মানুষ যাতে আরও জনবান্ধব পরিবেশে চলাচল করতে পারে, নিরাপদ বোধ করে- এজন্য সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। গতকাল বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিনিয়র সচিব এ কথা বলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সব পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করছে জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘মানুষ যাতে আরও জনবান্ধব পরিবেশে চলাচল করতে পারে, নিরাপদ বোধ করে, মানুষের মধ্যে যাতে আস্থা থাকে- এজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব বাহিনী একইসঙ্গে একই ছাতার নিচে কাজ করছে, এই মেসেজটার জন্যই এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার মনে করেছে বিস্তৃত পর্যায়ে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনী কাজ করছে। তারা মনে করেছে, এটা (সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া) হলে পারপাস অব দ্য গভর্নমেন্ট সিকিউরড দ্য সিটিজেন। উই আর সারভিং ফর দ্য স্টেট (আমরা দেশের সেবা করছি)। এই মুহূর্তে মনে হয়েছে এটা দরকার। টার্গেট (সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়ার সময়) বলে দেওয়া হয়েছে, মাত্র ৬০ দিন।’
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আছে, এক্ষেত্রে কোন দ্বন্দ্ব তৈরি করবে কিনা- এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘এটা কোন ক্যাডারের ক্ষমতা না, এটা রাষ্ট্রের ক্ষমতা। কোন দ্বন্দ্ব হবে না। এক রাষ্ট্র এক জনগণ এক সরকার। জনস্বার্থে আপনি কাজ করেন, আমি কাজ করি। এটা (সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া) ভালো ফল দেবে।’ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। ‘দ্য কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী দুই মাসের (৬০ দিন) জন্য এই ক্ষমতা দিয়ে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা সারাদেশে প্রয়োগ করতে পারবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘ফৌজদারী কার্যবিধির, ১৮৯৮’ এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন।
সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা: সিআরপিসির ১৭টি ধারায় কী কী কথা বলা আছে: সেনাবাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গতকাল মঙ্গলবারের এক প্রজ্ঞাপনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়। এতে জানানো হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ১৭টি ধারা প্রয়োগের ক্ষমতা পেয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা। ধারাগুলো হলো ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫ (২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এহসানুল হক সমাজী প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সিআরপিসির বিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
দেখে নেওয়া যাক সিআরপিসির ওই ধারাগুলোয় কী বলা আছে, কোন কোন অপরাধ এর আওতাভুক্ত। সিআরপিসির ৬৪ ধারা: এ ধরায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে বলা আছে। এই ধারার ভাষ্য হচ্ছে, যখন ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে পান, তাঁর সামনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তখন তিনি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারেন অথবা গ্রেপ্তারের আদেশ দিতে পারেন।
সিআরপিসির ৬৫ ধারা: এ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অথবা তাঁর উপস্থিতিতে গ্রেপ্তারের বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। ৬৫ ধারার ভাষ্য, বিচারের জন্য গ্রহণ করার পর তিনি তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। অথবা তাঁকে তিনি গ্রেপ্তারের হুকুম দিতে পারেন।
সিআরপিসির ৮৩ ধারা: এ ধারার ভাষ্য, যখন কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া আদালতের এখতিয়ারের স্থানীয় সীমারেখার বাইরে কার্যকর করা দরকার, তখন আদালত পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ না দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলার পুলিশ সুপার বা পুলিশ কমিশনার বরাবর ডাকযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠাতে পারবেন। অর্থাৎ যে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবেন, তিনি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব দিতে পারেন। আবার যাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে, তিনি যদি ম্যাজিস্ট্রেটের এলাকার বাইরের লোক হন, তখন পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ সুপার বা পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠাবেন।
সিআরপিসির ৮৪ ধারা: এ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের এখতিয়ারের বাইরের এলাকায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। ৮৪ ধারার ভাষ্য হচ্ছে, বাইরের এলাকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সংশ্লিষ্ট এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট অথবা উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুমোদন নেবেন। এ অনুমোদন দেওয়া হলে ধরে নেওয়া হবে, যাঁরা অনুমোদন দিয়েছেন, তাঁরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার আদেশ দিয়েছেন।
সিআরপিসির ৮৬ ধারা: এ ধারায় গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করার পর ম্যাজিস্ট্রেট যে পদ্ধতি অনুসরণ করবেন, সেটি বর্ণনা করা হয়েছে। ৮৬ ধারার ভাষ্য, বাইরের এলাকায় গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিকে ওই এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর যে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন, সেই আদালতে তাঁকে পাঠাতে হবে। জামিন, মুচলেকা ইত্যাদির বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আইন মোতাবেক আদেশ দিতে পারবেন।
সিআরপিসির ৯৫ (২) ধারা: এ ধারার ভাষ্য হচ্ছে, কেবল ম্যাজিস্ট্রেটরা ডাক বা টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষকে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে দলিল অর্পণ করতে বলতে পারেন। একই সঙ্গে ডাক ও টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষ দ্বারা ওই সব বস্তুর জন্য তল্লাশি পরিচালনা বা আটক করতে পারেন।
সিআরপিসির ১০০ ধারা: এ ধারায় অন্যায়ভাবে যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের উদ্ধার করার বিষয়ে বিধান কী, তা বলা আছে। এ ধারার ভাষ্য, যখন কোনো মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের এমন বিশ্বাস করার কারণ ঘটে যে কোনো ব্যক্তিকে এমন পরিস্থিতিতে আটক রাখা হয়েছে, যাতে আটক রাখা অপরাধে পরিণত হয়। তখন ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে উদ্ধারে তল্লাশি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। পরোয়ানা অনুযায়ী তল্লাশির পর যদি আটক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়, তাহলে তাঁকে অবিলম্বে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করতে হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি প্রয়োজনীয় আদেশ দেবেন।
সিআরপিসির ১০৫ ধারা: এ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তল্লাশির বিধান বর্ণনা করা আছে। সিআরপিসির ১০৫ ধারার ভাষ্য হচ্ছে, নিজের উপস্থিতিতে তল্লাশি করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটে আদেশ দিতে পারেন। যে স্থান তল্লাশির জন্য তিনি হুকুম দিতে পারেন, সেই স্থানে তল্লাশির সময় সশরীর উপস্থিত থাকতে পারেন।
সিআরপিসির ১০৭ ধারা: এ ধারায় শান্তি রক্ষা ও সদাচরণে মুচলেকার বিষয় বলা আছে। সিআরপিসির ১০৭ ধারার ভাষ্য, যখন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয় যে কোনো ব্যক্তি শান্তি ভঙ্গ করতে পারেন বা সর্বসাধারণের প্রশান্তি বিনষ্ট করতে পারেন বা এমন কোনো কাজ করতে পারেন, যাতে শান্তি ভঙ্গ হতে পারে, তখন ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন, তাহলে ওই ব্যক্তিকে শান্তি রক্ষার জন্য এক বছরের অনধিক সময়ের মুচলেকা দেওয়ার জন্য কারণ দর্শাতে বলতে পারেন।
সিআরপিসির ১০৯ ধারা: এ ধারায় ভবঘুরে ও সন্দেহভাজন ব্যক্তির সদাচরণের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। সিআরপিসির ১০৯ ধারার ভাষ্য, যখন কোনো জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খবর পান যে কোনো ব্যক্তি তাঁর উপস্থিতি গোপন করার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করছেন অথবা যাঁর জীবিকা নির্বাহ করার কোনো প্রকাশ্য পন্থা নেই, তখন ম্যাজিস্ট্রেট ওই ব্যক্তিকে এক বছরের অনধিককালের জন্য মুচলেকা দেওয়ার কারণ দর্শাতে বলতে পারবেন। অর্থাৎ এ ধারা প্রয়োগ হবে, যখন কোনো ব্যক্তি অপরাধ করার জন্য লুকিয়ে থাকার চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন অথবা জীবিকা অর্জনের প্রকাশ্য ব্যবস্থা নেই।
সিআরপিসির ১১০ ধারা: এ ধারায় অভ্যাসগত অপরাধীদের সদাচরণে মুচলেকার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। সিআরপিসির ১১০ ধারার ভাষ্য, যখন কোনো ম্যাজিস্ট্রেট খবর পান, তাঁর এখতিয়ারসীমার মধ্যে অভ্যাসগত দস্যু, গৃহভঙ্গকারী, চোর বা জালিয়াত অথবা চোরাই মাল গ্রহণকারী অথবা চোরদের আশ্রয় দিয়ে থাকেন অথবা চোরাই মাল গোপন বা হস্তান্তর করতে সাহায্য করেন অথবা অভ্যাসগতভাবে অপহরণ, বলপূর্বক সম্পত্তি আদায়ের মতো অপরাধ করেন বা চেষ্টা করেন অথবা সহায়তা দেন অথবা অভ্যাসগতভাবে শান্তিভঙ্গ–সম্পর্কিত অপরাধ করেন বা করার চেষ্টা করেন বা সহায়তা করেন, তখন ওই ব্যক্তিকে তিন বছরের অনধিককালের জন্য মুচলেকা দেওয়ার আদেশ কেন দেওয়া হবে না, তার কারণ দর্শাতে বলতে পারবেন। অর্থাৎ যাঁরা অভ্যাসগতভাবে বারবার চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, প্রতারণার কাজে লিপ্ত হন, তাঁদের কাছ থেকে মুচলেকা নেবেন ম্যাজিস্ট্রেট।
সিআরপিসির ১২৬ ধারা: এ ধারায় জামিনদারদের অব্যাহতির বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। সিআরপিসির ১২৬ ধারার ভাষ্য, কোনো ব্যক্তির শান্তিপূর্ণ আচরণ বা সদাচরণের জন্য কোনো জামিনদার যেকোনো সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সম্পাদিত কোনো মুচলেকা বাতিলের আবেদন করতে পারবেন। এমন আবেদন পাওয়ার পর যে ব্যক্তির জন্য জামিনদার দায়ী, তাঁকে হাজির হওয়ার বা হাজির করার জন্য সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারবেন ম্যাজিস্ট্রেট। অর্থাৎ অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে যিনি জামিনদার হন, তাঁর ওপর কিছু দায়িত্ব বর্তায়। যদি তিনি মনে করেন, তাঁর পক্ষে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়, তখন আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন।সিআরপিসির ১২৭ ধারা: এ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট অথবা পুলিশের আদেশে জনসমাবেশ ছত্রভঙ্গসংক্রান্ত বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অথবা কোনো থানার ওসি কোনো বেআইনি সমাবেশ অথবা সর্বসাধারণের শান্তি বিনষ্ট হওয়ার কারণ ঘটাতে পারে—এমন পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে কোনো সমাবেশ ছত্রভঙ্গ হওয়ার আদেশ দিতে পারেন।
সিআরপিসির ১২৮ ধারা: এ ধারায় জনসমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য বেসামরিক শক্তি প্রয়োগের বিধান বর্ণিত হয়েছে। সিআরপিসির ১২৮ ধারার ভাষ্য হচ্ছে, আদেশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও যদি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ না হয় অথবা ছত্রভঙ্গ না হওয়ার সংকল্প প্রকাশ পায়, তাহলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অথবা থানার ওসি বলপূর্বক সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য অগ্রসর হতে পারবেন। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের আটক কিংবা গ্রেপ্তারও করা যাবে।
সিআরপিসির ১৩০ ধারা: এ ধারার ভাষ্য, যখন কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অথবা পুলিশ কমিশনার সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা কমিশনপ্রাপ্ত নন এমন কর্মকর্তা, যিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো সেনাদলের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাঁকে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার কাজে এবং গ্রেপ্তার ও আটক করার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রয়োজনবোধে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য অথবা শাস্তি দেওয়ার জন্য তাঁদের গ্রেপ্তার বা আটক করাতে পারবেন। অর্থাৎ ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিরক্ষা বাহিনীর শক্তি প্রয়োগের দ্বারা সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে চাইলে তিনি সামরিক কর্মকর্তাকে আহ্বান করতে পারেন। সামরিক কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ অনুযায়ী, আদেশ অমান্যকারীদের গ্রেপ্তার ও আটক করতে পারেন। তবে তাঁরা শক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে খুবই রক্ষণশীল হবেন।
সিআরপিসির ১৩৩ ধারা: এ ধারার ভাষ্য হচ্ছে, যখন কোনো জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা অন্য কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ প্রতিবেদন বা অন্য কোনো সংবাদ পান যে জনসাধারণ আইনসংগতভাবে ব্যবহার করছেন বা করতে পারেন—এমন কোনো পথ, নদী বা খাল থেকে সর্বসাধারণের ব্যবহার্য কোনো স্থান থেকে বেআইনি বিঘœ বা উপদ্রব অপসারণ প্রয়োজন অথবা কোনো ব্যবসা বা পেশা পরিচালনায় অথবা কোনো মালপত্র বা পণ্যদ্রব্য রাখা স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য বা শারীরিক আরাম-আয়েশের পক্ষে ক্ষতিকর, সে জন্য এমন ব্যবসা বা পেশা নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত হওয়া প্রয়োজন অথবা এমন মালপত্র বা পণ্যদ্রব্য অপসারণ হওয়া দরকার অথবা কোনো ঘরের নির্মাণকাজে অথবা কোনো ঘরে, তাঁবু বা কাঠামো বা কোনো গাছ এমন অবস্থায় রয়েছে, যা পড়ে যেতে পারে; যাতায়াতকারীদের ক্ষতির কারণ ঘটাতে পারে, যে কারণে ঘর বা তাঁবু অপসারণ বা গাছ অপসারণ বা ঠেকা দেওয়া প্রয়োজন অথবা জনসাধারণের বিপদ থেকে নিবারণের জন্য কোনো পথ বা সর্বসাধারণের ব্যবহার করা স্থানের কাছে পুষ্করিণী, কূপ বা খন্দকের চারদিকে বেড়া প্রয়োজন অথবা কোনো বিপজ্জনক প্রাণী বিনষ্ট, আটক বা অন্য কোনোভাবে বিলি-ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, তখন ম্যাজিস্ট্রেট যে ব্যক্তি বাধা অথবা উপদ্রব সৃষ্টি করছেন অথবা এমন ব্যবসা বা পেশা চালাচ্ছেন অথবা এমন মালপত্র বা পণ্যদ্রব্য রাখিয়েছেন অথবা ঘর, তাঁবু, কূপের মালিক দখলদারদের ওই সব বাধা অপসারণ করার আদেশ দিতে পারবেন।
সিআরপিসির ১৪২ ধারা: সিআরপিসির ১৪২ ধারার ভাষ্য হচ্ছে, ১৩৩ ধারা অনুসারে আদেশ দেওয়ার সময় ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন, জনসাধারণের প্রতি গুরুতর রকমের আসন্ন বিপদ বা ক্ষতি প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন, তাহলে তিনি মীমাংসা সাপেক্ষে বিপদ মোকাবিলা বা ক্ষতি প্রতিরোধে জন্য যেরূপ প্রয়োজন, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদেশ হয়েছে, তাঁর সেরূপ আদেশ জারি করবেন। এরপরও যদি আদেশ না মানেন, তখন বিপদ মোকাবিলা বা ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট যেরূপ ভালো মনে করেন, নিজে সেরূপ পন্থা অবলম্বন করবেন অথবা অবলম্বন করাবেন। এই ধারা অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক সরল বিশ্বাসে করা কোনো কাজের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা চলবে না।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অন্তর্র্বতী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দেশে বর্তমানে কিছু কিছু এলাকায়, বিশেষ করে শিল্পা লগুলোয় নাশকতা ও দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের মতো কর্মকা- ঘটছে বলে সরকার লক্ষ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির উন্নতি এবং অপতৎপরতা মোকাবিলার জন্য সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সীমিত সময়ের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে সেনাবাহিনীর এমন দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনীয়তা আর থাকবে না।