শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ অপরাহ্ন

জাতীয় বীর শহীদ নাফিজকে শনাক্ত যেভাবে শনাক্ত করলেন বাবা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪

সদ্য এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন গোলাম নাফিজ। বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন। নাফিজের বাবা একজন ব্যবসায়ী। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসেন ঢাকায়। মহাখালীতে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। পড়াশোনায় নাফিজ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তার ইচ্ছে ছিল ভবিষ্যতে পাইলট হওয়ার। তবে সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি তার। ৪ঠা জুলাই কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংষর্ষে নিহত হন তিনি। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা-মা। নাফিজের মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রোববার নাফিজ আহত হওয়ার পর একজন রিকশাচালক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। রিকশায় তুলার পরও কিছু সময় তিনি বেঁচে ছিলেন। রিকশায় করে তাকে নিয়ে যাওয়ার ছবি ভাইরাল হলেও তখনো তার পরিচয় নিশ্চিত হয়নি।
নাফিজের বাবা গোলাম রহমান মানবজমিনকে বলেন, রোববার দুপুর বরোটার দিকে বাসা থেকে নাফিজ বের হয়। তিনটার সময় তার এক বন্ধুর মোবাইল থেকে ওর মায়ের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তার মায়ের শরীর খারাপ থাকায় দ্রুত বাসায় যাওয়ার জন্য বলেছিল। কিন্তু আমার নাফিজ আর বাসায় ফেরেনি। নাফিজ ফার্মগেটে ছিল আন্দোলন করার সময় খামারবাড়ী মৃত্তিকা ভবনের সামনে নাফিজ গুলিবিদ্ধ হয়। কিছুক্ষণ পরে মনের মধ্যে অস্বস্তি শুরু হলো। আমার সন্তানের কোনো খবর না পেয়ে আমি খুঁজতে বের হই। ঢাকা শহরে এমন কোনো থানা, হাসপাতাল, ডিবি অফিসে খুঁজতে বাকি ছিল না। ভেবেছিলাম ওকে মনে হয় পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। দুই সন্তানের মধ্যে নাফিজ ছিল ছোট। মিরপুর ১৪ নম্বরে নেভি কলেজে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র ছিল। আমার সন্তান খুব মেধাবী ছিল। সে খেলাধুলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক কাজে সংযুক্ত ছিল। ভবিষ্যতে পাইলট হওয়ার ইচ্ছে ছিল, আমরাও ওর আগ্রহ দেখে তাকে উৎসাহ দেই। শুরু থেকেই নাফিজ আন্দোলনে নেমেছে আমিও ওকে বাধা দেইনি কখনো, সবসময় সাহস দিয়েছি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, সন্তান হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে আমি কী করে বেঁচে থাকবো। রোববার পাগলের মতো খুঁজতে থাকি। পরে ওইদিন রাত বারোটার সময় ‘জনবিস্ফোরণ নিহত শতাধিক’ শিরোনামে মানবজমিন পত্রিকায় দেখি রিকশার উপরে নিথর হয়ে পড়ে থাকা একটি ছবি ছাপা হয়েছে- এটিই আমার সন্তান। যখন ছবিটা দেখি আমার ছেলেকে নিথর অবস্থায় রিকশায় নিয়ে যাচ্ছে তখনই বুকের মধ্যে কেঁপে ওঠে। আমার আর সহ্য হয়নি, মনে হয়েছে পৃথিবীতে এমন মৃত্যু আর যেন না হয়। কোনো বাবা-মায়ের কোল যেন খালি না হয়। এরপর আবার হাসপাতালে হাসপাতালে খুঁজতে থাকি। পরে রাত চারটার সময় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দেখি নাফিজ মারা গেছে। পরে তার মরদেহ নিয়ে দক্ষিণখানে দাফন করা হয়। ছাত্র আন্দোলনে আমার ছেলের সঙ্গে আরও অনেকে শহীদ হয়েছে। কতো বাবা-মায়ের বুক খালি হয়েছে। আমার বড় সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এডমিশন দিচ্ছে। ব্যবসা করে দুই সন্তানের লেখাপড়ায় সবসময় সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করেছি সবসময়। এখন আমার বুক খালি করে দিয়ে গেছে। ওর মা কথা বলতে পারছে না। এমন দুঃখজনক মৃত্যু তো চাইনি। তবুও আমার সন্তান রাষ্ট্রের ভালোর জন্য মারা গিয়েছে এটাই এখন সান্ত¡্তনা। কাঁদতে কাঁদতে নাফিজের মামা আবুল হাশেম বলেন, নাফিজের বুকের বাম পাশে গুলি লাগে। নাকে-মুখে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com