শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ অপরাহ্ন

ডাকাতিয়া মডেলে মাছ চাষ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১

বাংলাদেশে কিছু এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নদীতে মাছ ধরার একটি বিশেষ পদ্ধতি। খাঁচায় মাছ চাষের এ পদ্ধতিটি বিশেষভাবে পরিচিত ‘ডাকাতিয়া মডেল’ হিসেবে। সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, বাণিজ্যিকভাবে খাঁচায় মাছ চাষের এ অধ্যায়টি শুরু হয় চাঁদপুর জেলার ডাকাতিয়া নদীতে এবং সে কারণেই সেখানকার ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন মডেলটির নামকরণ হয়েছে ‘ডাকাতিয়া মডেল’ হিসেবে। চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ হারুনর রশীদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, নদীতে জোয়ার ভাটার কারণে খাঁচার মাছ অনেক পরিষ্কার হয় আর এগুলো দ্রুত বড় হয়। ‘মাসখানেক আগে চাঁদপুরের রঘুনাথপুরে ডাকাতিয়া নদীতে গিয়ে দেখেছি এক-দেড় হাজার খাঁচায় মাছ চাষ করা হচ্ছে। মূলত তেলাপিয়া চাষ হয় এবং বাজারে এ খাঁচার তেলাপিয়ার দাম অন্য তেলাপিয়ার চেয়ে কিছু বেশি।’ তিনি বলেন, মৎস্য বিজ্ঞানীরাই এ প্রযুক্তিটি অনেক আগে উদ্ভাবন করেছিলো বা নিয়ে এসেছিলো যা দেশের বিভিন্ন এলাকার মাছ চাষিরা প্রয়োগ করে সুফল পাচ্ছেন।
একজন চাষী বলছেন, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ অনেক বেশি লাভজনক বলে দিন দিন এ চাষে লোকজনের আগ্রহ বাড়ছে।
খাঁচায় মাছ চাষ কি? এর সূচনা হলো কীভাবে? মোঃ হারুনর রশীদ বলছেন, মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধীনে চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরাই এটি উদ্ভাবন করে মাছ চাষিদের ধারণা দিয়েছিলেন এবং তার মতে সেখান থেকেই এটি ছড়িয়েছে। সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, ধারণাটি এসেছে মূলত থাইল্যান্ড থেকে বিভিন্ন ধরনের জলাশয়ে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ উপযোগী আকারের খাঁচা স্থাপন করে অধিক ঘনত্বে বাণিজ্যিকভাবে মাছ উৎপাদনের প্রযুক্তিই হলো খাঁচায় মাছ চাষ। তবে চাঁদপুর, সিলেট, ভোলার মতো কয়েকটি এলাকায় বেশি হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে প্রধানত চাষ হয় মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ। মূলতঃ বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা দুই দশকেরও আগে থাইল্যান্ড ও চীন থেকে খাঁচায় মাছ চাষের ধারণাটি পান এবং তারা সেটি নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করতে শুরু করেন। কৃষি তথ্য সার্ভিস ২০০২ সালের দিকে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করতে দেখা যায় যা পরে লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই মাছ চাষের এ পদ্ধতিটি ‘ডাকাতিয়া মডেল’ হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে। ভোলায় খাঁচায় মাছ চাষ করে এমন চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে খাঁচা ও পোনা মাছ সরবরাহ করে এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ আনিসুর রহমান বলছেন, ভোলায় তেতুলিয়ার একটি শাখা নদীতে চার থেকে পাঁচ শ’ চাষী খাঁচায় মাছ চাষ করেন। ‘আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তারাও সফল হয়েছেন। এখানে মূলত বেড়িবাঁধে থাকা বিপন্ন মানুষদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দিক চিন্তা করে এটি শুরু করা হয়েছিলো কয়েক বছর আগে। একটা করে গ্রুপ করে ভাসমান খাঁচা আর দুই হাজার মাছের পোনা দেয়া হয়েছিলো। তারা সবাই সফল হয়েছিলো বলেই আরো অনেকের আগ্রহ বেড়েছে।’
চাষ পদ্ধতি, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ: খাঁচা তৈরির জন্য এমন জাল ব্যবহার করা হয় যাতে নদীর পানি সহজে এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে আবার ক্ষতিকর কিছু না ঢুকতে পারে। খাঁচা তৈরির সময় পানির স্রোত ও গভীরতা, মাছের পরিমাণ ও আকারসহ নানা বিষয় বিবেচনা করা হয়। খাঁচার জন্য বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহৃত হয়, এর মধ্যে আছে সেলাই করা জাল, ড্রাম বা ব্যারেল, পাইপ, বাঁশ, সূতা, অ্যাংকর সহ নানা কিছু। প্রতিটি খাঁচা তৈরিতে আনুমানিক ১০/১২ হাজার টাকা খরচ হয় এবং এর একটি খাঁচায় একা হাজার মাছ চাষ করা সম্ভব। আর মাছের জন্য ভাসমান খাদ্যই প্রধান তবে প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পূরক ভাসমান খাবার দিতে হয়। আর এসব খাবার এখন বিভিন্ন কোম্পানিও বাজারজাত করছে। খাঁচায় গত পাঁচ বছর ধরে মাছ চাষ করেন ভোলার চাষি মোহাম্মদ সোহাগ। তিনি বলছেন, প্রতি ৩/৪ মাসের একটি সার্কেলে প্রতি এক হাজার মাছে ১৪/১৫ হাজার টাকা লাভ হয়।
‘৫০গ্রাম ওজনের পোনা ছাড়লে সেটি ৩/৪ মাসের মধ্যে বাজারজাতকরণের উপযোগী হয়। তখন একেকটি মাছ প্রায় আধা কেজি ওজনের হয়। আর নদীতে চাষের কারণে তেলাপিয়া মাছেও নদীর একটি স্বাদ আসে যা মানুষ পছন্দ করে। এ কারণে বাজারে দাম বেশি পাই। আর নদীর মাছের মতো এগুলোতেও রোগ বালাই হয়নি এখনো,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি। গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার আনিসুর রহমান বলছেন, তারা তেলাপিয়ার সাথে পাঙ্গাস মাছ চাষেরও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি খুব একটা সফল হয়নি। ‘এখন কার্প জাতীয় মাছ চাষেরও উদ্যোগ নিয়েছি। বিশেষত রুই, মৃগেল ও মিনারকাপ। কোন কোন চাষী আইড় মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তবে এ মাছের পোনা সঙ্কট তীব্র,’ বলছিলেন তিনি।
খাঁচায় মাছ চাষের সুবিধা: সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস খাঁচায় মাছ চাষের কয়েকটি সুবিধার কথা বলে থাকে। এগুলো হলো : ১. এ ধরনের চাষের জন্য পুকুরের মতো জলাশয়ের দরকার হয় না ২. প্রবহমান নদীর পানিতেই চাষ করা যায় ফলে খরচ কমে ৩. মাছের বর্জ্য প্রবহমান পানি অপসারণ করে ফেলে বলে পানি দূষিত হয় না
৪. মাছের উচ্ছিষ্ট নদীর প্রাকৃতিক মাছের জন্য উপকারী ৫. খাঁচার পানি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয় বলে বেশি ঘনত্বে মাছ চাষ করা যায়। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com