গতকাল বুধবার ২৫ আগস্ট ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তুলনামূলক কম বৃষ্টি হওয়ার পরেও নগরীর অধিকাংশ এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। এসময় সড়কে যান চলাচল কমে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন অফিসগামী মানুষ। বিশেষ করে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা পড়েন বিপাকে। বৃষ্টিতে ভিজে অনেক কষ্ট করে তাদেরকে কারখানায় যেতে হয়। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নগরীর বিমানবন্দর এলাকার তুলনায় আজ মূল শহরতলীতে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। অন্যদিকে আমবাগান আবহাওয়া অফিসে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১১০ মিলিমিটার।
সামান্য এই বৃষ্টিপাতে নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, চকবাজার, খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ অধিকাংশ নিন্মাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। শুধু সড়কে নয়, অলিগলি উপচে বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটেও ঢুকে পড়ে পানি। বৃষ্টি শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা পরেও অধিকাংশ এলাকায় পানি জমে ছিল। জলাবদ্ধতার কারণে অফিসগামী মানুষ, পোশাক শ্রমিকরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। সড়কে পানি জমে যাওয়ায় রিকশা চলাচলও কমে যায়। এতে অনেকে সকালে পানি মাড়িয়ে পায়ে হেঁটে অফিসে গিয়েছেন। নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা সরওয়ার কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকালে বৃষ্টিতে বাসার সামনের গলিতে হাঁটুপানি জমে যায়। দুপুর পর্যন্ত সেখানে জলাবদ্ধতা ছিল। যে কারণে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাসা থেকে বের হতে পারিনি। সামান্য এই বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আরমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃষ্টিতে নগরীর বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, মুরাদপুর এলাকায় হাঁটু পানি জমেছে। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে রিকশা চলাচলও কমে যায়। বৃষ্টিতে বাসা থেকে বের হয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও গাড়ি পাইনি। পরে অনেক কষ্ট করে অফিসে এসেছি।’ একই অবস্থা আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার। ওই এলাকার বাসিন্দা আবছার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বৃষ্টিতে ওই এলাকায় হাঁটু পরিমাণ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তবে দুপুরের দিকে বৃষ্টি বন্ধ থাকায়। এখন ওই এলাকায় সড়ক থেকে পানি সরে গেছে।
ভারি বৃষ্টিতে নালায় তলিয়ে গেলেন যুবক:
বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রোতের টানে নগরের মুরাদপুর এলাকার নালায় তলিয়ে গেছেন এক যুবক। তার নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
বুধবার (২৫ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের লিডার বিপ্লব কুমার নাথ জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে মুরাদপুর এলাকায় এক ব্যক্তির নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে দ্রুত পাঁচ সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা যুবকের তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। বিকেল ৪টা পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি। বর্তমানে মুরাদপুরের আয়োজন রেস্তোরাঁর পাশে অভিযান চলছে।’
এদিকে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বুধবার ভোর রাত থেকে চট্টগ্রামে থেমে থেমে ভারি কিংবা মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে নগরের হালিশহর, আগ্রাবাদ, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, বাকলিয়া ও চান্দগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকার কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর পরিমাণ পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে যায়।
চট্টগ্রামের আমবাগান আবহাওয়া অফিসে গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১১০ মিলিমিটার। একই সময় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ মিলিমিটার।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। চট্টগ্রামের মূল শহরে বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে এবং উপকূলীয় এলাকায় একটু কম হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে চট্টগ্রামে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’