প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার ২৮ নভেম্বর সকালে বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে রাজধানীতে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন-২০২১ উদ্বোধন করেছেন। তিনি তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ‘রেডিসন ব্লু’ হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশকে তুলে ধরাই এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য’।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন মুখ এখনও বিশ্বের অনেকের কাছেই অজানা এবং বিনিয়োগ প্রচার কর্মসূচি তাদের অর্থনীতি এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করছে।
বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রায় ২,৫৭৪ জন ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সামিট ২০২১-এ অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৪৬৫ জন বিদেশী রয়েছেন। তারা তাদের দেশ বা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সংস্থাগুলির প্রতিনিধিত্ব করছেন।
তিনি বলেন, অংশগ্রহণকারীরা মহামারীর কারণে শারীরিক বা ভার্চুয়াল উভয়ই ভাবেই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। ‘বাংলাদেশ: ডিসকভার লিমিটলেস অপারচুনিটিজ’ শীর্ষক একটি ট্যাগলাইন সহ শীর্ষ সম্মেলনে ১৪টি পৃথক সেশন থাকবে, যার মধ্যে ১১টি নীল অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা এবং ওষুধ, পরিবহন এবং লজিস্টিকস, পুঁজিবাজার, শক্তি এবং জ্বালানি, আর্থিক পরিষেবা, কৃষি ব্যবসা, চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য, পোশাক, বৈদ্যুতিক এবং ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনে সম্পৃক্ত থাকবে। দেশের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ প্রতিযোগিতা, ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল যে সুযোগগুলি তৈরি করছে তা বাংলাদেশের অর্থনীতির দুর্দান্ত উত্থানের গল্পের পাশাপাশি সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরী করবে।
বাংলাদেশের বিনিয়োগ সুবিধা লুফে নিতে বিদেশী বিনিয়োগকারিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য তাঁর সরকারের দেয়া সবধরনের সুযোগ সুবিধা লুফে নিতে বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে একটি বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে আমরা অবকাঠামো উন্নয়নসহ সমস্ত নীতি সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি গত রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন-২০২১’, এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ‘রেডিসন ব্লু’ হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ভারত, সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ বিশে^র ১৫টি দেশের ২,৩৩২ জন নিবন্ধন করেছে জেনে আমি আনন্দিত হয়েছি। তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য আমরা সম্ভাবনাময় ১১টি খাত চিহ্নিত করেছি। এ সব হচ্ছে, অবকাঠামো, পুঁজিবাজার ও ফাইন্যান্সিয়াল সেবা, তথ্য-প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিকস উৎপাদন, চামড়া, স্বয়ংক্রিয় ও হালকা প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও ঔষধ, পাট-বস্ত্র, এবং ব্লু-ইকোনমি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ^াস করি, এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশে এসব খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। বিশে^ বাংলাদেশী পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি হবে এবং বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনদফা নির্বাচনে জয়লাভের ফলে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দক্ষ-পরিশ্রমী জনসম্পদ সৃষ্টি, আকর্ষণীয় প্রণোদনার মাধ্যমে উদার বিনিয়োগ-নীতি এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশাল বাজারের মধ্যবর্তী ভৌগলিক অবস্থানের জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্ব দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতি আস্থার ফলে ৬০ শতাংশের বেশী প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ আসছে পুনঃবিনিয়োগের মাধ্যমে।