বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৩ অপরাহ্ন

পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ আমানতদারিতা

মীযান মুহাম্মদ হাসান:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৪

পরামর্শ শব্দের অর্থ, উপদেশ প্রদান করা। এখান থেকে এটি পরামর্শক বা উপদেষ্টা হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। আর বর্তমানে কাউকে কোনো বিষয়ে পরামর্শক নিয়োগ বা উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করা; এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানিত একটি পদ বিশেষও বটে। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো কাজে উপদেষ্টা নিয়োগ করতে দেখা যায়। বিশেষ করে, রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য অভিজ্ঞ ও বিজ্ঞ এক বা একাধিক ব্যক্তিকে উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করা হয়। যারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান বুদ্ধি ও বিচক্ষণতায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময়োপযোগী পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। আর গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ অনুযায়ী একটি দল-মত-প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে ভবিষ্যতের জন্য করণীয় নির্ধারণ করেন। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কাক্সিক্ষত উদ্দেশ্য লাভে অগ্রসর হন। ব্যক্তি, দেশ জাতি ও আপামর জনগণ তা থেকে উপকৃত হন। বাস্তবে এমন উপদেশ বা পরামর্শই হলো জনবান্ধব ও জনকল্যাণমুখী। যাতে সব ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী ও পেশার মানুষ উপকৃত হয়। হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ইসলাম হচ্ছে সদুপদেশ বা কল্যাণকামিতার নাম। সাহাবিরা বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার জন্য কল্যাণ কামনা? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের জন্য। (সহি মুসলিম)
একজন উপদেষ্টা বা পরামর্শদাতাকে মনে রাখতে হবে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব তাকে প্রদান করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি আমানত। দায়িত্ব পালন করাও একটি আমানত। হাদিসে দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জবাবদিহিতার কথাও বলা হয়েছে। অবশ্যই প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবে। যেমন- জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। (সহিহ বুখারি)
হাদিসে একজন পরামর্শক বা উপদেষ্টার দায়িত্বকে গুরুত্বপূর্ণ আমানত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যার কাছে পরামর্শ কামনা করা হয়, তিনি হলেন একজন আমানতদার। তার দায়িত্ব হলো সঠিক পরামর্শ প্রদান করা। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, যার কাছে (কোনো বিষয়ে) পরামর্শ চাওয়া হয়। তিনি একজন আমানতদার। (সুনানে তিরমিজি)
একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে অবশ্যই বাহ্যিক জ্ঞান বিজ্ঞানে পারদর্শী হতে হবে। ধার্মিক আল্লাহভীতি সম্পন্ন হতে হবে। ধৈর্যশীল হতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো সৎ সাহস থাকতে হবে। কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগেও; পরামর্শ করতে হবে। নিকটতম আস্থাভাজন বিজ্ঞ মানুষের সাথে কথা বলে, আলোচনা পর্যালোচনা করে তবেই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। নয়তো হিতে বিপরীত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। নিজস্ব মতামত তুলে ধরার আগে বিষয়টির বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও সঠিক চিন্তাভাবনা করতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা বিশেষ শ্রেণী গোত্রের বিরুদ্ধে কোনো মতামত গ্রহণ করা যাবে না। ধর্মীয় স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কোনো আচরণ প্রকাশ করা যাবে না। প্রত্যেককে তার নিজ নিজ ধর্ম পালনে এবং ধর্মীয় বিষয়ে স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর অবশ্যই সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, সহিংসতা উসকে দেয়; এমন কোনো কাজ বা সিদ্ধান্তকে কখনোই প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। নিজের মতকেই জোর করে কারও ওপর চাপিয়ে দেয়ার মতো দুঃসাহস করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। এজন্য আচরণে নম্রতা ও ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে। কারো সাথে কঠিন ও কঠোর আচরণ করা কখনোই উচিত হবে না। অহঙ্কার ও দাম্ভিকতাও যেন প্রকাশ না পায় এ বিষয়েও লক্ষ্য রাখতে হবে।
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন। যাতে প্রিয়নবী সা:কে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুগ্রহে আপনি তাদের প্রতি কোমল হয়েছিলেন। আপনি যদি রূঢ় ও কঠোর হতেন, তবে তারা আপনার কাছ থেকে সরে যেত। সুতরাং আপনি তাদের ক্ষমা করুন। তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আর (কোনো) কাজের বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। এরপর আপনি কোনো সংকল্প গ্রহণ করলে, আল্লাহ তায়ালার ওপর নির্ভর করুন। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা (তাঁর ওপর) নির্ভরকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান : ১৫৯)
আয়াতের ব্যাখ্যায় বিশেষ কিছু দিক উঠে এসেছে। আপনি যদি কোমল ও নরম না হয়ে কঠিন হতেন, তবে লোকজন আপনার কাছে না এসে আরো দূরে সরে যেত। কাজেই আপনি মানুষের সাথে ব্যবহারে ক্ষমাসুন্দর আচরণ করুন। অর্থাৎ মুসলমানদের মনোতুষ্টির জন্য পরামর্শ করুন। এ আয়াত থেকে পরামর্শের গুরুত্ব, উপকারিতা প্রয়োজনীয়তা ও বৈধতা প্রমাণিত হয়। পরামর্শ করার এ নির্দেশ কারো ওয়াজিব এবং কারো জন্য মুস্তাহাব। (তাফসিরে ইবনে কাসীর)
ইমাম শাওকানি রহ: লিখেছেন যে, ‘দায়িত্বশীল শাসকদের জন্য আবশ্যক হলো, তাঁরা এমন সব বিষয়ে আলেম জ্ঞাতদের সাথে পরামর্শ করবেন, যেসব বিষয়ে তাঁদের জ্ঞান নেই অথবা যে ব্যাপারে তাঁরা সমস্যার সম্মুখীন হন। (তাফসিরে আহসানুল বয়ান)। লেখক : খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com