বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা না তোলার বাংলাদেশ ব্যাংকের আহ্বান ১৫তম জাতীয় সিনিয়র ক্লাব ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় শাম্মী সুলতানার তিনটি অনন্য রেকর্ড জনপ্রশাসন সংস্কারে নাগরিকরা মতামত দিতে পারবেন যেভাবে প্রফেসর তরুণ কান্তি বড়–য়ার রেক্টর পদে যোগদান উপলক্ষে শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় সভা হাসিনার মতো ’৭১ সালে শেখ মুজিবও পালিয়ে ছিলেন: মির্জা ফখরুল মার্কিন নির্বাচনে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৬ প্রার্থী আগামী ২৬ নভেম্বর শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য মেলা বজ্রপাতে মাঠেই মারা গেলেন ফুটবলার মার্কিন নির্বাচন : কার জয়ে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে? ৮ গোপন আটককেন্দ্রের সন্ধান

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বন্ধ করা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ: সামন্ত লাল সেন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির খোঁজ-খবর নিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। এ খাতের দুর্নীতি বন্ধ করাটাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দুর্নীতি কোথায় কীভাবে হচ্ছে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চিকিৎসা খাতের দুর্নীতি বন্ধে বিভিন্ন উদ্যোগ, তৃণমূলে সেবার মান বাড়ানোসহ নানান বিষয় উঠে আসে। এসময় তিনি প্রতিটি জেলায় বার্ন ইউনিট কেন্দ্র করার পরিকল্পনার কথাও জানান। দৈনিক খবরপত্রের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। – বার্তা সম্পাদক )
প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. সেন বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী বা চট্টগ্রাম মেডিক্যালে রোগীর অনেক চাপ থাকে। অথচ আমাদের একই মানের ডাক্তার জেলা শহর বা উপজেলা পর্যায়েও আছে। আমি যদি আমার ডাক্তারদের মাধ্যমে উপজেলা বা জেলাগুলোত একই সেবা দিতে পারি, তাহলে শহরে রোগীর চাপ কমবে এবং মানুষও সেখানে সেবা নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় উন্নতি করতে হলে তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ জোর দিতে হবে। এই তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করাই হবে আমার প্রথম কাজ।
উপজেলা বা গ্রামে থাকতে চিকিৎসকদের অনীহা প্রসঙ্গে সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকদের তৃণমূলে পাঠাতে ও রাখতে কাজ করবো, তবে একইসঙ্গে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথাটিও মনে রাখতে হবে। কয়েক দিন আগে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা হাসপাতালে বহিরাগতরা আক্রমণ করে; এগুলোও আমাদের ভাবতে হয়। রোগীর স্বজনরা যদি দায়িত্বশীল হন, তাহলে এটা সম্ভব।’
স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি সবসময়ই আলোচনায় থাকে, এই খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধে কী চিন্তা করছেন? এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ১৬ কোটি মানুষের মধ্য থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আমাকে বেছে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীসহ সাধারণ মানুষের অনেক প্রত্যাশা আমার প্রতি।’ ‘সারা জীবন অন্যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলাম, এখনও আছি। স্বাস্থ্য খাতে কোনও অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবহেলা সহ্য করা হবে না। কোথায় কীভাবে দুর্নীতি হয় তার খোঁজ নিচ্ছি। আমি মনে করি দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ করাটা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দুর্নীতি কোথায় হয়, কীভাবে হয়, সেটা ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। তারপর ব্যবস্থা নেবো’, যোগ করেন তিনি।
ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগের প্রকোপ দেশে প্রতিবছরই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবার আগে থেকে কোনও পরিকল্পনা করছেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘অংশীজনদের সঙ্গে, সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে, যেভাবে কাজ করলে মানুষের ভোগান্তি কমবে, সে কাজটিই করার চেষ্টা করবো। আগে যেসব কাজ হয়েছে তার থেকে যতটা অভিজ্ঞতা নেওয়া যায় তা নিয়েই কাজ করবো। তবে ঢালাওভাবে কাজ না করে আমাদের যেসব বিশেষজ্ঞ, গবেষক আছেন— তাদের কাছ থেকে নির্দেশনা নিতে পারলে পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হবে।’

দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর পরিবেশ রোগীবান্ধব নয়। দালালসহ নানান ভোগান্তি সরকারি হাসপাতালগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। রোগীদের আস্থা ফেরাতে কী করবেন—জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগেই বলেছি, বিভাগীয় শহরে আমাদের রোগীর চাপ বেশি। যেখানে ১০০ বেডের হাসপাতাল সেখানে ৩০০ রোগী থাকলে সমস্যা তো হবেই, ভোগান্তি বাড়বেই। এটার জন্যই আমি চাইবো উপজেলা শহরে ডাক্তারদের পর্যাপ্ত সুবিধা দিয়ে শহরে রোগীর চাপ কমাতে। প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে পারলে শহরে রোগীর চাপ কমে আসবে। তাহলেই রোগীরা এখানে এসে কাঙ্ক্ষিত সেবাটা পাবেন এবং দালালরাও সুবিধা করতে পারবে না।’
দেশে আগুনে পোড়া রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়ার পূর্ণ সুযোগ আছে কিনা—এমন প্রশ্নে প্রবীণ এই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ সারা দেশে থাকা বার্ন ইউনিটগুলোতে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া হচ্ছে।’ তবে মন্ত্রী স্বীকার করেন, ‘চাহিদার তুলনায় ব্যবস্থাপনা এখনও অপ্রতুল, আরও কাজ বাকি রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে এ খাতে আরও উন্নয়ন হবে। পোড়া রোগীদের চিকিৎসা সম্পর্কে চিকিৎসকদের ট্রেনিং দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এছাড়া সারা দেশের প্রতিটি জেলায় বার্ন ইউনিট কেন্দ্র করারও পরিকল্পনা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে যা চাইবো তা-ই পাবো। তিনি সবই খোঁজ রাখেন। আমরা শুধু চেয়ে নেবো।’
দেশে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি চিকিৎসার পথিকৃৎ
২০০৩ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ডা. সামন্ত লাল সেন। ওই সময় থেকে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি চিকিৎসার পথিকৃৎ ডা. সামন্ত লাল সেন। তার জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৪ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন সিলেট জেলা) নাগুরা গ্রামে। পিতা জিতেন্দ্র লাল সেন ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং ভারতের চ-ীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্যে গোল্ড মেডেল অর্জনকারী।
সামন্ত লাল সেন সেন্ট ফিলিপস হাইস্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে ‘ডিপ্লোমা ইন স্পেশালাইজড সার্জারি’ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে জার্মানি ও ইংল্যান্ড থেকেও সার্জারি বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল ছিলেন ডা. সেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এ সুবাদে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়িতে যাতায়াত ছিল তার। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সাহচর্য লাভ করেন এবং তাঁর রাষ্ট্রদর্শন, সমাজচিন্তা ও স্বাস্থ্য-ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হন। এভাবেই তিনি জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচিতি বিভাগে।
অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ডা. সেন তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৭৫ সালে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা হবিগঞ্জের বানিয়াচং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে। পাঁচ বছর পর তিনি বদলি হয়ে ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন। সেখানে তিনি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের লুধিয়ানা থেকে আগত ডা. পারজেভ বেজলীল ও অধ্যাপক আর. জে. গার্স্টের সান্নিধ্যে আসেন এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। মাত্র পাঁচটি বেড নিয়ে শুরু হয় পোড়া রোগী ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বল্প পরিসরে শুরু করেন আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা।
পরে ২০০৩ সালে এই হাসপাতালে একটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বতন্ত্র বার্ন ইউনিট যাত্রা শুরু করে, যা পরে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ডা. সামন্ত লাল সেন ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাকালীন প্রকল্প পরিচালক। পরে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গেলেও তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কের বিশেষ দায়িত্ব প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে নবগঠিত মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান স্বনামধন্য এই চিকিৎসক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com