পহেলা নভেম্বর থেকেই বাঙালীর ঐতিহ্য নবান্ন উৎসবকে ঘিরে কৃষকের ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের জোয়ার। নতুন ধান ঘরে তোলার উৎসবে মাতোয়ারা গ্রাম বাংলার কৃষক-কৃষানিরা। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আমন ধানের বাম্পার ফলন। ফসলী মাঠে বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে বইছে তৃপ্তির হাসি। প্রতি বিঘা জমিতে ১৬ থেকে ২০মন ধান ঘরে তুলতে পারবে কৃষক। বাজারদরও চড়া থাকায় প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ থেকে সাড়ে ১৩শ’ টাকায়। সরেজমিনে ও কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে এ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় এবারে ২৬ হাজার ৪শ ১৪ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী জাতের) ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ও স্থানীয় জাতের ২০ হাজার ২শ’ ৬৪ হেক্টরে আমন ফসল উৎপাদন করেছেন কৃষক। মাঠ জুড়ে সোনালী ফসলের সমারোহ চারিদিকে মৌ-মৌ গন্ধ। বাম্পার ফলনে কৃষকের ঘরে ঘরে বইছে উৎসবের আমেজ। সপ্তাহজুড়ে মাঠে মাঠে কর্তন শুরু হয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি-১১, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫২, ব্রি -৭৫, ব্রি-৭৬, বি আর -২৩, বি আর-১১ সহ একাধিক প্রজাতির আমন কর্তন। রবিবার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের আমুরবুনিয়া গ্রামের কৃষক দিলীপ গাইন, জগদীশ ডাকুয়া, তপন মিস্ত্রি, উজ্জ¦ল সরদার, সুমন গাইন, নুরুজ্জামান শেখসহ একাধিক কৃষকরা মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলন ভালো হওয়ায় বেজায় খুঁশী তারা। তৃপ্তির হাসি দিয়ে ধান কাটা এ কৃষকরা বলেন গতবারের চেয়ে এবারে প্রতি বিঘায় ৩/৪মন ধান বেশী পাবো। বাজারে দামও রয়েছে ভালো। উৎপাদিত ফসলে বিঘা প্রতি সার, ঔষধ, শ্রমিকসহ খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। সেই খানে বিঘা প্রতি ধান বিক্রি করতে পারছে ১৪ হাজার টাকায়। ফসলীমাঠে পোকা মাকড়ের আক্রমনও এবারে কম হয়েছে বলে কৃষকেরা জানান। এ বিষয়ে ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সামসুন্নাহার বলেন, অন্যসব বছরের চেয়ে এবারে আমনের ফসল খুবই ভালো হয়েছে।
তবে বড় ধরনের কোন রোগবালাই ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসলে কৃষক তাদের কাংঙ্খিত ফসল ঘরে তুলতে পারবে। কৃষি অফিস থেকে ইতিমধ্যে এসব চাষিদের বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ ও নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক পরামর্শের কারনেই ভালো ফসল ফলাতে সক্ষম হয়েছে কৃষকরা। এ সম্পর্কে মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এবারে এ উপজেলায় কৃষক ২৬ হাজার ৪শ ১৪ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করেছেন। এ অঞ্চলে উফশী জাতের ধান একটু আগে ভাগেই কর্তন শুরু হয়। তবে স্থানীয় জাতের আমন কাটা আর ২সপ্তাহ পর শুরু হবে। বেশীরভাগ জমিতে ভালো ফলন হয়েছে তবে নিশানবাড়ীয়া, খাউলিয়া, হোগলাবুনিয়া, বলইবুনিয়া, রামচন্দ্রপুর, হোগলাপাশা, বনগ্রাম এই ৭টি ইউনিয়নে বেশী ভালো ফসলের আশা করা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কারেন্ট পোকার আক্রমন না হলে কৃষক তাদের সম্পুর্ণ ধান ঘরে তুলতে পারবেন।