বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

কথাবার্তায় সতর্কতা

মো: আবদুল গনী শিব্বীর:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩০ জুলাই, ২০২১

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কেবল মানবজাতিকে বাকশক্তিসম্পন্ন করে সৃষ্টি করেছেন। দেহাবয়বে মানবজাতি অন্যান্য মাখলুকাতের চেয়ে যেমনিভাবে শ্রেষ্ঠ ঠিক তেমনিভাবে মেধা-মনন, বাকশক্তি, সাবলীল ও প্রাঞ্জল কথাবার্তায়ও শ্রেষ্ঠ। পরস্পরের আলাপচারিতা, কথোপকথন, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন, বক্তব্য ও বিবৃতি ইত্যাদি প্রকাশে কথাবার্তা বলতে হয়। প্রয়োজনীয় কথাবার্তায় মানুষের ব্যক্তিত্ব, রুচিবোধ, বংশীয় মর্যাদা, ব্যক্তির শ্রেণীগত অবস্থান প্রকাশ পায়। ইসলামে কথাবার্তার সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি রয়েছে। কটু কথা বলা, অশ্লীল বাক্যালাপ, অলীক কিংবা কাল্পনিক রোমাঞ্চকর কথাবার্তা, ধোঁকার জন্য কথা বলা, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা নিষেধ। উত্তম কথাবার্তা ইসলামে সদকা হিসেবে বিবেচিত। ইসলামের প্রকৃত অনুসারীরা কথাবার্তায় বেশ সতকর্তা অবলম্বন করেন। তারা এ কথা জানেন, প্রত্যেকটি কথার জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তারা এও জানেন, উত্তম কথা ব্যক্তির আমলনামায় পুণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে, বিপরীতে অসংলগ্ন, অশ্লীল, অপ্রয়োজনীয় কথা ব্যক্তির আমলনামায় পাপ হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে।
কথাবার্তায় সতর্কতা নিয়ে কুরআনের বর্ণনা : আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা (গিবত) করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে? বস্তুত তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত-১২)। তিনি আরো বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমানে পরিচালিত হয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হবে’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৩৬)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা করো’ (সূরা ইনফিতার, আয়াত : ১০-১২)। তিনি আরো বলেন, ‘আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেÑ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট-বড় কোনো কিছুই বাদ দেয়নি, সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারো প্রতি জুলুম করবেন না’ (সূরা কাহফ, আয়াত-৪৯)।
হাদিস শরিফের বর্ণনা : প্রখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিতÑ নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; না হয় চুপ থাকে’ (বুখারি ও মুসলিম)। আবু মূসা রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম মুসলিম কে?’ তিনি বললেন, ‘যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে’ (সহিহ মুসলিম)।
সাহাল ইবনে সায়াদ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (অঙ্গ জিভ) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (অঙ্গ গুপ্তাঙ্গ) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেবো’ (সহিহ বুখারি)। আবু আবদুুর রহমান বিলাল ইবনে হারেস মুজানি রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মানুষ আল্লাহ তায়ালার সন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তাঁর সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য সন্তুষ্টি লিখে দেন। পক্ষান্তরে মানুষ আল্লাহ তায়ালার অসন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তাঁর সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য অসন্তুষ্টি লিখে দেন’ (মুআত্তা মালেক, তিরমিজি, হাসান সহিহ)।
উকবাহ ইবনে আমের রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! কিসে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব? তিনি বললেন, ‘তুমি নিজ রসনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো। তোমার ঘর তোমার জন্য প্রশস্ত হোক। (অর্থাৎ অবসর সময়ে নিজ গৃহে অবস্থান করো) আর নিজ পাপের জন্য ক্রন্দন করো’ (তিরমিজি)। আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিতÑ নবী সা: বলেছেন, ‘আদম সন্তান যখন সকালে উপনীত হয়, তখন তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিভকে অত্যন্ত বিনীতভাবে নিবেদন করে যে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কারণ, আমাদের ব্যাপারসমূহ তোমার সাথেই সম্পৃক্ত। যদি তুমি সোজা সরল থাকো, তাহলে আমরাও সোজা-সরল থাকব। আর যদি তুমি বক্রতা অবলম্বন করো, তাহলে আমরাও বেঁকে বসব’ (তিরমিজি)।
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- একদা আল্লাহর রাসূল সা: বললেন, ‘তোমরা কি জানো, গিবত কাকে বলে?’ লোকেরা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন। তিনি বললেন, ‘তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তাই তার পশ্চাতে আলোচনা করা।’ বলা হলো- আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কী? তিনি বললেন, ‘তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তার গিবত করলে। আর তুমি যা বললে, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে’ (মুসলিম)।
এ কথা সবার জানা উচিত, যে কথায় উপকার আছে বলে স্পষ্ট হয়, সে কথা ছাড়া অন্য সব (অসঙ্গত) কথা হতে নিজ জিহ্বাকে সংযত রাখা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য। যেখানে কথা বলা ও চুপ থাকা দুটোই সমান, সেখানে চুপ থাকাটাই সুন্নত। কেননা, বৈধ কথাবার্তাও অনেক সময় হারাম অথবা মাকরুহ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। বেশির ভাগ এরূপই ঘটে থাকে। আর (বিপদ ও পাপ থেকে) নিরাপত্তার সমতুল্য কোনো বস্তু নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, ‘যে চুপ থাকে সে মুক্তি পায়’। আরেকটি হাদিসে এসেছে- রাসূল সা: অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছেন (মিশকাতুল মাসাবিহ)।
পরিশেষে আল্লাহ পাক আমাদের কথাবার্তায় সতর্কতা অবলম্বনপূর্বক যাবতীয় কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমীন। লেখক : মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সোনাপুর, নোয়াখালী




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com