কঠোর অবস্থানে ইরান। তাদের ওপর যেকোনো রকম হামলার ভয়াবহ জবাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাগেরি কানি বলেছেন, জবাব দেয়া হবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। এক্ষেত্রে ইরান এমন অস্ত্র ব্যবহার করবে, যা আগে কখনো ব্যবহার হয়নি। প্রেসিডেন্ট রইসি কাতারের আমিরের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে এমন প্রতিশ্রুতি দেন। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের হামলাকে তিনি সফল হামলা হিসেবে অভিহিত করেন। বলেন, ইরানের স্বার্থের প্রতি ভবিষ্যতেও যদি কোনো হুমকি আসে তাহলে অধিক বেদনাদায়ক জবাব দেবে ইরান। বার্তা সংস্থা ইরনা’র মতে, রইসি আরও বলেছেন, আমরা সরাসরি ঘোষণা দিচ্ছি যে- ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অ্যাকশন নিলে অবশ্যই তার ভয়াবহ, ব্যাপক বিস্তৃত ও বেদনাদায়ক ফল পেতে হবে।
ওদিকে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাগেরি কানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, ইসরাইল যদি কোনো প্রতিশোধ নেয়, তাহলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার পাল্টা জবাব দেবে তেহরান। ইরান এর জবাব দেয়ার জন্য ১২ দিন অপেক্ষা করবে না।
ওদিকে ১৩ই এপ্রিল ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব কিভাবে দেয়া হবে তা নিয়ে আজ মঙ্গলবারও যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদকে নিয়ে বৈঠকে বসার কথা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। এর আগে দু’বার মিটিং করেছেন তারা।
সেই মিটিংয়ের যেসব তথ্য ফাঁস হয়েছে, যদি তা সত্য হয় তাহলে ইরানের হামলার জবাব দেয়ার উপায় খুঁজছে ইসরাইল। কিন্তু সেই জবাব কি রকম হবে, কত বৃহৎ বা ক্ষুদ্র হবে তা জানা যায়নি। উগ্র ডানপন্থি মন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এবং ইতামার বেন গাভির তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। বলেছেন, তারা চান তেহরানের বুকের ওপর হামলা চালাতে। তবে এমন পাল্টা হামলা তারা চালাতে পারে- যা নিয়ে সংবাদ শিরোনাম হবে এবং সেটা একটি বার্তা দেবে।
তবে তাতে উত্তেজনা ছড়াবে না। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলার প্রায় চার দিন কেটে গেলেও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক একটি জোট গঠনের বিষয়ে কথা বলছে ইসরাইল। ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো হামলাকে তারা রাজনৈতিক লেবাসে ঢেকে দিতে চাইছেন।
কিন্তু বিশ্বজুড়ে বড় বড় দেশ ইরানে সরাসরি হামলা চালানোর বিরোধী। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, জার্মানি, জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ, ইসরাইল যদি ইরানে হামলা চালায় তবে তা পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এ থেকে শুরু হয়ে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এ জন্য সব বড় বড় দেশও মাথা ঘামাচ্ছে। তারা ইসরাইলকে হামলা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে। তাদের আশঙ্কা ইসরাইল হামলা চালালে তাতে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠবে। এমনিতেই গাজায় গণহত্যা নিয়ে ক্ষুব্ধ মুসলিম বিশ্ব। এর প্রেক্ষিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল একটি রেডিও স্টেশনকে বলেছেন, আমরা পাহাড়ের চূড়ার প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। এখান থেকে আমাদেরকে সরে আসতে হবে। এখনই আমাদেরকে ‘ব্রেকে’ চাপ দিতে হবে এবং বিপরীত গিয়ারে চলে আসতে হবে। একই রকম আহ্বান জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ, বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন প্রমুখ। পাল্টাপাল্টি হামলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ।