তারুণ্য জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময়ে মানুষ অনেক বুদ্ধিদীপ্ত ও প্রাণবন্ত হয়ে থাকে। চাইলে ব্যক্তি তখন অনেক কিছু করতে পারে। দেখা যায় অনেকেই এই সময় অবহেলায় নষ্ট করে। কখনো কখনো শক্তির বড়াই করে। দ্বীনের বিরুদ্ধে নিজের শক্তি ও সাহসের অপচয় করে। আবার কখনো কখনো নফসের তাগিদে শয়তানের ফাঁদে পড়ে ভালো-মন্দের বিচার করে না। যাচ্ছেতাই করে। সে এমন সব কথা বলে একজন মানুষ হিসেবে যা কখনোই প্রকাশ করা উচিত ছিল না। এই পৃথিবীতে মানুষের আগমন তার ইচ্ছায় হয়নি। তাকে একজনের কর্তৃত্ব মেনেই এই পৃথিবীর জীবন পরিচালনা করতে হয়। হয়তো সে অদৃশ্য। তাঁর কুদরত অদৃশ্য নয়। সমস্ত মাখলুক তাঁর শক্তির কাছে পদানত। তবুও মানুষ গোমরাহি বশে সত্য থেকে দূরে সরে যায়। অথচ তার অঙ্গীকার ছিল তাঁরই আনুগত্য করার। মানুষ যখন দ্বীন থেকে দূরে চলে যায় সে নিজেরই ক্ষতি ডেকে আনে। সে বুঝেও বুঝতে চায় না সে শয়তানের ধোঁকায় পড়েছে। এই শয়তান তাকে জান্নাতের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে এবং তার ক্ষতি করে ছাড়বে। শয়তানের লক্ষ্য এটাই- সে বান্দাকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে নিয়ে যাবে। তাকে ভুলের মধ্যে ছেড়ে দেবে। আল্লাহর সামনে এটাই শয়তানের চ্যালেঞ্জ। যে চালেঞ্জে দুর্বল ঈমানের মানুষ হেরে গেলেও প্রকৃত মুমিনের পরাজয় কখনোই হয় না। শয়তানের সমূহ ধোঁকাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে সে আল্লাহর অনুগত বান্দার পরিচয় দেয়। শয়তানকে আল্লাহ যে শক্ত চ্যালেঞ্জ নিক্ষেপ করেছে, যা মুমিন-মুসলমান প্রতিটি পদে পদে শয়তানকে প্রতিহত করে বাস্তবায়ন করে। মানুষ কখনো দুনিয়ার চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়। কখনো স্বার্থে মজে যায়। কিন্তু সে চিন্তা করে না আমি তো মানুষ, এই দুনিয়ায় আমার অবস্থান মাত্র ক’দিনের। তাহলে আমি কিসের এত বড়াই করছি। আমার নিজের জীবনের ওপরও তো আমার নিয়ন্ত্রণ নেই। সে চিরন্তন সত্তার হাতে আমার জীবন তার বিরোধিতা আমার দ্বারা শোভা পায় না। এটি আমার মূর্খতার পরিচয়। ঈমানের দুর্বলতা। শয়তানকে আমি আমার বন্ধু বানিয়ে নিয়েছি বলেই শয়তান আমার উপর বিজয়ী হয়। বিবেককে জাগ্রহ করে এখনই শয়তানকে ধিক্কার জানাই। আমি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচব। আমার আহলে-আওলাদও বাঁচবে।
মানুষ কতই দুর্বল চিত্তের অধিকারী! সে নিজের ক্ষতি করছে আর সে কথা নিজেই বুঝতে পারছে না। অধিকন্তু সে নিজের জ্ঞান গরিমার বড়াই করছে। মানুষ যখন তাকে দ্বীনের পথে আহ্বান করতে যাচ্ছে তাদেরকে পাগল বলে সাব্যস্ত করছে। নানা তোহমাত লাগিয়ে দিচ্ছে তার গায়। তার পরও মানুষ কেন তাকে দ্বীনের পথে ডাকছে? কারণ দ্বীনের পথে মানুষকে আহ্বান করা এটি একটি খোদায়ি কাজ। যে কাজের জন্য আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। পরিবার, সমাজ থেকে দ্বীন হারিয়ে যাচ্ছে। ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় মসজিদে বসে শুধু আল্লাহ আল্লাহ করা মুমিন চরিত্রের সাথে বড়ই বেমানান। ফজিলত তখনই হাসিল করা যায় যখন ব্যক্তি তার দ্বীনদারির মাধ্যমে তার পরিবার ও সমাজকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে। একদিকে থাকবে ইবাদত, দ্বীনের দাওয়াত। অন্যদিকে নিজেকে ক্রমাগত সংশোধনের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। আল্লাহ তার নেক বান্দাদের দ্বীনের পক্ষে কাজ করতে বলেছেন। যে দাওয়াতি মিশনের উদ্দেশ্যই হবে মানুষকে অন্যায় থেকে ফিরিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসা। আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা। সেই পথে চলতে হবে, সে সিরাতুল মুস্তাকিমের কথা আমরা সূরা ফাতিহায় একাধিকবার নামাজে বলে থাকি। শুধু বচনে নয়, মননে যখন আমরা আল্লাহকে একমাত্র মাবুদ বলে মেনে নেবো দুনিয়ার কারো সামনে আমি আমার মাথানত করতে পারব না। কারণ এই মাথা কেবল একজনের কাছে নত হবে যিনি আমার স্র্রষ্টা। যার পূর্ণ আনুগত্যের জন্য আমি ওয়াদাবদ্ধ।
আপনি-আমি যখন পরিবারের দায়িত্বে থাকব অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে আমাদের অধীনস্তদের ব্যাপারে। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তিকে এ সম্পর্কে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে। জিজ্ঞাসা করা হবে আমার আপনার দায়িত্ব সম্পর্কে। সেদিন চাইলেও আমি-আপনি এড়িয়ে যেতে পারব না। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সে বিচার হবে অত্যন্ত সূক্ষ্ম। সামান্য বিষয়টিও সেখান থেকে বাদ পড়বে না। তাই সময় থাকতে সজাগ হওয়া প্রয়োজন। সময় ফুরিয়ে সচেতন হয়ে কোনো লাভ হবে না। কারণ সেদিন আপনার কিছুই করার থাকবে না। আপনি যে পরিবারে আছেন আপনি সেই পরিবারের কর্তা। সবাই আপনাকে মান্য করে। আপনার কথা শোনে। আপনি তাদের এমন কথা বলুন, এমন নসিহত করুন, যে নসিহত আল্লাহর পছন্দ হয়ে যায়। এটাই তাদের জন্য আপনার শ্রেষ্ঠ দান। যে দান কখনো ফুরাবে না। এর বিনিময়ও অফুরন্ত। কারণ আপনি সওয়ার অর্জনের একটি ধারা তৈরি করে গেলেন। যতদিন এই ধারা অব্যাহত থাকবে খোদার রহমত আপনার ওপর বর্ষিত হতে থাকবে। কেন আপনি নিজে এই রহমত থেকে বঞ্চিত হবেন? আপনার পরিবার পরিজনকেও বঞ্চিত রাখবেন। তাই সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে এক আল্লাহ পথে আসুন। পৃথিবীর সব পেরেশানি দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ তার বিশেষ রহমত দিয়ে আপনার সংসারটা ভরে দেবেন। আপনার রিজিকের পথ প্রশস্ত করবেন। এমন জায়গা থেকে আল্লাহ আপনার রিজিকের ব্যবস্থা করবেন যা আপনি কল্পনাও করতে পারেননি। এ কারণে আল্লাহর ওপর বিশ্বাসকে অটুট রাখতে হবে। নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে কল্যাণ লাভের চেষ্টা করতে হবে। তাহলে আল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবেন।
লেখক: সাহিত্যিক ও গবেষক