বরিশালে প্রকাশ্যেই চলছে মহাবিপন্ন বাঘাইড় মাছ বেচাকেনা। শহরে রীতিমত ঢাক ঢোল পিটিয়ে এই মাছ বিক্রি করেছেন এক ব্যবসায়ী। বাঘাইড় মাছ শিকার ও বিক্রয় বন্ধে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা বাস্তবায়নে তেমন কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিস্টদের। পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, এভাবে অবাধে বিক্রি অব্যাহত থাকলে অচিরেই প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। শুক্রবার (১২ জুলাই) রাতে বরিশাল নগরীর বিবির পুকুরের উত্তর পারে (ঢাকা মেট্রো ন ১৬৫৬৪১) নাম্বারের পিকাপে করে এনে ১০/১২ কেজি ওজনের ৭/৮ টি বাঘাইড় মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব মাছ ১১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। বিক্রেতা জীবন জানিয়েছেন, ভৈরব থেকে বড় আকৃতির বাঘাইড়, বোয়াল, লাল কোরাল মাছ ধরে বরিশালে বিক্রি করতে এসেছেন। অথচ মহাবিপন্ন প্রজাতির এই মাছ ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন আইনত নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে আইনের তোয়াক্কা না করেই চলছে বেচাকেনা। মিঠা পানির মাছ বাঘাইড় (মধহমবঃরপ মড়ড়হপয) এর বৈজ্ঞানিক নাম ইধমধৎরঁং ুধৎৎবষষর। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাআন্তজাতিক জোট ‘আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ’ (আইইউসিএন) এর লাল তালিকায় রয়েছে ‘মহাবিপন্ন’ বাঘাইড়। এছাড়াও বাঘাইড় মাছ বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ২নং তফসিলভুক্ত একটি সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী। এই আইন অনুযায়ী- বাঘাইড় মাছ শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন কিংবা দখলে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদন্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড-ই হতে পারে। তবে এ আইনের ব্যাপারে শুনেছেন বলে জানিয়েছেন বাঘাইড় মাছ বিক্রেতা জীবন। তিনি বলেন, ‘এই মাছ প্রায়ই ভৈরব ও ঢাকায় বিক্রি হয়। কেউ কখনো বিক্রিতে আমাদের বাধা দেয়নি। বাঘাইড় মাছ বিক্রি যে অপরাধ একথাও বিস্তারিত কেউ জানায়নি। এদিকে বাঘাইড় মাছ আনার খবর শুনে অনেকে মাছগুলো দেখতে স্থানীয়রা ভিড় করেছেন। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে মাছের ছবিও তুলছেন। কেউবা আবার দরদাম করছেন। প্রকাশ্যে বিপন্ন প্রজাতির একটি মাছ বিক্রিকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলেন, মহাবিপন্ন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ এ মাছ ঢালাওভাবে শিকার ও বিক্রির বিষয়টি দুঃখজনক। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই মাছটি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনানুযায়ী এ মাছটি বিক্রি নিষিদ্ধ, তাই বন অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তর এ মাছ শিকার ও ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে সবার আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা। বিষয়টি জানাতে বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালকের নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাকে না পেয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উপমা ফারিসাকে জানালে তিনি হোয়াাটসঅ্যাপে এসএমএস করে জানান বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষের সাথে যোগাযোগ করতে। আইন অনুযায়ী মামলা দেওয়া হলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষের সাথে রাতে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।