বিপদ-আপদ, সমস্যা-সংকট জীবনের অংশ। বিপদ-আপদ শুধু পরীক্ষা বা পাপের শাস্তি নয়, বরং কখনো কখনো তা রহমতস্বরূপ। আল্লাহ তাআলা যাকে ভালোবাসেন, তাকেই বিপদ-আপদের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। এর দ্বারা বান্দার গুনাহ মাফ হয় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দার কল্যাণ চান, তাকে দ্রুত দুনিয়ায় বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন কারো অকল্যাণ চান, তাকে অপরাধের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। এরপর পরকালে তিনি তাকে পরিপূর্ণ শাস্তি দেন।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৬) মুমিনজীবনের সব কিছু কল্যাণকর।
চাই তা সুখ-শান্তি বা সফলতা হোক কিংবা বিপদ-আপদ বা ব্যর্থতা। সুহাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না।
তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকর আদায় করে আর অসচ্ছলতা কিংবা দুঃখ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্যধারণ করে, উভয়টিই তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯০)
বিপদকালে মুমিনের করণীয়
এক. ইন্না লিল্লাহ পড়া : বিপদ-আপদ কিংবা আকস্মিক দুর্যোগে ইন্না লিল্লাহ পড়া ইসলামের শিক্ষা। এর বরকতে আল্লাহ তাআলা অনেক বিপদ থেকে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, “যারা তাদের কোনো মুসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ এরাই তারা, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে। আর এরাই সৎপথে পরিচালিত।” (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৬-১৫৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ বিপদে পতিত হলে যেন ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১৯)
দুই. ধৈর্যধারণ করা : বিপদে ধৈর্য ধারণ করার তাগিদ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে, তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যধারণকারীদের।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৫)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তোমাদের কাছে যা আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে তা কখনো শেষ হবে না। যারা ধৈর্যধারণ করে, আমি তাদের প্রাপ্য প্রতিদান দেব উত্তম কর্মের প্রতিদানস্বরূপ, তারা যা করত।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৬)
তিন. নামাজ আদায় করা : মানুষের সব সমস্যা ও সংকট দূর করার তৃতীয় পন্থাটি হলো নামাজ। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র অভ্যাস ছিল, যখনই তিনি কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তখনই নামাজ আরম্ভ করতেন। আর আল্লাহ তাআলা এর বরকতে তাঁর সব বিপদ দূর করে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৩১৯) এ জন্য বিপদ-আপদে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত দিকনির্দেশনার ওপর আমল করা মুমিনের কর্তব্য।