সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন

কর্জে হাসানা : ক্ষুদ্র ঋণের বিকল্প

আব্দুল্লাহ আরমান বিন রফিক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১

একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের একটি নিজস্ব অর্থব্যবস্থা রয়েছে। খেজুর পাতার মসজিদে নববীকেন্দ্রিক ইসলামী রাষ্ট্রের যে গোড়াপত্তন হয়েছিল তার শুরুটা মোটেও সুখকর ছিল না। মদিনার বিভিন্ন গোত্রের ষড়যন্ত্র মোকাবেলার পাশাপাশি বহিঃশত্রুর হামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে অনেকবার। এমন রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও রাসূল সা: অর্থনীতি ও আধ্যাত্মিকতার সমন্বয়ে একটি অভূতপূর্ব ও নৈতিক অর্থব্যবস্থার গোড়াপত্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সফল এই অর্থব্যবস্থা খেলাফতে রাশেদার সোনালি যুগ পেরিয়ে উমাইয়া, আব্বাসীয় ও উসমানীয় শাসনামলেও দ্যুতি ছড়িয়েছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ইসলামী রাষ্ট্রের সব নাগরিক এই সুষম অর্থনীতির সুবিধা ভোগ করেছে যুগের পর যুগ। এই সফল অর্থনীতির ওপর ভর করেই দুর্দ- প্রতাপে শত শত বছর মুসলিমরা অর্ধ-পৃথিবী শাসন করেছে।
কিন্তু গৌরবোজ্জ্বল সেই দিনগুলো এখন পুস্তকের পাতাতেই সীমাবদ্ধ। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির দিকে চোখ বুলালে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর আর্থিক দৈন্যতা উপলব্ধি করতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। জিডিপি, মাথাপিছু আয়, মাথাপিছু ঋণ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, দুর্নীতি, দারিদ্র্যের হার প্রভৃতি ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মুসলিম রাষ্ট্রের ভয়াবহ চিত্র এখন ওপেন সিক্রেট।
মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ জনসংখ্যা গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে। উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, গ্রামীণ এলাকায় আনুমানিক ৩৫ শতাংশ জনসংখ্যা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। গ্রামীণ দারিদ্র্যের একটি প্রধান কারণ হচ্ছে দেশের ভৌগোলিক ও জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য। অর্থনৈতিক মন্দা সমস্যার পাশাপাশি প্রতি বছর বন্যাকবলিত জনগোষ্ঠীর ফসল, বাড়িঘর ও জীবিকার ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। উপরন্তু নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রাদুর্ভাব ঘটায় কলেরা, ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগের। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে বাড়িঘর পুনর্র্নিমাণ, চিকিৎসা, জীবিকা নির্বাহ ও নতুন করে ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করতে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হয়। তাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে সরকারসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর এই আর্থিক দুরবস্থাকে পুঁজি করে দারিদ্র্যবিমোচন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্ষুদ্রঋণ, পরিবেশ, নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক উন্নয়নের নাম করে ব্যাঙের ছাতার মতো নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার এনজিও। ’৭১-পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে এনজিও কার্যক্রম শুরু হয় ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমে। গত প্রায় ৫০ বছরে এ সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখে গিয়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সমাজসেবা অধিদফতরে নিবন্ধিত আছে ৫৬ হাজার, সমবায় অধিদফতরের অধীনে এক লাখ ৫০ হাজার, মহিলা-বিষয়ক অধিদফতরের অধীনে ১৬ হাজার এবং এনজিও ব্যুরোতে নিবন্ধিত আছে দুই হাজার ৫০০।’ (দৈনিক যুগান্তর, ১৭ মে ২০২০)। তন্মধ্যে বিদেশী সাহায্যপুষ্ট এনজিওর সংখ্যা প্রায় ৮০০।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অপ্রতুল কর্মসংস্থান, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার ব্যর্থতা, উদ্যোক্তার অভাব, সম্পদের অসম বণ্টন, দুর্নীতি, সুদপ্রথার ব্যাপক প্রচলন ইত্যাদি দারিদ্র্য বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা সাধারণত সুদ গ্রহণ ও প্রদানকে ধর্মীয় ও নৈতিকতার দিক থেকে অপরাধ মনে করে। কিন্তু সচ্ছল জীবন গঠনের প্রত্যাশা এবং চরম অভাবের জীবন থেকে মুক্তির আশায় মানুষ ঋণের মুখাপেক্ষী হয়। তাদের এই দুর্বলতার সুযোগে দারিদ্র্যবিমোচনের নামে এনজিওগুলো চড়া সুদে ঋণ দিয়ে গরিব জনগণের অর্থনৈতিক বিপর্যস্ততা আরো ত্বরান্বিত করছে। আবু ইসহাকের লেখা ‘জোঁক’ গল্পের নির্দয় মহাজন ‘চৌধুরী সাহেব’ চরিত্রের আধুনিক ভার্সন হলো এই ছদ্মবেশী এনজিও। সুন্দর কর্মসূচি ও তথাকথিত সমাজসেবার আড়ালে তাদের অশুভ কার্যক্রমের কথা সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান সবাই অবগত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে বলেছেন, ‘একসময় আমরাও এটাকে সমর্থন দিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম যে, এর মাধ্যমে বুঝি মানুষ দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠতে পারবে। কিন্তু যখন আমরা বিষয়টি আরো গভীরভাবে দেখলাম, তাতে দেখলাম- আসলে এর মাধ্যমে দারিদ্র্য ঠিক বিমোচন হয় না, দারিদ্র্য লালন-পালন হয়।’ (দৈনিক প্রথম আলো, ১৯ নভেম্বর)। তাই এ দেশের দরিদ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীকে এই ইহকালীন ও পরকালীন অনিবার্য ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে এনজিওর বিপরীতে যথাযথ আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। তা না হলে তাদের এই অশুভ প্রচেষ্টা রুখে দেয়া সম্ভব নয়। অর্থ ছাড়া অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের সংক্ষিপ্ত ও ভিন্ন কোনো পথ নেই। তাই প্রান্তিক জনগণের দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের একটাই পথ; আর তা হলো- টেকসই পদক্ষেপ ও সুদমুক্ত আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে তাদের দারিদ্র্যবিমোচনের পথ তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, দরিদ্রভাতা প্রদান, এককালীন আর্থিক অনুদান, সুদমুক্ত প্রণোদনা, যথাযথ জাকাত ব্যবস্থা প্রবর্তনের পাশাপাশি কর্জে হাসানা বা সুদমুক্ত ঋণ প্রদান বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। উল্লেখ্য, কর্জে হাসানা বা উত্তম ঋণ হলো মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ও সওয়াবের আশায় বিনাশর্তে কাউকে কোনো কিছু ঋণ দেয়া। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যবিমোচন করতে ক্ষুদ্রঋণের বিরুদ্ধে সমালোচনা কিংবা সচেতনতা বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়। এর বিকল্প হিসেবে যথাযথ আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে না পারলে তাদের বাস্তব জীবনে এই সচেতনতা তেমন কোনো কাজেই আসবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘কর্জে হাসানা’ প্রদানের সচল কার্যক্রম নেই বললেই চলে। বিভিন্ন ইসলামী ব্যাংকে অফিসিয়ালি কর্জে হাসানা দেয়ার বিধান থাকলেও আর্থিক নিরাপত্তা ও কমার্শিয়াল কারণে তা খুব একটা বাস্তবায়িত হয় না। তবে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিএস) এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইসলামী ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে আরডিএস বিশ্বে সর্ববৃহৎ। কিন্তু বিনিয়োগের খাত ও ধরনের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ পদ্ধতির ভিন্নতা ও শর্তাবলি, মাঠপর্যায়ে এনজিওর তুলনায় কম তৎপরতা ও পরিচিতি, জামানতসহ বিভিন্ন কারণে এই প্রকল্প এখনো নিজেকে এনজিওর শতভাগ বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়নি। তদুপরি দেশীয় প্রেক্ষাপটে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের এই কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। তাই সফল এই প্রকল্পকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করে ইসলামী ঘরানার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
এ দেশে এনজিওর সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এককভাবে দায়বদ্ধ নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে জনগতের দ্বীনি চেতনা হ্রাসও এ ক্ষেত্রে বহুলাংশে দায়ী। সমাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা ঋণ দিয়ে অন্যকে সহযোগিতা করাকে অলাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে। অথচ এটি একটি আর্থিক ইবাদত এবং পরকালীন মুক্তির পথকে সহজ করার অন্যতম মাধ্যম।
আল-কুরআন ও সহিহ হাদিসে বহুবার কর্জে হাসানার প্রতি উৎসাহ ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে? তাহলে তিনি তা তার বিনিময়কে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবেন। আর তার জন্য আছে সম্মানজনক প্রতিদান’ (সূরা হাদিদ-১১)।
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদানের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করা। তবে ফজিলতের দিক থেকে কোনো কোনো বিদ্বান মানুষকে অর্থ ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করাকেও এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে দুইবার কর্জ দিলে সে সেই পরিমাণ অর্থ একবার দান করার সমান সওয়াব পায়’ (ইবনে মাজাহ-২৪৩০)।
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে লোক কোনো অভাবী (ব্যক্তিকে ঋণ দেয় এবং ঋণ পরিশোধের জন্য) ঋণগ্রস্তকে যথেষ্ট সুযোগ প্রদান করে অথবা ঋণ মাফ করে দেয়, কিয়ামতের দিবসে আল্লাহ তায়ালা তাকে নিজের আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন তার আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না’ (তিরমিজি-১৩০৬)।
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে লোক কোনো ঈমানদারের দুনিয়ার কোনো বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তায়ালা বিচার দিবসে তার থেকে বিপদ সরিয়ে দেবেন। যে লোক কোনো দুস্থ লোকের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুরবস্থা দূর করবেন। যে লোক কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন। বান্দা যতক্ষত তার ভাইয়ের সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে আল্লাহ ততক্ষণ তার সহযোগিতা করতে থাকেন’ (মুসলিম-৬৭৪৬)।
উপরিউক্ত আয়াত ও হাদিসগুলো দ্বারা শরিয়তে কর্জে হাসানার গুরুত্ব ও ফজিলত খুব সহজেই অনুমেয়। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই সুযোগ গ্রহণ করে নিজের আমলনামাকে সমৃদ্ধ করা।
কার্জে হাসানা হ্রাসের কারণ: কর্জে হাসানা গ্রহণ করে পরিশোধের ক্ষেত্রে টালবাহানা করায় ঋণদাতারা আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে ঋণ দানে নিরুৎসাহিত হন। সমাজে কর্জে হাসানা প্রথা হ্রাস পাওয়ার এটি অন্যতম প্রধান কারণ। এসব কপটচারী ব্যক্তিদের সতর্ক করে রাসূল সা: বলেছেন, ‘ধনী ব্যক্তি কর্তৃক দেনা পরিশোধে টালবাহানা করাটা তার মানহানি (অর্থাৎ, তার সম্পর্কে অভিযোগ করা) এবং শাস্তিকে বৈধ করে দেয়’ (নাসায়ি-৪৬৮৯)।
তিনি আরো বলেন, ‘সামর্থ্যবান ব্যক্তির পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম’ (বুখারি-২২৮৮)।
মুসলিম হিসেবে সুদের ভয়াবহতা জেনেও অনেকে সামান্য অভাব কিংবা নিছক বিলাসিতার জন্য ঋণ গ্রহণ করে। উৎপাদনমূলক বা আয়বর্ধক কাজের জন্য ঋণ না নিয়ে অনেকে অপেক্ষাকৃত ধনীদের জীবনযাত্রা প্রণালী অনুকরণের জন্য এনজিওগুলোর দ্বারস্থ হয়। ঋণ পরিশোধের সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তি প্রদানের বাধ্যবাধকতা, উচ্চ সুদের সমস্যা ও ঋণের অন্যান্য কঠোর শর্তাবলি তাদের ঋণমুখী হওয়া থেকে নিবৃত করতে পারেনি। ফলে বহুমুখী ঋণের জালে তারা আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এভাবেই ঋণগ্রহীতাদের পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এনজিওগুলো তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। মুসলিমদের দ্বীনি চেতনা জাগ্রত না হলে হয়তো এই অভিশাপ থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।
সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইরান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মিসরসহ প্রত্যেকটি দেশেই কর্জে হাসানা প্রথা ব্যাপকভাবে চালু রয়েছে। সুদের কারণে এসব দেশে মাইক্রো ক্রেডিট ব্যাপকতা পায়নি। বেইজিং, ফিলিপাইনের ম্যানিলা, লসবেনস, মিন্দানাও ও কালাম্বা শহরেও মুসলমানদের বেশ কিছু সমিতি ও ইসলামিক সেন্টার আছে যেখানে সদস্যরা কর্জে হাসানার লেনদেন করেন (দৈনিক সংগ্রাম, ৯ জুলাই, ২০১৯)। তাদের অনুকরণে এ দেশের সরকার, ইসলামী ঘরানার ব্যাংক, ইসলামী রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক সংগঠন, সমাজসেবামূলক সংগঠন, সমবায় সমিতি কিংবা ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যদি কর্জে হাসানা ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগী হন তাহলে আমরাও আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবো ইনশা আল্লাহ।
এ অলাভজনক ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ব্যয়ের খরচ জোগানোর ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে সর্বনিম্ন পরিমাণ ‘সার্ভিস চার্জ’ গ্রহণ করা যেতে পারে, এ বিষয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ ইতিবাচক মত দিয়েছেন। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, জেদ্দাহ সুদমুক্ত ঋণের ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ শতাংশ সাভির্স চার্জ আরোপ করে। তবে আদায়কৃত চার্জ প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যয় ছাড়া অন্য খাতে ব্যবহার বৈধ নয়। পাকিস্তান সরকারের মতো পল্লী ঋণের সার্ভিস চার্জ তৃতীয় পক্ষ হিসেবে সরকার বহন করতে পারে।
সরকার, সাধারণ জনগণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বীনি চেতনা ও আন্তরিকতা, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের জোরালো পদক্ষেপ ও প্রচারণা ইত্যাদি সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন। লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, ড. এম এ বারী মাদরাসা, টাঙ্গাইল




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com