গত ৫০ বছরে গণমাধ্যমের কোনো দিন সুসময় যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন সংবাদপত্রের শীর্ষ কর্ণধাররা। সব সময় চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে পার করছে গণমাধ্যম। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘৫০ বছরের বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের অর্জন ও আগামীর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এছাড়া ভার্চুয়ালি যুক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অনারারি অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউএজ-এর সম্পাদক নুরুল কবীর, ভোরের কাগজ-এর সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। বক্তারা বলেন, সাংবাদিকতা এখন অনেক মৃয়মান। এজন্য গণমাধ্যমকে আরও শক্তিশালী হয়ে কাজ করতে হবে। প্রশাসনের কারো সমালোচনা করা হলে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে মামলা দেয়া হয়। এজন্য ঐক্যবদ্ধ ছাড়া গণমাধ্যম দিয়ে আমরা কোনো কিছু করতে পারবো না।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম বলেন, দেশে দুটো মাধ্যমকে সংবিধানের ধারা দিয়ে রক্ষা করা হয়েছে। তা হলো- জুডিশিয়ারি ও গণমাধ্যম। কারণ সমাজ বুঝেছে বিকশিত হবার জন্য স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রয়োজন। তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অভিজ্ঞতা দুই আড়াই বছর হয়েছে। কাউকে কি রক্ষা করা গেছে? অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব সংবাদপত্রের নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দেশের সংবাদপত্রগুলোকে জনস্বার্থ, ন্যায়বিচার, সুশিক্ষা, পরিবেশ, নারী সুরক্ষা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার মতো বিষয়গুলোতে সচেতনতা তৈরির কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, অর্জন বড় হয় যখন সীমাবদ্ধতা বেশি থাকে। সে বিচারে বাংলাদেশে সংবাদপত্রগুলোর অর্জন অনেক বড়। তারপরেও এ দেশের সংবাদপত্রগুলো সত্য প্রকাশে কতটা বস্তুনিষ্ঠ তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোর মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রেস কাউন্সিলকে সক্রিয় করে তোলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থে মত প্রকাশের জন্য একজন সাংবাদিককে আদালতে যেতে হবে, সেটা কখনও কাম্য নয়। এর সমাধান হতে পারে প্রেস কাউন্সিলকে সক্রিয় করা। এটা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে এর ওপর সবার আস্থা থাকে। যারা অন্য কিছুতে প্রভাবিত হবেন না।’ সংবাদপত্র, অনলাইন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের তুলনামূলক অবস্থান নিয়ে অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘সংবাদপত্র ও অনলাইনের মধ্যে বিরোধ থাকার কথা না। আমাদের দেশের সংবাদপত্রের সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। সংবাদপত্র টেলিভিশনের সঙ্গেও টিকে থাকছে। তরুণদের ভেতর সংবাদপত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উৎসাহ তৈরি হচ্ছে।’ সাংবাদিকতায় দলীয় রাজনীতির প্রভাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্যের অভাব দেখতে পাচ্ছি। অনেকটা রাজনৈতিক দলের মতোই বিভাজন। যে কারণে দাবি আদায়সহ সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। অনেক পত্রিকা বিকল্প প্রতিনিধির ভূমিকা নিয়ে নিচ্ছে। সাংবাদিকতা কখনো যেন হলুদ রঙ ধারণ না করে। বিদ্বেষ যেন প্রকাশিত না হয়।
অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে কোনো বিভাজন থাকা উচিত না। সাংবাদিকতা করতে এসে কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখা যাবে না। তিনি বলেন, ‘টিকে থাকারও একটা সংগ্রাম আছে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। সবাই মিলে সত্যিকারের গণতন্ত্র তৈরি করতে হবে। তাহলেই সংবাদপত্র টিকে থাকবে।’