বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ভবিষ্যতে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসবেন তারা যেন জালিমের ভূমিকায় অবতীর্ণ না হয়। একই পথ অনুসরণ না করেন।
তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আমাদের সকলের শিক্ষা নেয়া উচিৎ-যে মানুষের সাথে জুলুমের আচরণ করলে পরিণতি কী ভোগ করতে হয়, এখান থেকে সবার শিক্ষা নেয়া উচিৎ। এই শিক্ষা শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, এই শিক্ষা জামায়াতকেও নিতে হবে, বিএনপিকেও নিতে হবে। যারাই মানুষের জন্য কাজ করতে আসবে তাদের সবাইকে নিতে হবে এই শিক্ষা-যাতে একই গর্তে জাতির পা বার বার না পড়ে।’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে আহতদের খোঁজখবর নিতে এবং আর্থিক সহায়তা” দিতে সোমবার (১৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (পঙ্গু হাসপাতাল)-নিটোর পরিদর্শন ও অর্থ বিতরণ করতে গিয়ে ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বৈষ্যম বিরোধী আন্দোলনে যারা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আমরা তাদের দেখতে এসেছি। আমরা সকল আহতদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। সবার সাথে কথা বলতে গেলে-এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থায়
ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। এই চিন্তা করে অল্পসংখ্যক আহত ভাইকে দেখেছি।’
উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে একজন আহতকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘গুলিতে তার দুটি হাত ভেঙে গেছে। মাংসগুলো থেতলে গেছে। তার সুস্থ হতে কতদিন লাগবে তা আল্লাহই ভালো জানেন। আমরা আশা করছি তার হাত ঠিক হয়ে যাবে। কিন্ত আজকে দেখে আসলাম, কতগুলো পা চলে গেছে, কাটা হয়ে গেছে, তারা আর সেগুলো ফিরে পাবেন না। কিন্তু যারা বুলেটের আঘাতে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন,তারা আর ফিরে আসবে না। আমি এই মুহূর্তে তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।’ তিনি নিহতদের শহীদের মর্যাদা এবং তাদের পরিবারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রশান্তি ও ধৈর্য্যধারণের তৌফিক কামনা করেন। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনাও করেন জামায়াতের আমীর।
ডা. শফিকুর রহমান আহতদের অনুভূতির কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন- আপনার হাত-পা চলে গেছে, ভেঙে গেছে, অবস হয়ে গেছে, আপনার অনুভূতি কী, জবাবে আহতরা বলেছেন, আমি সুখী, আনন্দ ভোগ করছি এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। জাতির নাজাতের জন্য, মুক্তির জন্য আল্লাহ লড়াই করার শক্তি দিয়েছিলেন।
জামায়াত আমীর বলেন, ‘আমি তাকে আরও জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমার এক পা চলে গেছে, আবার যদি জাতির জন্য এরকম কোনো প্রয়োজন হয়? সে বলেছিল আরেক পা দিবো, তিনি আবারো জানতে চান- যদি তোমার আরেক পা চলে যায়? তখন তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে আমার জীবন দিয়ে দেবো।’ ডা. শফিকুর রহমান আহতদের এমন অনুভূতি শুনে বলেন, ‘মানুষ যখন নিজের জাতির জন্য দাঁড়িয়ে যায়, সেই জাতিকে কেউ আর দমিয়ে রাখতে পারে না, কেউ পারবে না ইনশাআল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিবর্তনটা এসেছে, এটি যেন প্রত্যেকটি নাগরিকের জীবনে স্বস্তি এনে দেয়। সম্মান এনে দেয় ও মর্যাদা এনে দেয়। আমরা যেন দেশে এবং দেশের বাইরে নিজের পরিচয়টা স্বস্তি ও গৌরবের সাথে দিতে পারি- আমি একজন বাংলাদেশী।’
হাসপাতালের পরিচালক, নাস,টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, স্টাফসহ সকলের প্রতি দলের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাদের মেধা দক্ষতার সাথে জাতির সেবা করার মাধ্যমে মর্যাদা বৃদ্ধির দোয়া কামনা করেন জামায়াত আমীর। সাম্প্রতিক আন্দোলনে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নাগরিকদের সামগ্রিক দায়িত্ব মনে করে শহীদ পরিবার, আহত এবং পঙ্গুত্ববরণকারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ জানান জামায়াত আমীর।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা এবং সেক্রেটারি ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিম, নিটোর পরিচালক ডা. অধ্যাপক কাজী শামিমুর রহমান, মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক এবং প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার, জামায়াত নেতা জিয়াউল হাসান,ডা. আসাদুজ্জামান কাবুল, ডা. শাহিদুর রহমান আকন্দ,ডা.রতন,ডা.মালেক প্রমুখ।
রাজনীতিতে প্রতিশোধের কোনো স্থান নেই রাজনীতি করতে হবে উদার দরদ মন নিয়ে : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে সকল ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করে যেতে হবে। ধর্মের ভিত্তিতে আমরা দেশের কোনো নাগরিকের মধ্যে পার্থক্য করি না। আমরা একই বাগানের বিভিন্ন ফুল। আমরা সবাই বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। এদেশ আমাদের সবার। আমরা মনে করি সত্যিকার অর্থেই কেউ যদি দেশকে ভালোবেসে থাকে, তারা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে অগ্রসর হবে না। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দকে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বাইরেও যদি আপনারা আপনাদের নিরাপত্তায় জামায়াতকে প্রয়োজন মনে করেন, যেকোনো সময়েই আমাদেরকে পাশে পাবেন, আমরা সর্বোচ্চ সামর্থ্য নিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়াবো।
গত রোববার বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য যথাক্রমে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহাকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, মুহাম্মদ কামাল হোসাইন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর সুকমল বড়–য়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ প্রচার সংঘের সহ-সভাপতি ভদন্ত স্বরূপানন্দ ভিক্ষু, মেজর (অব.) ডা. অজয় প্রকাশ চাকমা, বৌদ্ধ চ্যারিটি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কল্যাণ জ্যোতি, বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরের সিনিয়র ধর্মযাজক ভদন্ত উ.সুনন্দ মহাথের, ধর্মযাজক ভদন্ত প্রজ্ঞাদর্শী ভিক্ষু, ধর্মযাজক মিল্টন কান্তি বড়–য়া, সদস্য কাঞ্চন বড়–য়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য নান্টু বড়–য়া অনুজ, বাড্ডা বৌদ্ধ বিহারের মৈত্রী রতন ভিক্ষু, ধর্মযাজক জ্ঞানানন্দ থের, প্রজ্ঞারতন ভিক্ষু, ভিক্ষু জিহো প্রিয় ভান্তে, আশি রাখাইন ভিক্ষু, এস পি বারার প্রমুখ।
আমীরে জামায়াত বলেন, বিগত সরকার দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রতি অন্যায়, জুলুম ও নির্যাতন চালিয়ে এসেছে। জামায়াতের সাবেক দুই জন আমীর সহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিচারিক হত্যাকান্ড সংঘটিত করে একটি গোষ্ঠী জামায়াতের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘর বুলডেজার দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল। জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে এই ১৬ বছরে হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য যুবককে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার মিথ্যা মামলায় লাখ লাখ জামায়াত নেতা কর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। দফায় দফায় জেলাখানা ও রিমান্ডে নিয়ে আমাদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি রাজনীতিতে প্রতিশোধের কোনো স্থান নেই। রাজনীতি করতে হবে উদার এবং দরদ ভরা মন নিয়ে। সেই আলোকে সকল ধর্ম-বর্ণ, মতপার্থক্য দূরে রেখে আমরা সম্মিলিত ভাবে দেশ গঠনে অবদান রাখতে চাই।
প্রফেসর সুকোমল বড়–য়া বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আজকের এই উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে। আমাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি দূর হবে।সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্প্রতির বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো। তিনি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে যেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ রাখার জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।