বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৬ অপরাহ্ন

নীলনদের অভিশপ্ত সেই মমি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৪

(মিশর মানেই নীলনদ, পিরামিড, ফেরাউনের মমির বর্ণিল চিত্র। প্রাচীন মিশরের বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে ফেরাউন (রামসিস ২য়)’র পর যে ক’জন ফারাও রাজার নাম ইতিহাসে গুরুত্বের সঙ্গে লেখা রয়েছে, তাদের মধ্যে তুতেন খামেন অন্যতম। তুতেন খামেন মিশরীয় ইতিহাসে জনপ্রিয় হয়ে আছেন তার মমির অভিশাপের ঘটনায়। অভিশপ্ত সেই ফেরাউনের মমি নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন জাগো নিউজের মিশর প্রতিনিধি আফছার হোসাইন। জাগো নিউজের সৌজন্যে দৈনিক খবরপত্রের পাঠকদের জন্য পত্রস্থ করা হলো।-বার্তা সম্পাদক)
প্রাচীন মিশরের ফারাও রাজা-রানীরা বিশ্বাস করতেন মৃত্যুর পর তাদের আত্মা পুনর্জীবিত হয়ে পুনরায় দেহে ফিরে আসে। এই বিশ্বাস থেকেই মৃত্যুর পর তাদের দেহকে মমি করে রাখা হতো পিরামিডের ভেতর। এসব মমি-কে নিয়ে আজও মানুষের মনে রয়েছে হাজারো বিস্ময়, ঘটছে বেশ কিছু অবিশ্বাস্য ঘটনাও।
ফারাও রাজা তুতেন খামেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। মৃত্যুর পর তার মরদেহ ৩২ কেজি ওজনের একটি কাচা সোনার (সলিড গোল্ড) কফিনে মুড়ে বহু মূল্যবান ধনরত্নসহ মমি করে সমাধিস্থ করা হয়েছিল নীলনদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত (বেলি অফ কিং) রাজাদের উপত্যকা পিরামিডে। সেই পিরামিড থেকে অনেক মমি চুরি হয়ে গেলেও ফারাও রাজা তুতেন খামেনের সমাধিটি ছিল অক্ষত। যারাই ধন-সম্পদের লোভে তার সমাধিতে গেছে তাদের জীবনে নেমে এসেছে অভিশাপের থাবা, ঘটেছে করুণ ঘটনা।
১৯২২ সালের ২৬ নভেম্বর লর্ড কর্নারভানের অর্থায়নে প্রত্মতত্ত্ববীদ হাওয়ার্ড কার্টার ও তার দল আবিষ্কার করেন ফারাও তুতেনের কফিন। তুতেন খামেনের মমি আবিষ্কারের পেছনে ছিল একটি হলুদ ক্যানারি পাখির অবদান। এ পাখিটি তুতেন খামেনের সমাধি পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছিল। আর মমির অভিশাপের বিষয়টিও তাই হলুদ ক্যানারি পাখিকে দিয়েই শুরু হলো। যেদিন প্রত্নতত্ত্ব দল প্রথম তুতেন খামেনের মমি আবিষ্কার করলো, সেদিন রাতেই হাওয়ার্ড কার্টার তার বাসায় ফিরে জানতে পারলেন একটি কোবরা তার ক্যানারি পাখিটিকে খেয়ে ফেলেছে।
পরের শিকার লর্ড কারনাভান, যিনি এই খননকার্যে অর্থায়ন করেছিলেন। তুতেন খামেনের সমাধিতে প্রবেশ করার অল্প দিনের মধ্যে মারা গেলেন তিনি। কায়রোর একটি হোটেলে তার মৃত্যু ঘটে। বলা হয়েছিল, একটি মশার কামড়েই নাকি তার মৃত্যু ঘটে। লর্ড কারনাভানের মৃত্যুর মাত্র দুই দিন পর তুতেন খামেনের মমিকৃত দেহটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মমিটির বাম গালে কারনাভানের মতো ঠিক একই জায়গায় একটি ক্ষত রয়েছে।
লর্ড কারনাভানের মৃত্যুর কিছুদিন পর এ অভিযানের আরেক নেতৃত্বস্থানীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ আর্থার ম্যাক একই হোটেল কন্টিনেন্টালে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করতে থাকেন। প্রথমে বিষয়টিকে কেউ আমলে নেয়নি। বরং অভিযাত্রী দলের ডাক্তার এবং স্থানীয় ডাক্তারকে হতবুদ্ধি করে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি।
কারনাভানের এক বন্ধু তার মৃত্যুর কথা জানতে পেরে মিশরে ছুটে আসেন সমাধি দেখতে। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য, সমাধিটি দেখার পর দিনই তিনি প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হলেন। আর এর মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে তারও মৃত্যু হয়। তখন অনেকেই তুতেনখামেনের সমাধির বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এমনই এক আগ্রহী ব্যক্তির নাম জুয়েল উড।
তিনি একজন শিল্পপতি ছিলেন। সমাধিটি ভ্রমণ করে দেশে যাওয়ার পথে জুয়েলও আক্রান্ত হন প্রচণ্ড জ্বরে। এরপর তারও মৃত্যু হয়। ডাক্তাররা তার এমন জ্বর ও মৃত্যুর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি। আর্কিবাড রিড নামক একজন রেডিওলজিস্ট তৎকালীন সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তুতেন খামেনের এক্সরে রিপোর্ট করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল তুতেন খামেনের বয়স এবং মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা। কিন্তু এ কাজ পুরোপুরি শেষ করার আগেই প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে যান রিড। ইংল্যান্ডে অবতরণের কিছুক্ষণ পরই রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু হয় তার।
সমাধিটি আবিষ্কারের চার মাস পর কারনাভানের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি রিচার্ড ব্যাথেলকে তার বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আর ব্যাথেলের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর তার পিতা আত্মহত্যা করেন। সমাধিটি উন্মোচনের সময় কয়েকজন লোক উপস্থিত ছিলেন, তার মধ্যে ১২ জনই অস্বাভাবিকভাবে পরবর্তী ৬ বছরের মধ্যে মারা যান। তবে তুতেনখামেনের মমির অভিশাপ থেকে একজনই কেবল রক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার। হাওয়ার্ড ৭০ বছর বয়সে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com