ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় এক নারীকে হত্যার পর দেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ ভূঁইয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে নারীর মাথাবিহীন দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের একটি হাতে চুড়ি থাকায় দেহটি নারীর বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফারহান রনিকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রনি যুবলীগ নেতা শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার ছেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওই ঘর থেকে ধোঁয়া বের হওয়ায় প্রতিবেশীরা গিয়ে দেখে রনি সেখানে বসে আছেন। আগুনের কারণ জানতে চাইলে রনি পাতা পুড়ানোর কথা বলে। এক পর্যায়ে ঘরের ভেতর উকি দিয়ে দেখা যায় মাটিতে মানুষ আকৃতির আগুনে পুড়া দেহ। পাশে একটি ছোট গর্তও রয়েছে। এ সময় রনি ক্ষুব্ধ হয়ে দা নিয়ে তাদেরকে মারতে আসেন। পরে এলাকাবাসী তাকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ভোরে ওই ঘর থেকে নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনতে পাই। পরে আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে গেলে রনি ধমক দিয়ে চলে যেতে বলেন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে যুবলীগ নেতার পরিত্যক্ত গোয়ালঘর থেকে মাথাবিহীন এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলের পাশের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয় মাথা। সকালে মাথাবিহীন মরদেহ দেখে স্থানীয় লোকজন এবং পুলিশের ধারণা হয়েছিল এটি কোনো তরুণীর দেহ হবে। তবে মাথা পাওয়ার পর পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে এটি মধ্যবয়সী এক নারীর মরদেহ। নিহত নারীর পরিচয়ও নিশ্চিত করেছে পুলিশ। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহত নারীর নাম হরলুজা বেগম (৫০)। তিনি আখাউড়া উপজেলার হীরাপুর এলাকার নুরুল ইসলাম ব্যাপারীর স্ত্রী। এ ঘটনায় আটক হওয়া তরুণ ফারহান রনি ভোরের দিকে তাকে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে যান। কী কারণে তাকে এখানে আনা হয় কিংবা কেন হত্যা করা হয় এ বিষয়ে পুলিশ এখনো বিস্তারিত জানতে পারেনি।
রাজহাঁস খুঁজতে গিয়ে মেলে মরদেহ!
স্থানীয়রা জানান, গাজীর বাজার এলাকার এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে গতকাল রাজহাঁস চুরির ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে হাঁস খুঁজতে গিয়ে ওই এলাকার শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার বাড়ির গোয়ালঘর থেকে পোড়া মাংসের গন্ধ পান তারা। সেখান থেকে ধোঁয়া বের হতেও দেখেন স্থানীয়রা।
ঘটনা কী জানতে চাইলে তখন ওই ঘরে থাকা ফারহান রনি বলেন, তিনি গাছের পাতা পোড়াচ্ছেন। তার কথা বিশ্বাস না হওয়ায় হাঁসের মালিক এনামুল, রোমান ও তাদের চাচাতো ভাই উবায়দুল সেখানে প্রবেশ করতে চান। এ সময় ফারহান তাদের বাধা দেন এবং হত্যার হুমকি দেন। সন্দেহ হওয়ায় তারা আরও কয়েকজনকে নিয়ে ঘরটিতে প্রবেশ করেন এবং সেখানে ঘরের মেঝেতে খনন করা একটি গর্তে মরদেহ পুড়তে দেখেন। তারা ফারহানকে আটক করেন এবং পুলিশকে খবর দেন। আটক হওয়া ফারহান আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি এলাকায় চিহ্নিত মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত। আখাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীনূর ইসলাম বলেন, মরদেহটির অধিকাংশ অংশ পুড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে সিআইডি টিম এসেছে। হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটনে আখাউড়া থানা ও সিআইডি টিম কাজ করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ফারহান রনি এর আগেও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন। তার মাদক কারবারের কারণে এলাকায় বহুবার সমস্যা তৈরি হয়েছে। এমন একটি নৃশংস ঘটনায় তিনি জড়িত থাকায় গ্রামবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।