শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন

আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূল

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১

আবুল বাশার তথা আদি পিতা হজরত আদম আ: থেকে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত নবুয়তের ধারাবাহিকতায় অসংখ্য ও অগণিত নবী-রাসূল পৃথিবীতে এসেছেন। নবী-রাসূলদের সংখ্যা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কেউ জানেন না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আর প্রেরণ করেছি অনেক রাসূল, যাদের কথা আমি আপনাকে আগে বলেছি এবং অনেক রাসূল যাদের কথা আপনাকে বলিনি। আর আল্লাহ মূসার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন’ (সূরা নিসা- ১৬৪)। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘আমি আপনার আগে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি, তাদের কারো কারো ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারো কারো ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করিনি’ (সূরা গাফির-৭৮)।
প্রত্যেক উম্মতের জন্য নবী-রাসূল পাঠানো হয়েছে। কোনো উম্মত নবী-রাসূল ছাড়া ছিল না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাকো’ (সূরা । অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যাতে সতর্ককারী আসেনি’ (সূরা ফাতির- ২৫)। আরো ইরশাদ করেন- ‘কোনো রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না’ (সূরা বনি ইসরাইল-১৫)। আরো ইরশাদ করেন- ‘যদি আমি ইতঃপূর্বে কোনো শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম, তবে এরা বলত! হে আমাদের পালনকর্তা আপনি আমাদের কাছে একজন রাসূল প্রেরণ করলেন না কেন’ (সূরা ত্বা-হা-১৩৪)। আরো ইরশাদ করেন- ‘আরো প্রেরণ করেছি সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রাসূল, যেন রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোনো অজুহাত বা অভিযোগ না থাকে।’
হজরত আবুজার গিফারি রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি একদা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! নবী-রাসূলদের সংখ্যা কত? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন- নবী হলেন ১ লাখ ২৪ হাজার আর রাসূল হলেন ৩১৩ জন। (কুরতুবি ষষ্ঠ খ-, পৃষ্ঠা-১৫) হজরত আনাস ইবন মালেক রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমি আট হাজার নবীর নিদর্শনের উপর প্রেরিত হয়েছি, তন্মধ্যে চার হাজার হলো বনি ইসরাইল।’ কাবুল আহবার বলেন, নবী ছিলেন দুই কোটি দুই লাখ। মাকাতিল বলেন, নবী ছিলেন এক কোটি চার লাখ ২৪ হাজার। (কুরতুবি ষষ্ঠ খ-, পৃষ্ঠা-১৫) ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনার আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, নবী-রাসূলদের সঠিক সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। পবিত্র কুরআন মাজিদে মাত্র ২৫ জন নবী-রাসূলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
তাঁরা হলেন- ১. হজরত আদম আ:, তাঁর জীবনকাল ৯৬০ বছর ২. হজরত ইদরিস আ:, ৩৫০ বছরের সময় তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়, ৩. হজরত নূহ আ:, তাঁর জীবনকাল এক হাজার বছর, ৪. হজরত হুদ আ:, ৫. হজরত সালেহ আ: তাঁর জীবনকাল ৫৮ বছর, ৬. হজরত ইবরাহিম আ:, তাঁর জীবনকাল ৫৭৫ বছর, ৭. হজরত লুত আ:, ৮. হজরত ইসমাঈল আ:, ৯. হজরত ইসহাক আ:, তাঁর জীবনকাল ১৮০ বছর, ১০. হজরত ইয়াকুব আ:, তাঁর জীবনকাল ১৪৭ বছর, ১১. হজরত ইউসুফ আ:, তাঁর জীবনকাল ১২০ বছর, ১২. হজরত আইউব আ:, তাঁর জীবনকাল ৯৩ বছর, ১৩. হজরত শুয়াইব আ:, ১৪. হজরত মূসা আ:, তাঁর জীবনকাল ১২০ বছর, ১৫. হজরত হারুন আ:, ১৬. হজরত ইউনূস আ:, ১৭. হজরত দাউদ আ:, তাঁর ১০০ বছর- রাজ্য পরিচালনা করেন ৪০ বছর, ১৮. হজরত সুলাইমান আ:, ১৯. হজরত ইলিয়াস আ:, তিনি দীর্ঘ জীবন লাভ করেন, ২০. হজরত আল-য়াসা আ:, ২১. হজরত জাকারিয়া আ:, ২২. হজরত ইয়াহিয়া আ:, ২৩. হজরত যুল কিফল আ:, তাঁর জীবনকাল ৭৫ বছর, ২৪. হজরত ঈসা আ:, তাঁর পার্থিব জীবনকাল ৩৩ বছর, ২৫. হজরত মুহাম্মদ সা:, তাঁর জীবনকাল ৬৩ বছর। আরো যাঁদের নাম কুরআন মাজিদে রয়েছে তাঁরা হলেন- ১. হজরত যুল কিফল ও ২. হজরত উযাইর আ:।
নবী-রাসূলরা হজরত ইব্রাহিম আ:-এর বংশধর : হজরত যুবাইর রা: বলেন- ১. হজরত আদম আ:, ২. হজরত ইদরিস আ:, ৩. হজরত নূহ আ:, ৪. হজরত লুত আ:, ৫. হজরত হুদ আ:, ৬. হজরত সালেহ আ:- এ ছয়জন ব্যতীত কুরআন মাজিদে বর্ণিত সব নবী-রাসূলই হজরত ইবরাহিম আ:-এর বংশধর। আরব ভূমিতে প্রেরিত হয়েছেন মাত্র পাঁচজন নবী-রাসূল। তারা হলেন- ১. হজরত হুদ আ:, ২. হজরত সালেহ আ:, ৩. হজরত ইসমাইল আ:, ৪. হজরত শুয়াইব আ: ও ৫. হজরত মুহাম্মদ সা:। ১৪ মতান্তরে ১৩ জন নবী-রাসূল খতনা অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছেন। যেমন- ১. হজরত আদম আ:, ২. হজরত শীশ আ:, ৩. হজরত ইদরিস আ:, ৪. হজরত নূহ আ:, ৫. হজরত সাম আ:, ৬. হজরত জাকারিয়া আ:, ৭. হজরত লুত আ:, ৮. হজরত ইউসুফ আ:, ৯. হজরত মূসা আ:, ১০. হজরত শুয়াইব আ:, ১১. হজরত সুলাইমান আ:, ১২. হজরত ইয়াহিয়া আ:, ১৩. হজরত ঈসা আ: ও ১৪. হজরত মুহাম্মদ সা:।(তাফসিরে কুরতুবি-প্রথম খ-, পৃষ্ঠা-৭৬)।
হাদিসে বিদ্যমান নবী-রাসূলদের নাম : বহু নবী-রাসূলের নাম কুরআন মাজিদে উল্লেখ নেই। হাদিস শরিফে মাত্র কয়েকজনের নাম পাওয়া যায়। তাঁরা হলেন- ১. হজরত ইউশা বিন নূন আ:, ২. হজরত হাযকিল আ:, ৩. হজরত সামুয়াল আ:, ৪. হজরত দানইয়াল আ: ও ৫. হজরত ইয়ারমিয়া আ: প্রমুখ।
কোন নবী দু’বার প্রেরিত হয়েছেন : একমাত্র হজরত শুয়াইব আ: দু’বার প্রেরিত হয়েছেন। একবার মাদইয়ানে, দ্বিতীয়বার আসহাবে আইকার নিকট। (ইতকান দ্বিতীয় খ-, পৃষ্ঠা-৩০২)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com