সম্পদ আহরণ ও বণ্টনের বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এটি অর্থনীতির মৌলিক বিষয়। সম্পদ আহরণ ও বণ্টনে সুষম নীতিমালা গ্রহণ অর্থনৈতিক কর্মকা-ের অন্যতম লক্ষ্য। প্রচলিত অর্থনীতি এ বিষয়ে অনেক অগ্রসর হলেও সম্পদ সমবণ্টনের বিষয়ে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে দুনিয়ায় সম্পদ বণ্টন নিয়ে অনেক অশান্তির জন্ম হয়েছে। যুগে যুগে সম্পদ বণ্টন নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন সময়ে বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইসলাম এ বিষয়ে অতি সুন্দর নীতিমালা নির্ধারণ করেছে। ইসলামী অর্থনৈতিক আদর্শ সম্পদ আহরণ ও বণ্টনে সাম্য ও ন্যায্যতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আমরা যদি কুরআনে ঘোষিত নীতিমালা বিবেচনা করি, তা হলে সম্পদ বণ্টনের পদ্ধতিতে আমরা অনেক লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য জানতে পারি। আর এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ইসলাম দিয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা।
একটি বাস্তবসম্মত অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা : সম্পদ বণ্টনের ইসলামী নীতির প্রথম লক্ষ্য হলো, এর মাধ্যমে দুনিয়াতে এমন একটি নিরপেক্ষ এবং বাস্তবসম্মত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করা, যার ফলে যে কেউ কোনো বাধা ছাড়াই তার শক্তি-সামর্থ্য, ইচ্ছা ও পছন্দমতো স্বাভাবিকভাবে কর্মতৎপরতা চালিয়ে যেতে পারে এবং এতে সে সফলকাম হতে পারে। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় সম্পদ বণ্টনে অনেক সময় বাইরের পরিবেশ বা শক্তি এটিকে সমতা বা বাস্তবভিত্তিক সম্পন্ন করতে দেয় না। ইসলাম এ ক্ষেত্রে কোনো অপপ্রয়োগের সুযোগ রাখেনি। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে বলেছেন : ‘তোমার রবের রহমত কি এরা বণ্টন করে? আমিই বণ্টন করে রেখেছি তাদের জীবিকা পার্থিব জীবনে তাদের মধ্যে এবং তাদের একজনকে অন্যজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, যাতে একে অন্যকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে।’ (সূরা যুখরুফ, ৪৩ : ৩২)।
সম্পদ ব্যক্তি তার খেয়াল-খুশিমতো উপার্জন ও ভোগ করতে পারে না। ইসলাম অন্যায়ভাবে সম্পদ অর্জনে উৎসাহিত করে এবং পারস্পরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ব্যবসা করার তাগিদ দেয়। আর এই নীতি বাস্তবসম্মত একটি অর্থব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা অবৈধ পন্থায় একে অপরের অর্থসম্পদ ভোগ-ভক্ষণ কর না। তবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে তোমাদের মাঝে লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্য হতে পারে।’ (সূরা আন-নিসা, ৪ : ২৯)
একটি বাস্তসম্মত অর্থব্যবস্থার জন্য আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন। কেননা, সুদ জুলুমের অন্যতম হাতিয়ার এবং সুদ অন্যায়-অবিচার এবং শোষণের পথকে প্রসারিত করে। সুদের ফলে অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায় এবং সামাজিক কল্যাণ ও অগ্রগতির পথ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই আল্লাহ সুদকে অবৈধ বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ করেছেন এবং অবৈধ করেছেন সুদ।’ (সূরা আল-বাকারা, ২ : ২৯)
ইসলাম এমন এক অর্থ ও লেনদেনের নীতি মেনে চলে যেখানে লেনদেন হতে হবে লিখিত এবং সাক্ষী দ্বারা নিশ্চিত। যাতে অর্থনৈতিক লেনদেন বা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের মতভেদ বা বিরোধের সৃষ্টি না হয়। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমরা পরস্পরের মধ্যে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য লেনদেনের (ঋণ দেয়া নেয়ার) ফয়সালা করবে, তখন তার দলিল দস্তাবেজ লিখে নাও। যদি তোমরা ভ্রমণরত থাক আর (ঋণ লেনদেনের দলিল দস্তাবেজ লেখার জন্য) কোনো লেখক না পাও, তবে সাথে সাথে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় এমন বস্তুবন্ধক রেখে কার্য সম্পাদন কর।’ (সূরা আল-বাকার, ২ : ২৮২-২৮৩)
প্রত্যেককে সঠিকভাবে তার প্রাপ্য দেয়া : সম্পদ বণ্টনে ইসলামী নীতির দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, প্রত্যেককে তার ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা। অন্যান্য অর্থপদ্ধতির চেয়ে ইসলামে সম্পদের এ অধিকার খানিকটা ভিন্ন। বস্তুবাদী অর্থব্যবস্থায় সম্পদ লাভের একটাই উপায় এবং তা হলো উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করা। অর্থাৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যেসব উপাদান ক্রিয়াশীল, কেবল তারাই সম্পদে ভাগ বসাতে পারে, অন্য কেউ নয়। বিপরীতপক্ষে, এ ক্ষেত্রে ইসলামের নীতিমালা হচ্ছে, সম্পদের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা নিজে এবং সম্পদ কিভাবে ব্যবহার হবে তার নীতি তিনিই একা নির্ধারণ করেন। তাই ইসলামী নীতি অনুসারে সম্পদ সৃষ্টির সাথে যারা জড়িত তারাই কেবল সম্পদে তাদের অধিকার রাখেন এমন নয়, বরং যাদের সাহায্য করাকে আল্লাহ তাদের ওপর বাধ্যতামূলক করেছেন তারাও এ সম্পদে অধিকার রাখেন।
মানুষের সম্পদে যাদের অধিকার আছে তাদের কয়েকজন হলেন-দরিদ্র, অসহায়, অভাবী, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। সম্পদ যারা গড়েন প্রথমে তারা তাদের অংশ পাওয়ার পর অন্যরা, যাদের সম্পদ দান করার কথা আল্লাহ বলেছেন, তাদের সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ দিতে হবে। এটা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সম্পদশালী মানুষের প্রতি তাঁর নির্দেশ। মহাগ্রন্থ কুরআনের ভাষ্য হচ্ছে : ‘আর তাদের সম্পদে হক নির্ধারিত আছে প্রার্থী-অপ্রার্থী (যাঞ্চাকারী ও বঞ্চিতের) নির্বিশেষে সবার।’ (সূরা মা’আরিজ, ৭০ : ২৪-২৫)
তাই এ কথা স্পষ্ট যে, সম্পদ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সম্পদের মালিক (আহরণকারী হিসেবে) একাই সম্পদে তার অধিকার রাখে না, এই সম্পদে অভাবী ও দরিদ্র মানুষের হকও নির্ধারিত আছে। দুনিয়ায় সব মানুষের ধন-সম্পদ সমান নয়। এখানে একজনকে অপরজনের ওপর নির্ভরশীল করে রাখা হয়েছে। যার সম্পদ নেই, তাকে সম্পদ দেয়ার জন্য সম্পদশালীদের দায়িত্ব রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের কিছু লোককে অপর কিছু লোকের তুলনায় অধিক জীবিকা দিয়েছেন। যাদের বেশি দেয়া হয়েছে, তারা তাদেরই এই জীবিকা এই ভয়ে তাদের অধীনস্থ ভৃত্যদের প্রতি প্রত্যাবর্তন করাতে চায় না যে, এই জীবিকার ক্ষেত্রে তারা উভয়ই সমান সমান অংশীদার হয়ে যাবে। তা হলে কী আল্লাহর অনুগ্রহই তারা অস্বীকার করছে।’ (সূরা আন-নাহল, ১৬ : ৭১)
‘তোমাদের একজনের চেয়ে আরেকজনকে আল্লাহ যা কিছু বেশি দিয়েছেন, তোমরা তার জন্য লোভ কর না। যা পুরুষরা উপার্জন করেছে, সে অনুযায়ী তাদের অংশ রয়েছে আর যা নারীরা উপার্জন করেছে, সে অনুযায়ী তাদের অংশ নির্দিষ্ট। আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ লাভের জন্য প্রার্থনা কর। অবশ্য আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞান রাখেন।’ (সূরা আন-নিসা, ৪ : ৩২)
ইসলামী অর্থনীতি সমাজের সবার কল্যাণের জন্য কাজ করে। সমাজে যেমন রয়েছে ধনী, সচ্ছল মানুষ, তেমনি রয়েছে অসহায়, ফকির, মিসকিন ও ঋণগ্রস্ত মানুষ। সমাজে আর্থিকভাবে অসহায় ও দুর্বল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামের অর্থনৈতিক বিধান উৎকৃষ্ট উদাহরণ স্থাপন করেছে। এ জন্য মহান আল্লাহ জাকাতের বিধান দিয়েছেন। যাতে সম্পদ ধনীদের কাছ থেকে গরিব ও অসহায় মানুষের কাছে স্থানান্তরিত হতে পারে। এ জন্য আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘এসব সদকা (জাকাত) তো আসলে ফকির ও মিসকিনদের জন্য, ওইসব লোকদের জন্য যারা সদকা (জাকাতের) কাজে নিযুক্ত, আর তাদের জন্য যাদের মন জয় করা দরকার। (তা ছাড়া এসব) দাসমুক্ত করা, ঋণগ্রস্তদের সাহায্য করা, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের খেদমতে ব্যবহার করার জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা ফরজ। আর আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং তিনি পরম জ্ঞান-বুদ্ধির মালিক।’ (সূরা তওবা, ৯ : ৬০)।
সম্পদ পুঞ্জীভূত করাকে নির্মূল করা : ইসলামী বিধান মতে, সম্পদ বণ্টনের তৃতীয় উদ্দেশ্য হলো, সম্পদকে গুটিকতেক মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত না রেখে সম্ভব অনুযায়ী সমাজের বিভিন্ন লোকের মাঝে তাকে ছড়িয়ে দেয়া, যাতে বাস্তবিকপক্ষে, সমাজের ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধানকে যতটা সম্ভব দূর করা যেতে পারে। সম্পদের যে প্রাথমিক উৎস তার ওপর একচেটিয়া কারো নিয়ন্ত্রণ ইসলাম পছন্দ করে না, বরং সমাজের প্রতিটি মানুষ যাতে কোনো সম্পদ থেকে উপকৃত হতে পারে তার ব্যবস্থা করে ইসলাম। যেমন খনিজ, বন-বনানী, আবাদহীন খালি জমি, নদী, সাগর ইত্যাদি সম্পদের প্রাথমিক উৎস। প্রতিটি মানুষ তার সামর্থ্য ও শ্রম দ্বারা এসব সম্পদ ব্যবহার করতে পারবে, এগুলোর ওপর কারো একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে : ‘আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তার রাসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রাসূলের, তার আত্মীয়-স্বজনের, ইয়াতিমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্য যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তশালী কেবল তাদের মধ্যে পুঞ্জীভূত না হয়।’ (সূরা হাশর; ৫৯ : ৭)
তবে যেখানে সম্পদ উৎপাদনে মানুষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয় এবং মানুষ তার শ্রম, মেধা ও মনন দিয়ে কোনো জিনিস বা পণ্য উৎপাদন করে, ইসলাম তার মেধা ও শ্রমকে যথাযথ মূল্য দেয় এবং উৎপাদিত পণ্যের ওপর তার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। প্রত্যেকে তার বিনিয়োজিত শ্রম ও যোগ্যতা অনুসারে তার প্রাপ্য পাওয়ার অধিকার রাখে। এ ব্যাপারে আল-কুরআনের বক্তব্য হচ্ছে : ‘আমিই বণ্টন করে রেখেছি তাদের জীবিকা পার্থিব জীবনে তাদের মধ্যে এবং তাদের একজনকে অন্যজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, যাতে একে অন্যকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে।’ (সূরা : যুখরুফ, ৪৩ : ৩২)
অর্থসম্পদ লাভের ভ্রান্ত উপায় ও পন্থা নিষিদ্ধ করার সাথে সাথে আল্লাহ বৈধ পন্থায় উপার্জিত সম্পদও জমিয়ে রাখাকে তীব্রভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য, যে মানুষের দোষ প্রচার করে এবং গালাগাল করে। যে সম্পদ পুঞ্জীভূত করেছে এবং গুনে গুনে রেখেছে। সে মনে করে তার অর্থ-সম্পদ চিরদিন তার কাছে থাকবে। কখনো নয়। সে তো চূর্ণবিচূর্ণকারী স্থানে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (সূরা : হুমাযা, ১০৪ : ১-৪)
‘সেইসব লোককে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও, যারা সোনারূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, অথচ তা আল্লাহর পথে খরচ করে না।’ (সূরা: তওবা, ৯ : ৩৪)। ‘যারা আল্লাহপ্রদত্ত অনুগ্রহের ক্ষেত্রে কার্পণ্য করে, তারা যেন মনে না করে যে, এটা তাদের পক্ষে ভালো। না বরঞ্চ এটা তাদের জন্য অত্যন্ত খারাপ। তারা কৃপণতা করে যা কিছু সঞ্চয় করেছে, কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলার রশি হয়ে দাঁড়াবে।’ (সূরা আলে-ইমরান, ৩ : ১৮০)
উপরে সম্পদ বণ্টনের যে তিনটি ইসলামী নীতি ও লক্ষ্য বর্ণনা করা হলো, তার প্রথমটি ইসলামী অর্থনীতির সাথে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির তফাৎকে নির্দেশ করে, তৃতীয়টি পুঁজিবাদের সাথে ইসলামী অর্থব্যবস্থার ফারাক স্পষ্ট করে এবং দ্বিতীয়টি উভয় ব্যবস্থার সাথে ইসলামী ব্যবস্থার পার্থক্যকে নির্দেশ করে।
অর্থব্যবস্থায় অপব্যয় ও অপচয় রোধ করা : যথার্থ উপায়ে বা বৈধ পথে সম্পদ অর্জন করাই শুধু ইসলামী অর্থনীতির কাক্সিক্ষত উদ্দেশ্য নয়, বরং এই অর্থ অপচয় ও অপব্যয় রোধও ইসলামের লক্ষ্য। অর্থকে অবৈধ উপায়ে উড়িয়ে দেয়া, কিংবা বিলাসিতা, আমোদ-প্রমোদ ও আনন্দ উপভোগে ব্যয় করা এবং দিন দিন জীবনযাপনের মান বাড়ানোর একমাত্র ধান্ধায় বল্গাহীন অর্থ ব্যয় করাকে ইসলাম তীব্রভাবে নিন্দা করেছে। আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘অর্থ ব্যয়ে সীমালঙ্ঘন কর না। আল্লাহ অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আনআম, ৬ : ১৪১)। ‘অপব্যয় কর না। অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার মনিবের চরম অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা বনি-ইসরাইল, ১৭ : ২৬-২৭)
তবে ব্যয়ের বেলায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। অপব্যয় যেমন করবে না, তেমনি খরচের বেলায় মানুষ কৃপণতাও করবে না। কেননা, মানুষের অর্থ-সম্পদে তার পরিবার-পরিজন এবং অন্যদের অধিকার রয়েছে। তাই সবার অধিকারের প্রতি খেয়াল রাখতে গিয়ে তাকে পরিমিত ব্যয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কৃপণতা করা যাবে না। কেননা, আল্লাহ কৃপণতা পছন্দ করেন না। আল্লাহ বলেন, ‘আর নিজের হাতকে (কৃপণতা করে) গলায় বেঁধে রেখো না, আবার সম্পূর্ণ প্রসারিতও করে দিও না। এমনটি করলে তোমরা তিরস্কৃত হবে এবং খালি হাতে বসে পড়বে।’ (সূরা বনি-ইসরাইল, ১৭ : ২৯)। ‘এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারাই) যারা ব্যয় করার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনও করে না, আবার কৃপণতাও করে না, বরঞ্চ তারা উভয় চরম পন্থার মধ্যবর্তীতে অবস্থান করে।’ (সূরা ফোরকান, ২৫ : ৬৭)
পরিশেষে বলা যায়, ইসলাম সম্পদ অর্জন এবং ব্যবহার বা প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে ইনসাফপূর্ণ এবং ন্যায়সঙ্গত বিধান দিয়েছে তা ইসলামী অর্থনীতির মৌলিক বিষয়। মানুষের জন্য একটি কল্যাণমূলক এবং সুষম অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং এর মাধ্যমে মানুষকে জুলুম, শোষণ ও যাবতীয় প্রতারণার হাত থেকে রক্ষার জন্য ইসলামে সম্পদ আহরণ ও বণ্টনের মূলনীতি অবশ্যই মেনে চলা উচিত।
লেখক : কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং সাবেক অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি.