‘তাওবা’ একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ অনুশোচনা করা, গুনাহ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা। কুরআন এবং হাদিসে ‘তাওবা’ শব্দটি আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো ত্যাগ করা ও তার আদেশকৃত বিষয়গুলোর দিকে ফিরে আসা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। তাওবা করা ছাড়া কবিরা গুনাহ মাফ হয় না। যে তাওবার পর পাপকর্মের পুনরাবৃত্তি হয় না, তাকে তাওবাতুন নাসুহা বা খাঁটি তাওবা বলে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, এরপর তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন (তাওবা) করো।’ (সূরা হুদ-৩)
মানুষ যত বড় গুনাহই করুক না কেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাওবার দরজা খোলা থাকে। আর পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাওবা কবুল হবে। কাজেই নিরাশ না হয়ে আমাদেরকে তাওবা করতে হবে। তাওবা যেহেতু ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাওবার জন্য বিশেষ কিছু শর্ত রয়েছে : ১. অতীতের সব কৃত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, অনুশোচনা করা। ২. কারো ধন-সম্পদ ইত্যাদি অন্যায়ভাবে গ্রহণ করে থাকলে তা ফিরিয়ে দেয়া। ৩. শারীরিক বা মৌখিকভাবে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে, তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া।
৪. ভবিষ্যতে কখনো গুনাহের কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প করা এবং আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সমর্পণ করা।
মানুষ ইচ্ছা করলেই তাওবা করতে পারে না। আল্লাহর রহমত ও করুণার প্রয়োজন হয়। তাই আল্লাহর কাছে তাওবার তাওফিক চাইতে হবে। নিজের মন্দ কর্মগুলোর জন্য অনুতপ্ত ও অনুশোচনা করে, অনুগত হয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে চাইলে, আশা করা যায়, আল্লাহ তায়ালা তাওবাহর সুযোগ করে দেবেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘এরপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাওবার সুযোগ দান করেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সূরা তাওবা-২৭)
এ জন্য কখনো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। আল্লাহর রহমতের প্রতি আশা রাখতে হবে। রহমতের আশা রেখে আল্লাহর কাছে তাওবা করলে, আশা করা যায়, আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- ‘আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা জুমার-৫৩)
তাওবা করলে গুনাহ মাফ হওয়ার সাথে সাথে আরো কিছু প্রতিদান লাভ করা যায়। তাওবা করলে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়। তাওবা হচ্ছে সফলতার পথ। এই পথে চললে বান্দা চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করতে পারবে। তাওবা করলে আল্লাহ উত্তম জীবিকা দান করবেন। জীবন পরিচালনার জন্য জীবিকা অপরিহার্য। জীবিকা ছাড়া জীবন অচল। আর শুধু জীবিকাই নয়; বরং উত্তম জীবিকা পাওয়া যায় যদি বান্দা তাঁর রবের কাছে ক্ষমা চায় আর তাওবা করে।
মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগেই তাওবা করতে হবে। মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হয়ে গেলে, তাওবা কবুল হবে না। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘আর এমন লোকদের জন্য কোনো ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে, আমি এখন তাওবা করছি। আর তাওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।’ (সূরা নিসা-১৮)
অনেকেই বলে, আগামীকাল তাওবা করব। আগামীকাল থেকে ভালো হয়ে যাব। আগামীকাল থেকে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করব। আগামীকাল থেকে সব ধরনের গুনাহের কাজ ছেড়ে দেবো। আসলে এটি শয়তানের এক প্রকার ধোঁকা। এমন হাজারো মানুষ কবরে শুয়ে আছেন, যারা এমনটি বলেছিল, ‘আগামীকাল করব’। কিন্তু তাদের জীবনে ‘আগামীকাল’ আর আসেনি। সুতরাং, আগামীকাল নয়, আজ এখনই তাওবা করতে হবে। যখন মৃত্যু উপস্থিত হবে, তখন তাওবা করার অবকাশ দেয়া হবে না। নিরাপদ হবে এটিই যে, মৃত্যু আসার আগেই তাওবা করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকা। যেহেতু মৃত্যু আসার নির্দিষ্ট সময় আমাদের কারো জানা নেই, যেকোনো সময়, যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যু আমাদের কাছে উপস্থিত হতে পারে। তাই সবসময় তাওবা করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। লেখক : ইমাম ও খতিব, বাইতুন নূর জামে মসজিদ বরাইয়া, কালিগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা