সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলন নিয়ে নিজের দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও নায়ক সোহেল রানা। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দৃঢ় কণ্ঠে কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করেছেন তিনি। গতকাল ৮ জুলাই) সোমবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা সম্মান পেয়েছে, সম্মানী পেয়েছে। ৩০ লাখ শহীদকে আমরা কী দিয়েছি উত্তর দিয়ে তারপর চিৎকার করুন। কোটা সিস্টেম বাতিল, সম্পূর্ণ বাতিল।’ তার ওই পোস্ট বিভ্রান্তিকর বলে মনে হয়েছে এক অনুসারীর। এইচ ইউ প্রধান নামের ওই ব্যক্তি লিখেছেন, ‘তার মানে আপনিও কোটার পক্ষে? উত্তর আপনি কী দিয়েছেন। সম্মান পেয়েছে সম্মানীও পেয়েছে। সন্তানদেরকে না হয় দিয়েছে, নাতিদের দিতে হবে কেন? ভুয়া সনদ নিয়ে যারা জায়গা দখল করে আছে তাদের সম্পর্কে কী বলবেন?’
ওই মন্তব্যের জবাবে সোহেল রানা আবারও স্পষ্ট বাক্যে লিখেছেন, ‘আমি বারবার বলেছি কোটা বাতিল। সর্ব ধরনের কোটা বাতিল, বাতিল, বাতিল।’
ওই পোস্টের প্রায় সাত ঘণ্টা আগে তিনি লেখেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বারবার বলা হচ্ছে কেন? দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৩ বছর। তার সাথে যদি আরও ১২ বছর যোগ করা হয় তাহলে তার বয়স হয় ৬৫। এই বয়সে তো নিশ্চয়ই কেউ চাকরির জন্য চেষ্টা করে না বা স্কুল-কলেজে ভর্তি হয় না। তাদের সন্তানদের বাবার জন্য কোটা সিস্টেমে চাকরি এবং ভর্তি হতে হবে, এটা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার শামিল। নিজ মেরিটে তারা ভর্তি হবে, পরীক্ষা দেবে এবং চাকরিতেও ইন্টারভিউ দেবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কখনো এ ধরনের সুযোগ চাইনি, সম্মান যখন নেই, তখন এই ধরনের সুযোগ দিয়ে তার সন্তানদের সম্মান দেখানো একটা অপচেষ্টা মাত্র।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘সম্মানী দেওয়া ছাড়া তাদের জন্য আপনারা কী করেছেন মুখে মুখে? তাদের জন্য মায়াকান্না করেছেন। ড্রেস থেকে চিকিৎসা বা চলাফেরা কোন কিছুতেই কোন সুযোগ দেওয়া হয়নি তাই আমরা কখনোই কিছু চাইনি। জাতির পিতার নির্দেশে দেশ স্বাধীন করার দরকার ছিল, আমরা সেটাই করেছি। সর্বস্তরে এই কোটা সিস্টেম বাতিল করা হোক। এটা দেশের সকলের দাবি।’
দেশে উদ্ভূত নানা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময় নিজের অবস্থান জানান দেন ‘ওরা ১১ জন’খ্যাত এই অভিনেতা। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। সেসময় প্রযোজক হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পারভেজ ফিল্মস। তার প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় ‘ওরা ১১ জন’ ছিল প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। মাসুদ রানা অভিনেতা ও পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন ১৯৭৩ সালে।
লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের চরিত্র মাসুদ রানা সিরিজের একটি গল্প অবলম্বনে ‘মাসুদ রানা’ সিনেমার নায়ক হিসেবে তার নাম হয় মাসুদ রানা। এই ছবির মাধ্যমে তিনি পরিচালক মাসুদ পারভেজ হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। শিক্ষাজীবনে ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন সোহেল রানা। ১৯৬৫ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের এজিএস, ১৯৬৮ সালে পুরো পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ছাত্রলীগের তুখোড় এই নেতা ২০০৯ সালে যোগ দেন জাতীয় পার্টিতে। পরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নির্বাচনবিষয়ক উপদেষ্টাও হন তিনি।