শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ফ্যাসিস্ট সরকার ১৫ বছরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে : টুকু ছিনতাই প্রতিরোধে ট্রাফিক সার্জেন্টদের দেয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র অস্ত্র : ডিএমপি কমিশনার রাজধানীতে গোলাপি বাসে যাত্রী পরিবহন শুরু হাসিনার বিচার দাবিতে শাহবাগ অবরোধ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে চীনের কাছে কেন হারছে ভারত? ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের আইকন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ বিশৃঙ্খলায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আছে কি না জানার চেষ্টা করব : মেজর হাফিজ টানা পাঁচ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার শেষ মুহূর্তের গোলে সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে কি না দেখে নিন

ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের আইকন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ

শাহ্জাহান সাজু:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের আইকন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখন শুধু তিন তলা বাড়িটির ক্ষুদ্র একটি অংশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটির আশপাশে থাকা বাকি স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের ঘোষণার পাল্টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘বুলডোজার মিছিলের’ ডাক দেওয়ার পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফটক ভেঙে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুরের পর আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। পরে বুলডোজার ও ক্রেন দিয়ে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রথমে ছাত্র- জনতা বাড়িটির ওপর তলায় এবং পরে নিচ তলায় আগুন দেয়। এসময় বাড়ির সামনে বুলডোজার ও ক্রেন দেখা যায়। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে বাড়িটি ভাঙা শুরু হয়। ভাঙচুর-আগুনের পর এস্কেভেটর দিয়ে ভাঙা হয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি। এর আগে রাত ৮টার পর থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে জড়ো হয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড়ও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে জনতা। বাড়িতে প্রবেশের মুখে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভেতরে বড় একটি নারিকেল গাছও এস্কেভেটর দিয়ে ভেঙে ফেলতে দেখা যায়।
মূলত, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদানের ঘোষণার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা হুঁশিয়ারি দেন, শেখ হাসিনা কোনো বক্তব্য দিলে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স বুধবার রাত ৯টার দিকে ‘লং মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল।
বাড়ির কাঠামো খুলে নিয়ে যাচ্ছে অনেকে বিবিসি’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ে বাড়িটিতে বৃহস্পতিবারও ভাঙচুর চলেছে। ভবনের ভেতর থেকে স্টিল, লোহা, টিন, কাঠসহ বিভিন্ন জিনিস ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা গেছে অনেককে। সরেজমিন দেখা গেছে, ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে শত শত মানুষ। তাদের কেউ কেউ স্লোগান দিচ্ছিলেন। ভবনে ভাঙচুরের শব্দ। এ সময় কাউকে কাউকে ভেতর থেকে জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। ভাঙারি পণ্য হিসেবে বিক্রয় করা যাবে- এমন নানা অবকাঠামো নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। ঘটনাস্থল থেকে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা জানান, একটি ভবনের অর্ধেক এবং আরেকটি ভবনের একাংশ ভেকু দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে একটি পক্ষ বলছে, হাসিনা যে অন্যায় করেছে এবং সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করেছে, তার প্রতিবাদে তারা ভবনের এসব অংশ খুলে নিচ্ছে। আরেকটি পক্ষ বলছে, দম্ভের পতনের স্মৃতি হিসেবে তারা ইট কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তবে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ স্থানটি থেকে ভেকু ও বুলডোজার সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানান বিবিসি সংবাদদাতা। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সেনাবাহিনীর সদস্যদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরে বিক্ষুব্ধ জনতা ওবায়দুল কাদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর শুরু করে। ইতিমধ্যে বাড়িটিতে আগুনও দেয়া হয়েছে। আগুনে একটি গাড়ি পুড়ে গেছে।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারকে ঘিরে ভাঙচুরের মুখে পড়ে রাজধানীর ধানম-ি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনসহ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, হাসানাত আব্দুল্লাহ ও মাহবুবুল আলম হানিফসহ বেশ কয়েকজন নেতার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করা হয়। পলাতক অবস্থায় তার এই বক্তব্য প্রচারকে ঘিরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়াদের মাঝে। দিনেই ঘোষণা দেয়া হয় শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের সময় ধানমন্ডির ৩২-এর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। রাত আটটার দিকে দলে দলে শিক্ষার্থী ও বিক্ষুব্ধ মানুষ ধানমন্ডি ৩২-এর দিকে যেতে থাকেন। ফটক ভেঙে শিক্ষার্থী ও জনতা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। তাদের কেউ কেউ হাতে থাকা লাঠি ও ভারি বস্তু দিয়ে স্থাপনার বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর করেন। বুলডোজার এনে বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেও ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙা হয়। ভবনটির ভেতর থেকে বই, স্টিল, লোহা, টিন ও কাঠসহ বিভিন্ন জিনিস ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
হাসিনার সুধা সদন পুরোটাই ধ্বংসস্তূপ: ধানমন্ডি এলাকার ৫ নম্বর সড়কে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে গত বুধবার রাতেই আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা। এরপর থেকে হাসিনার সুধা সদন পুরোটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাড়ি থেকে বিভিন্ন ধরনের মালামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সুধা সদনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়িটির বিভিন্ন রুমে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে প্রতিটি রুমে। বেশ কিছু রুমে এখনো আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। বিভিন্ন রুমে প্রচ- রকমের আগুনের তাপ লক্ষ্য করা গেছে। আগুনের তাপে ভবনের মধ্যে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুড়ে যাওয়া এই ভবনের ভেতর থেকেই অনেককে স্টিল, লোহা, টিন, কাঠসহ বিভিন্ন জিনিস ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। কেউ এসির যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। ভাঙারি পণ্য হিসেবে বিক্রয় করা যাবে এমন নানা অবকাঠামো নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। এর আগে গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৫ নম্বর সড়কে অবস্থিত ভবনটিতে আগুন দেওয়া হয়। কাছাকাছি সময়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায় ছাত্র-জনতা। পরে ক্রেন, বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় তিনতলা ভবনটি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সুধাসদন পুরোপুরি খালি ছিল। গণভবনে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা এই বাড়িতে থাকতেন। গতকাল নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদানের ঘোষণা দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। এরপর রাত থেকে শুরু হয় ভাঙচুর। গত রাতে প্রথমে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুরের বাড়িতে আগুন দেয় ছাত্র-জনতা। পরে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দেয়। তবে সেখানে ছাত্র-জনতার কাউকে দেখা যায়নি। দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। বাড়িটি আগুনে পুড়লেও সেখানে যায়নি কোনো ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে উত্তেজিত জনতার ভিড় থাকলেও ৫ নম্বরের বাড়িতে তেমন ভিড় লক্ষ করা যায়নি। হাতে গোনা কিছু লোক বাড়ির মধ্যে অক্ষত কী রয়েছে তা খুঁজছেন। এছাড়া বেশ কিছু মিডিয়া কর্মীকে লক্ষ্য করা গেছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com