ঋতু বৈচিত্রে শুরু হচ্ছে শীতকাল। ইটপাথরের শহরে এখনও তেমন শীত অনুভব না হলেও গ্রামাঞ্চলে কুয়াশায় মোড়া শীতের সকালের জানান দিচ্ছে শীতের। আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে এই সময়টা ব্যস্ত থাকার কথা গাছিদের। কিন্তু বরিশালে সেটা এখন আর হয়ে ওঠেননি। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নেই জেলা প্রায় উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ এবং সে গাছের রসের তৈরি শীতের পিঠা, এক সময় খেজুর রসের মনমাতানো গন্ধে মৌ, মৌ করতো বরিশালের গ্রাম অঞ্চলের পথঘাট অলি গলি এবং রস থেকে গুড় তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করতেন গাছিরা কিন্তু এখন তাও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। গাছিরা বলছেন, জ্বালানি কাঠ ও কয়লা আপেক্ষা খেজুর গাছ সস্তা দামে পাওয়া যায় বলে ইট ভাটায় এর চাহিদা বেশি সেজন্যই প্রায় খেজুরের গাছই কেঁটে ফেলা হয়েছে। কেননা, খেজুরের গাছে পোড়ানো ইটের রং গাঢ় হয়। সময়ের পরিবর্তনে ও সচেতনাতার অভাবে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস। বরিশালের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় গ্রামগুলোর মাঠে আর মেঠোপথের ধারে কোথাও কোথাও দু’একটি খেজুর গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হিসাবে, গ্রামগুলোতে জীব বৈচিত্রের সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়নে বন বিভাগের সচেতনতার অভাবে এসব অঞ্চলে খেজুর গাছ অনেকটা বিলুপ্তির পথে। এক সময় খেজুর গাছের রস ও তার গুড়ের খ্যাতি থাকলেও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এক কথায় নেই বলাযায় গ্রাম বাংলার সেই পুরনো ঐতিহ্য। সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের ছালাম মুন্সি বলেন, চাহিদা মত খেজুর গাছ না পাওয়ার কারণে রস কম হওয়ায় আশানুরূপ গুড় তৈরি করতে পাড়িনি। তাই পূর্বের পেশা ছেড়ে দিয়ে জীবন-জীবিকার জন্য শীতের মৌসুমে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হব। তবে যে ভাবে খেজুর গাছ কাটা হচ্ছে অল্প দিনের মধ্যেই এই এলাকায় খেজুরের রস ও গুড় ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বুক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য ও অপেক্ষার পালা। এ জন্য মৌসুমে আসার সাথে সাথে দক্ষ গাছিদের কদর বাড়ে। তবে আমাদের অসচেতনতা কারনে খেজুর গাছ বিলুপ্তির পথে।