়ান সিদ্দিকীর মরদেহ জাতীয় প্রেসক্লাবে নিয়ে আসা হলে সাংবাদিকরা তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মরহুমের জানাজায় নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বাসসের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবদুল কালাম আজাদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, শওকত মাহমুদ, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ওমর ফারুক, হাসান হাফিজ, এম আবদুল্লাহ, এমএ আজিজ, খায়রুল আনোয়ার মুকুল, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, মোস্তফা কামাল মজুমদার, মাহবুব হাসান, জাহাঙ্গীর ফিরোজ, কাদের গণি চৌধুরী, আমিরুল ইসলাম কাগজী, বখতিয়ার রানা, কাজিম রেজা, শাহেদ চৌধুরী, আইয়ুব ভুঁইয়া, আশরাফ আলী, খোরশেদ আলম, বাছির জামাল, ইলিয়াস হোসেন, রাশেদুল হক, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বাদশা, মোরসালিন নোমানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিআর আবরার, বিএনপির আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন পেশার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, মরহুমের কন্যা নাহিদ আনজুম সিদ্দিকী প্রমুখ মরহুমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
এরপর জাতীয় প্রেসক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, দিনকাল পরিবার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, অধ্যাপক মামুন আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মিডিয়া সেলের আলী মাহমুদ, আতিকুর রহমান রুমনসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা মরহুমের কফিনে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com