ইতিহাসের ঐতিহ্যের গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম। ইতিহাস আর ঐতিহ্য নিয়ে সবার নজরে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট সোনামসজিদ এলাকায় অবস্থিত প্রাচীন দারাসবাড়ি মাদ্রাসা ও মসজিদ। যা আজো কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে দারাসবাড়ি মাদ্রাসা নামে পরিচিত হয়ে আছে।
১৫০২ খ্রীষ্টাব্দে তৈরী এই মাদ্রাসাটি ১৯৭৫ সালে প্রতœতাত্ত্বিক বিভাগ খনন করে মাটির নীচ থেকে উদ্ধার করে। এটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলেও আজও অনিন্দ্য কাঠামো নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দর সংলগ্ন বালিয়াদিঘি গ্রামে অবস্থিত দারাসবাড়ি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এর ঐতিহ্য কালের স্বাক্ষী হয়ে পর্যটকদের নজর কাড়ছে। সীমান্ত ঘেঁষা পল্লীর এক নির্জন প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা মাদ্রাসাটি আনুমানিক ১০০ বছর মাটির নীচে দেবে ছিলো বলে প্রতœতত্ত্ববিদগণের ধারণা। বয়সের দিক থেকে এই মাদ্রাসাটি ছোট সোনামসজিদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিঃমিঃ উত্তরে ছোট সোনামসজিদ পার হয়ে অল্প কিছু দুরে কর্মব্যস্ততার সোনামসজিদ স্থল বন্দরের পাশে দারাসবাড়ি মাদ্রাসা ও মসজিদ অবস্থিত। যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে মিনিবাস, মাইক্রোবাস, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে এখানে আসা সম্ভব। তবে এই ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে যাওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট রাস্তা নাই। চারিদিকে আম বাগান আরেক শোভা বর্ধিত করে আছে। এই সব বাগানের মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে হয় এখানে। তবে সোনামসজিদ মধ্যবাজার হয়ে দারাসবাড়ি মাদ্রাসা যাওয়ার রাস্তাটি অত্যন্ত জনদূর্ভোগে পরিণত হয়ে আছে। এটি দ্রুত পাকা করণ করা হলে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভিড় জমবে অনেকহারে এমন দাবি দারাসবাড়ি মাদ্রাসা ও মসজিদটি দেখতে আসা দর্শনার্থীদের। খুব বেশি দিনের কথা নয় ৭০ দশকের কথা। স্বাধীন দেশের সোনা ফলা মাটিতে চাষ করতে গিয়ে নাম না জানা স্থাণীয় এক কৃষক মাটিতে লাঙ্গল নামাতেই ইটের মতো শক্ত কিছুর অনুভব করে।
বিষয়টি এলাকার সবার সাথে আলোচনা করার সূত্রধরে স্থাণীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ অবগত হয়। এরপর প্রতœতত্ত্ব বিভাগ ১৯৭৫ সালে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধিনে এটির খনন কাজ শুরু হয়। উদ্ধার করা হয় দারাসবাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষক ওই মাটিতে সোনার ফসল ফলাতে না পারলেও মনের অজান্তে দেশবাসিকে সবচেয়ে মূল্যবান ফসল উপহার দিলেন। খনন করে উদ্ধার করা হলো উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় যা বর্তমানে দারাসবাড়ি মাদ্রাসা ও মসজিদ। প্রায় ৫’শ বছর আগে বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন শাহ ১৫০২ খ্রীষ্টাব্দের ১লা রমজান বাংলার রাজধানী গৌড়ে দারাসবাড়ি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত করেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে ইসলামী বিষয়ে পড়ালেখা করতে আসতো। দারাসবাড়ি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে চৌডালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক -শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের সাথে কথা হলে তারা মাদ্রাসা ও মসজিদ যাওয়ার রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে থাকায় এটি দ্রুত পাকা করনের দাবি জানান। এব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাকিব আল রাব্বি জানান, দারাসবাড়ি মাদ্রাসা ও মসজিদকে আরো আকর্ষণীয় ও দৃষ্টি নন্দন করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে করে পর্যটকদের নজর কাড়ে। এছাড়াও সেখানে যাওয়ার রাস্তাটি আধুনিকায়ন করা হবে। এতে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হাতে নেওয়া হয়েছে।