গাজীপুরের কাপাসিয়ার গিয়াসপুর-আড়াল বাজার আঞ্চলিক সড়কের গাঁওরা মধ্যপাড়া এলাকায় বড়ধারা খালের উপর বিশ মিটার সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরুর তিন বছরের মাথায় ও অর্ধেক কাজ সমাপ্ত হয়নি। অত্যন্ত ব্যস্ততম এ সড়কে প্রতিদিন শত শত বিভিন্ন ধরণের যাত্রী বাহী ও পণ্য বাহী যানবাহন মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প পথ দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এ পথটুকু পার হতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই একাধিক যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হন।এমনকি এ স্থানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কিছুদিন আগে একজন যাত্রী নিহত হয়েছেন।তাই এ সেতুর নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় স্থানীয়রা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল কাপাসিয়ার বারিষাব ইউনিয়নের গিয়াসপুর বাজার থেকে সনমানিয়া ইউনিয়নের আড়াল বাজার সড়কের গাঁওরার মধ্যপাড়া এলাকায় বড়ধার খালের উপর বিশ্ব ব্যাংক ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৩ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার ৫০১ টাকা চুক্তিমূল্যে একটি খালের উপর ২০ মিটার দের্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রশস্ত একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ফরিদপুর জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিঃ’ কে ২০২৩ সালের ৩০ মার্চেরমধ্যে এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে যানবাহন ও পথচারি পারাপারের জন্য খুলে দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে প্রায়দেড় বছরচলে গেলেও সেতুটির কাজ সহসাই সমাপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা যায়, কিন্তু সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর এ পর্যন্ত পাইল, পাইল ক্যাপ ও পিলারের কাজ সমাপ্ত করে দুই পাশের এভার্ডমেন্টের কাজ শেষ করা হয়েছে। উপরের গার্ডার এবং নির্মাণের প্রস্তুতি পর্ব অসমাপ্ত রাখায় নির্মাণাধীন অবকাঠামো ঘিরে নানা লতাপাতা ও গাছ পালা গজিয়ে উঠেছে। এ নির্মাণাধীন সেতুটির উত্তর পাশে মালামাল রাখার ও পাহাড়াদারের একটি টিনের অস্থায়ী ঘর শূন্য পড়ে রয়েছে। এর সাথেই প্রকল্পের বিবরণ সম্বলিত সাইন বোর্ডেও লেখা গুলোও মুছে গেছে। এখানে কিংবা আশে পাশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন, যন্ত্রপাতি এবং নির্মাণ সামগ্রির কোনো কিছুই নেই। সেতু নির্মাণের শুরুতেই নিচের ফসলিজমির উপর মাটি ফেলে সাময়িক চলাচলের পথটিও খুবই উঁচ ুনিচু খানা খন্দে ভরপুর। এ পথ দিয়ে চলাচলরত যাত্রী বাহী যানবাহন গুলো যাত্রীদের এক পাশে নামিয়ে অপর পাশে গিয়ে আবার তুলে নিচ্ছে। অনেক সময় ভ্যান গাড়ি, রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা ও সিএনজি চালিত অটো রিকশা অসমতল এ পথ পার হতে গিয়ে উল্টে যায়। গাওরার গ্রামের আব্দুল মোতালিব জানান, ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে উপজেলার হাজার হাজার লোক জনসহ কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহের অসংখ্য মানুষ কাপাসিয়ার বিভিন অঞ্চল সহ নরসিংদী জেলার নানা উপজেলা এবং সিলেট অঞ্চলে যাতায়াত করে থাকেন। সেতুনা থাকায় এবং নিচের ফসলি জমির উপর দিয়ে নিন্ম মানের সাময়িক চলাচলের পথ নির্মাণ করায় প্রায় প্রতিদিনই মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাছাড়া বর্ষাকালে অল্প পরিমাণ বৃষ্টি হলেই নিচের রাস্তার কাঁদা মাটি পার হয়ে যানবাহন ও পথচারিদের মারাত্মক অসুবিধা মোকাবেলা করতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকা বাসী জানান, রাতের বেলা অপরিচিত লোকজনের জন্য এ স্থানটি মারাত্মক আতঙ্কের জায়গায় পরিণত হয়েছে। এখানে যানবাহন থামিয়ে খুবই কম গতিতে যানবাহন চালাতে হয় বিধায় গভীর রাতে অনেকেই ছিনতাইয়ের শিকার হন। কাপাসিয়ার একজন ঠিকাদার জানান, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে প্রাক্কলিত মূল্য ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৫ হাজার ৬৫৮ টাকা ধার্য করা হলেও ‘ফরিদপুর জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিঃ’এর চেয়ে ১২ শতাংশ কম মূল্যে কাজ নেওয়ায় কাক্সিক্ষত পরিমাণে লাভবান না হওয়ার আশঙ্কায় শুরু থেকেই নানা তাল বাহানা করতে থাকে।ফলে এ কাজটি যথাসময়ে সমাপ্ত হয়নি। এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মোবাইল নাম্বারে বহু বার ফোন দিলে তাতে সাড়া দেননি এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তার জবাব দেন নি। উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাঈনউদ্দিন জানান, এ সেতুটির নির্মাণ কাজ দ্রুততম সময়ে শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু ঠিকাদার আবারো কাজ শুরু করবেন বলে সময় ক্ষেপন করে চলছেন। তাই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি টেন্ডার বাতিলের সুপারিশ করেছেন।