শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৯ অপরাহ্ন

কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির ৮ আমল

মুফতি কাসেম শরীফ
  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২১

কর্মবীর মানুষই জীবনে সফল হয়। অকর্মণ্য লোক পরিবার, সমাজ ও দেশের বোঝা; উন্নয়ন-চিন্তার প্রধান অন্তরায়। দুনিয়া-আখেরাতের কোথাও অলস, কর্মবিমুখ ও নিষ্ক্রিয় মানুষের মূল্য নেই। তাই অলসতার চাদর খুলে আমাদের আমল ও কর্মের ময়দানে বেরিয়ে আসতে হবে। আল্লাহর দেওয়া শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। অলসতা দূর করা, ইবাদতে প্রাণবন্ত হওয়া এবং কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কোরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত কয়েকটি আমলের কথা আলোচনা করছি।
এক. কপটতা ও অতিরঞ্জিত আশা পরিহার করুন। অন্যায্য উচ্চাশা অলসতা তৈরি করে। আল্লাহ সম্পর্কে অতি আশান্বিত হয়ে অনবরত গুনাহের কাজ করে যাওয়া স্পষ্ট ভ্রান্তি। ইবাদতে মনোযোগী হতে আমাদের আশাও রাখতে হবে, ভয়ও পেতে হবে। আল্লাহ পরম দয়ালু তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে তার অবাধ্য হলে মানুষ ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। কারণ আল্লাহ শুধু দয়ালুই নন, কঠোর শাস্তিদাতাও বটে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমার বান্দাদের বলে দাও, আমি পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু। আর আমার শাস্তিও অতি মর্মন্তুদ।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৪৯-৫০)
দুই. কালকের জন্য কাজ রেখে দেওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। এখনই কল্যাণকর ও সওয়াবের কাজে মনোযোগ দিন। বুড়ো হলে ইবাদত করব, পুরোপুরি আল্লাহর আনুগত্য করব এসব চিন্তা পরিহার করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আকাশসমূহ ও জমিনের সমান। তা মুত্তাকিদের জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সাতটি বিষয়ের আগে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের সব কিছু ভুলিয়ে দেবে? নাকি ওই ঐশ্বর্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের জন্য অপেক্ষা করছ, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? নাকি সেই বার্ধক্যের অপেক্ষায় আছো, যা তোমাদের অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, যে কি-না আসন্ন যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে সেসবের মধ্যে সর্ব নিকৃষ্ট। নাকি কিয়ামতের অপেক্ষা করছ, যা সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত হবে? (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৬)
তিন. পবিত্র কোরআনসহ প্রেরণা ও উদ্দীপনা জাগানিয়া বইপুস্তক পড়ুন। মহানবী (সা.), আম্বিয়ায়ে কেরাম ও বিখ্যাত মনীষীদের জীবনসংগ্রামের কথা জানুন। অলসতা দূর করতে খুব বেশি কাজে লাগবে এগুলো। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘পূর্বপুরুষদের কাহিনীতে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। এটি (কোরআন) মিথ্যা রচনা নয়; বরং তা আগের ধর্মগ্রন্থগুলোর সমর্থক। সবকিছুর বিশদ বিবরণ এবং ইমানদার সম্প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশ ও রহমত।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১১১)
চার. তৎপর, উদ্যমী ও কর্মচ ল মানুষের সঙ্গে ওঠা-বসা করুন। নেককার আল্লাহওয়ালা মানুষের সংস্পর্শ গ্রহণ করুন। এতে নিজের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)
পাঁচ. হিম্মত ও মনোবল বৃদ্ধি করুন। ভাবুন, অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা ব্যর্থ মানুষের স্বভাব। প্রবাদ আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। সুতরাং আপনি কেন শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে ব্যর্থদের কাতারে শামিল হবেন সেটা একবার ভাবুন। শয়তানের কাছ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চান এবং ক্ষমা প্রার্থনা করুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহর কাছে শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন থেকে বেশি উত্তম ও প্রিয়। যেখানে তোমার কল্যাণ রয়েছে তাতে তুমি যতœবান হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও; হিম্মতহারা হয়ো না। (মুসলিম, হাদিস : ৪৮২২)
ছয়. অহেতুক কাজ পরিত্যাগ করুন। অবাধ যোগাযোগের এ যুগে আমরা প্রচুর সময় নষ্ট করি। অহেতুক কাজ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘একজন ব্যক্তির ইসলামের পরিপূর্ণতার অন্যতম লক্ষণ হলো, তার জন্য জরুরি নয় এমন কাজ সে ত্যাগ করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২২৩৯)
সাত. ফজরের নামাজের প্রতি যতœবান হোন। কেননা অলসতার কারণে ফজরের নামাজ না পড়তে পারলে এটাই হবে সারা দিনের আমলহীনতা, গুনাহমুখিতা ও অলসতার সূচনা। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায়, তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গিঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গিঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও। অতঃপর সে যদি জেগে ওঠে আল্লাহর জিকির করে, তাহলে একটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি অজু করে, তবে তার আর একটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামাজ পড়ে, তাহলে সবগুলো গিঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। নাহয় সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে।’ (বুখারি, হাদিস : ১১৪২)
আট. অলসতা ও উদাসীনতা থেকে মুক্তির জন্য দোয়া পড়ুন। অলসতা, চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযুবিকা মিন দালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’
অর্থ : হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com