পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের পরতে পরতে রয়েছে নবাবদের ইতিহাস। তার অন্যতম দলিল দক্ষিণ দরওয়াজা এলাকার পাশে অবস্থিত ফরাসখানার ঘণ্টাঘর। সেই ঘণ্টাঘর রয়েছে এখনো। তার মাথায় ঝুলছে দুই শতাধিক বছরের প্রাচীন বিশালাকৃতির ঘণ্টাটিও। তবে নেই ঘণ্টা বাজানোর কেউ। সেজন্য নবাবি আমলের স্মৃতি বিজড়িত ঘণ্টাটি তিন দশকের বেশি সময় ধরে নীরব।
নবাবি বংশের উত্তরসূরীসহ সচেতনমহল ঘণ্টাঘরের ঘণ্টাটি পুনরায় চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, প্রতি বছর দেশ-বিদেশের লাখ লাখ পর্যটক হাজারদুয়ারী প্রাসাদের জাদুঘর দেখতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ আসেন। অথচ হাজারদুয়ারীর ঢিল ছোড়া দূরত্বে ঘণ্টাঘর সম্পর্কে তাদের কিছু জানানো হয় না। ফলে নবাবি ইতিহাসের এই অংশটুকু অজানাই থেকে যায় পর্যটকদের কাছে। ঘণ্টাঘরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এটি সচল করার দাবি তোলেন তারা।
ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে জানা যায়, ১৮২৯ সালের ২৯ আগস্ট নবাব নাজিম হুমায়ুন জাঁ হাজারদুয়ারী প্রাসাদের ভিত্তি স্থাপন করেন। প্রাসাদটি এখন জাদুঘর। এর কিছু দূরে অবস্থিত ঘণ্টাঘর। নবাবি আমলে প্রতি এক ঘণ্টা পরপর এটি বেজে সময়ের জানান দিতো।
মুর্শিদাবাদ শহরে নবাবদের বর্তমান বংশধরদের তথ্য অনুযায়ী, দুই শতাধিক বছর আগে তৎকালীন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব আলি জাঁ ঘণ্টাঘর নির্মাণ করেন। এর মধ্যে লাগানো ঘণ্টাটি লন্ডনে তৈরি হয়েছিল। সোনা, রুপা, তামা ও দস্তাসহ ৩৬টি ধাতু দিয়ে নির্মিত এটি। তবে ঘণ্টাটি তৈরিতে কতো খরচ পড়েছিল সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি নবাব বংশের বর্তমান সদস্যরা।
নবাব আমলে ঘণ্টাটি বাজানোর জন্য কর্মচারী নিযুক্ত ছিল। দক্ষিণ দরওয়াজার মধ্যে একটি ঘরে রাখা ঘড়ির সময় দেখে ঘণ্টা বাজাতেন কর্মচারী। দিনরাতে ২৪ বার বাজানো হতো। এ জন্য ছিল দুইজন কর্মচারী। ১২ ঘণ্টা করে তারা দায়িত্ব পালন করতেন। অ্যালার্ম দেওয়া দেওয়াল ঘড়ির মতো এক ঘণ্টা পর পর এটি বাজতো। এই ঘণ্টা শুনেই মায়েরা ঘুম থেকে উঠে দিনের কাজ শুরু করতেন। স্কুলে পাঠাতেন ছেলে-মেয়েদের। শুধু মুর্শিদাবাদ শহর নয়, ভোরে এবং রাতে ঘণ্টার শব্দ বহরমপুরেও পৌঁছে যেতো। নবাব বংশের বর্তমান সদস্য সৈয়দ রেজা আলি মির্জা ওরফে ছোট নবাব বলেন, ১৯৮৫ সালে রাজ্য সরকার ঐতিহাসিক ঘণ্টাঘরটি অধিগ্রহণ করে। তারপর থেকেই ঘণ্টাটি বাজানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কর্মচারী নিয়োগ বা এর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কাজেই ৩৬ বছর ধরে বন্ধ আছে ঘণ্টাটি। এটি শুধু নেহাত ঘণ্টা নয়, এই ঘণ্টার সঙ্গে নবাবি ইতিহাসও জড়িত। এই ইতিহাস প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দিতে ঘণ্টা বাজানো চালুর দাবি জানাই। (জ্যোতির্ময় দত্ত, পশ্চিমবঙ্গ সংবাদদাতা জাগোনিউজ২৪.কম)