সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১৮ অপরাহ্ন

বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির নিহত হওয়ার কারণ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

গত শুক্রবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির খবর সংগ্রহে ছিলেন বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির। নিজের মোবাইল ফোনে ধরা পড়ে এক পক্ষের গুলির দৃশ্য। তা দেখে গুলিবর্ষণকারী ও তার সহযোগীরা চড়াও হয় মোজাক্কিরের ওপর। তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। ব্যর্থ হয়ে তার ওপর গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। গুলিবিদ্ধ মোজাক্কিরকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার তাকে ঢাকায় আনা হয়। ওই দিন রাতেই ঢাকা মেডিকেলে তার মৃত্যু হয় ওদিকে সাংবাদিকের মৃত্যুতে স্থানীয় সাংবাদিকরা গতকাল বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তারা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন। গুলির ঘটনার তিনদিন পার হলেও গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। গ্রেপ্তার হয়নি কেউ। এতে নিহত সাংবাদিকের পরিবার ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিহত সাংবাদিক মোজাক্কিরের বড় ভাই নুরুদ্দিন মুহাদ্দিস মানবজমিনকে বলেন, আমার ভাই কোনো রাজনৈতিক কিংবা কোনো দলের অনুসারী ছিল না। সে পড়াশোনা শেষ করে সাংবাদিকতা করতো। তাকে কেন গুলি করে মারা হলো। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। যাতে আর কোনো সাংবাদিক কিংবা নিরীহ মানুষকে এভাবে মরতে না হয়। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে মোজাক্কিরের পরিবার। নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে সাংবাদিক মোজাক্কির নিহত হওয়ার ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। ঢাকা থেকে তার লাশ গ্রামে আনা হয়েছে। দাফন শেষ হোক। পরে তার পরিবারের কেউ মামলা করলে, মামলা গ্রহণ করা হবে। আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। প্রশাসন মাঠে কাজ করছে। ওই দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় এক পক্ষ থানায় মামলা করেছে বলে জানান পুলিশ সুপার। গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি কোম্পানীগঞ্জের চরফকিরা ইউনিয়নের চাপরাশীরহাট বাজারে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আব্দুল কাদের মির্জা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার তিনদিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এরইমধ্যে অস্ত্র হাতে একজনের ছবি ভাইরাল হয়েছে। তবে ওই অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ-মানববন্ধন: বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দোষীদের বিচার চেয়ে অনেকে মন্তব্য করেছেন। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন অনেকেই। এদিকে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির নিহতের ঘটনায় খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে নোয়াখালীতে কর্মরত সাংবাদিকরা। গতকাল দুপুরে নোয়াখালী প্রেস ক্লাব, কোম্পানীগঞ্জ উপজলো ও চাটখিল উপজেলায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে খুনের সঙ্গে জড়িত সকল আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে সমাবেশে বক্তারা বলেন, মোজাক্কিরের খুনিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারে প্রশাসন ব্যর্থ হলে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মোজাক্কিরের লাশ নিয়ে কাউকে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। তারা বলেন, আগেও অনেক সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় এ ধরনের সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। সমাবেশে বক্তারা সাংবাদিক মোজাক্কিরের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বখতিয়ার শিকদার, দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি ও প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আলমগীর ইউসুফ, প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দেশ রূপান্তরের জেলা প্রতিনিধি জামাল হোসেন বিষাদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি ও যায়যায়দিনের স্টাফ রিপোর্টার আবু নাছের মঞ্জু, এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের জেলা প্রতিনিধি ফুয়াদ হোসেন, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহবুবুর রহমানসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। একই দাবিতে গতকাল কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট বাজারের বঙ্গবন্ধু চত্বরে এ মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এইচএম মান্নান মুন্না, প্রেস ক্লাব কোম্পানীগঞ্জের সভাপতি হাসান ইমাম রাসেল, প্রেস ক্লাব কোম্পানীগঞ্জের সেক্রেটারি গিয়াস উদ্দিন রনি প্রমুখ। তারা বলেন, রাজনৈতিক সহিসংসতার বলি হয়েছেন সাংবাদিক মোজাক্কির। এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী তারা এখন মোজাক্কিরকে নিয়ে অপরাজনীতিতে লিপ্ত হওয়ার পাঁয়তারা করছেন। নিহত সাংবাদিক কোনো দলের ছিলেন না। তিনি ওই দিন তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে ঘটনাস্থালে গিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেছেন। তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে চাটখিল উপজেলার সাংবাদিকরা। চাটখিল পৌর শহরের প্রধান সড়কে গতকাল দুপুরে অনুষ্ঠিত চাটখিল উপজেলা প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশে উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল কাননের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, প্রেস ক্লাব সভাপতি মিজানুর রহমান বাবর, সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি আবু তৈয়ব, সাংবাদিক ইয়াছিন চৌধুরী, আনিস আহমেদ হানিফ, জাহাঙ্গীর আলম, স্বপন পাটোয়ারী, সাইফুল ইসলাম রিয়াদ, নজরুল দেওয়ান, মহিউদ্দিন বাবু প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা সাংবাদিক মোজাক্কিরের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com