শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন

কার্টুনিস্ট কিশোরের শরীরে নির্যাতনের কোনও চিহ্ন পায়নি মেডিক্যাল বোর্ড

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ জুন, ২০২১

কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের শারীরিক অবস্থা জানতে গঠিত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পায়নি। রবিবার (৬ জুন) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক গত ২০ মার্চ ঢামেকের নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমী, অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ফখরুল আমিন খান ও মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. হাফিজ সর্দার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনে কিশোরের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন না পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন তারা।
গত ১০ মার্চ কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অজ্ঞাত সদস্যদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। গত ১৪ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ, কান, পা ও শরীরের যেখানে আঘাত পেয়েছেন বলে কিশোর জানিয়েছিলেন, সেগুলো পরীক্ষা করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালককে নির্দেশ দেন। অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ৫ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর গ্রেফতার হন। কিন্তু তার তিনদিন আগে ২ মে বিকাল পৌনে ছয়টায় বাসা থেকে সাদা পোশাকধারী ১৬ থেকে ১৭ জন লোক তাকে মুখোশ পরিয়ে, হাতকড়া লাগিয়ে নির্জন-অচেনা জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর ২ মে থেকে ৩ মে পর্যন্ত তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগে কিশোর বলেন, ‘গত বছরের ২ মে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাসার কলিং বেলে আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুললেই অপরিচিত এক লোক আমাকে বলেন দরজা খোলেন না কেন? পরনের লুঙ্গি খুলে প্যান্ট পরে নেন। সাথে একটা ভালো শার্ট পরেন। আমি পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তারা আমাকে পরিচয় দেয় নাই। আলাপ-আলোচনায় তাদের একজনকে জসিম বলে ডাকতে শুনি। সবাই ঘরে ঢুকেই তল্লাশি শুরু করেন। তারা আমাকে কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারেনি। বাসা থেকে আমার মোবাইল ফোন, সিপিইউ ও পোর্টেবল যত ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ছিল তা অবৈধভাবে নিয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামানো হয়, তখন বাসার সামনে ছয় থেকে সাতটি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। আমার বাসার সামনে অনেক লোকজন জড়ো হয় এবং একটি গাড়ি তে আমাকে ওঠানো হয়। আমি তখন প্রচ-ভাবে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু তারা গাড়ি তে অনেক জোরে জোরে শব্দ করে গান-বাজনা বাজাচ্ছিল। হয়তো আমার চিৎকার বাইরে শোনা যাচ্ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে আমি বুঝতে পারলাম- আমাকে পুরনো একটি স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ি র রুমে নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর প্রজেক্টরের মাধ্যমে একটির পর একটি কার্টুন আমাকে দেখানো হচ্ছিলো। সেগুলোর মর্মার্থ আমার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে। করোনা নিয়ে আমার কিছু কার্টুন দেখিয়ে বলে- কেন এগুলো আঁকছস? কার্টুনের চরিত্রগুলোর বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। একপর্যায়ে আমার কানে প্রচ- জোরে আঘাত করা হয়। এরপর আমি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়ি য়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাতের লাঠি দিয়ে আমার পায়ের হাঁটুতে আঘাত করা হয়। যন্ত্রণা ও ব্যথায় আমি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি।’ কিশোর বলেন, ‘এভাবে কয়েক দফা আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক টর্চার অত্যাচার চালায় তারা। পরবর্তীতে আমি নিজেকে র‌্যাব কার্যালয়ে দেখতে পাই। র‌্যাবের কার্যালয়ে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে আমার দেখা হয়। মুশতাক আহমেদ আলাপের সময় আমাকে জানান তাকেও বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ৬ মে আমাদের রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। কান দিয়ে পুঁজ পড়ে, হাঁটতে পারি না, হঠাৎ করে পড়ে যাই এবং শরীরে আরও নানাবিধ রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com