জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপ্লব চলাকালে পুলিশের পোশাক পরা হিন্দিভাষীরা অতি কাছ থেকে গুলি করেছেন। তারা হিন্দিতে ছাত্রদের গালাগাল করেছে। তাদের আক্রমণে ছিলো অসম্ভব নিষ্ঠুরতা। এমন চা ল্যকর তথ্য পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন এবং তদন্ত সংস্থার টিম। তবে বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে প্রবেশ করে অন্যকোনো দেশের নাগরিকরা যদি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন-তাদের বিচারের ক্ষমতাও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রয়েছে।
রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোরে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে এসে গতকাল মঙ্গলবার এ কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, আন্দোলনে পুলিশের বর্বরতার কথা প্রসিকিউশন টিম এবং তদন্ত সংস্থার কাছে তুলে ধরেন পুলিশের গুলিতে আহতরা। রাজধানীতে ঘটা অতিসংবেদনশীল ঘটনার তদন্ত ও বিচার অগ্রাধিকার পাবে বলেও জানান তিনি।
চীফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে চা ল্যকর তথ্য মিলেছে। বেশ কয়েকজন আহত ছাত্র-জনতা, যারা যাত্রাবাড়ি,গাজীপুর এবং মাওনাতে যারা ছিলেন তাদের কাছ থেকে প্রমাণ পাচ্ছি যে, তাদের কাছে এসে খুব কাছ থেকে পুলিশের পোশাক পরে যারা গুলি করেছে যে পুলিশগুলো তারা বাংলা ভাষায় কথা বলেনি। তারা হিন্দিতে কথা বলেছে। গালাগাল করেছে। তাদের আচরণ ছিলো অসম্ভব ব্রুটাল। আমরা এটি পর্যালোচনা করবো। পর্যালোচনা করে আমাদের আইনে যে দেশের নাগরিকই হোক, বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে যদি ক্রাইমস এগেনেস্ট হিউম্যানিটি করে, এই আদালতের সেটির বিচার করার ক্ষমতা রয়েছে।
তাজুল ইসলাম আরো বলেন, পুলিশের গুলিতে মারাতœক আহত ব্যক্তির গলার ওপর পা চেপে ধরে ঘাড়ের হাঁড় ভেঙে ফেলা হয়েছে। মুমূর্ষ অবস্থায় তিনি এখন চিকিৎসাধীন। চীফ প্রসিকিউটর বলেন, সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা হচ্ছে যে, একজন গুলিবিদ্ধ আহতকে কোলে নিয়ে বসে থাকা অবস্থায়, ওই আহতের গলায় পাড়া দিয়ে গলার হাড়া ভেঙে ফেলেছে আমরা এমন এমন ঘটনা জানতে পেরেছি। আহত এসব ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ভুক্তভোগীদের বিস্তারিত তথ্য তদন্ত সংস্থা কর্তৃক রেকর্ড বা সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
চীফ প্রসিকিউটর জানান, আন্দোলনে আহত প্রায় ৯শ’ জনের মতো চিকিৎসা হয়েছে এখানে। আহতরা বিভিন্ন সময় চিকিৎসা নিয়ে এখান থেকে চলে গেছেন। পাঁচজন চিকিৎসারত অবস্থায় এখানে মারা যান। এই হাসপাতালে দু’জনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। এখানে ৬৮ জন চিকিৎসারত আছে। আমরা ভিকটিমদের সাথে কথা বলেছি ও তাদের বক্তব্য নিয়েছি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ভিকটিমদের বিস্তারিত তথ্য আমাদের তদন্ত সংস্থা আগামী দুই দিনের মধ্যে রেকর্ড বা সংরক্ষণ করবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, আহতদের শরীরে যেসব বুলেট লেগেছিল, যেগুলো অপসারণ করা হয়েছে, সেগুলো দেখেছি। আন্দোলনকারীদের ওপর বিজিবি ও পুলিশ গুলি করেছে। সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা হচ্ছে যে, একজন গুলিবিদ্ধ আহতকে কোলে নিয়ে বসে থাকা অবস্থায়, ওই আহতের গলায় পাড়া দিয়ে গলার হাড় ভেঙে ফেলেছে -মন এমন ঘটনা জানতে পেরেছি।
বিদেশী ভাষায় কথা বলে ভিকটিমদের ওপর হামলা বিষয় উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সরকারপক্ষের প্রধান আইনজীবী বলেন, ভিকটিমরা বলেছেন, বিদেশী ভাষা হিন্দিতে গালি দিয়েছে, কাছে এসে গুলি করেছে। ভিকটিমদের ওপর হামলা করেছে। ভিকটিমরা বলছে, বিদেশী সৈন্যবাহিনী তাদের উপর হামলা করেছে। আমরা এ সমস্ত তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করছি। যথারীতি আইন অনুযয়ী বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা মামলার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পুলিশের পোশাকে অন্যদেশের নাগরিকরা ছিলেন। যে কোনো দেশের নাগরিক এ ভূ-খন্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজধানীতে ঘটা অতিসংবেদনশীল ঘটনার তদন্ত ও বিচার অগ্রাধিকারভিত্তিতে হবে বলেও জানান তিনি।