নতুন ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা চলবে। গতকাল মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মো. হাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘বিধি-নিষেধের আলোকে আমরা দেখেছি, নির্দেশনা অনুযায়ী বাণিজ্য মেলার কার্যক্রম চালাতে কোনো অসুবিধা নেই। মেলা বন্ধ করার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিধিমালার আলোকে যেভাবে করা দরকার সেভাবে হবে। মার্কেট-শপিং মল তো চলছেই, এটাও খোলা জায়গায় না। তবে যতটুকু খোলা আছে, সেখানে মানুষ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করে সেদিকে কঠোর নজরদারি থাকবে।’ করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত নতুন বিধি-নিষেধের কারণে মেলা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
গত সোমবার (১০ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে ওমিক্রনসহ করোনা শনাক্তের হার বাড়তে থাকায় মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বের হলে জরিমানার বিধানসহ ১১ দফা বিধি-নিষেধ জারি করা হয়। আগামী ১৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থেকে সারা দেশে এ বিধি-নিষেধ কার্যকর করা হবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এমনকি রেস্তোরাঁয় বসে খেতে ও আবাসিক হোটেলে থাকতে অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে। প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। তা ছাড়া রেস্তোরাঁয় বসে খেতে ও আবাসিক হোটেলে থাকতে অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
শিশুদের বিনোদনের কিছুই নেই বাণিজ্য মেলায়: রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় শিশুদের জন্য পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র ছিল। তবে পূর্বাচলে অনুষ্ঠিত এবারের মেলায় শিশুদের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়া মেলায় শিশুদের ভালো কোনো খেলনার দোকানও নেই। ফলে মেলায় আসা শিশুরা এবং তাদের অভিভাবকরা বেশ হতাশ।
অভিভাবকরা বলছেন, রাজধানী থেকে মেলার দূরত্ব অনেকে বেশি, আবার রাস্তাও খারাপ। বাস কিংবা সিএনজিতে মেলায় এসেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে শিশুরা। তাদের মন চাঙ্গা করতে শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র দরকার ছিল। মাসব্যাপী এ মেলার ১০ দিন পার হলেও শিশুদের ভালো কোনো খেলনার দোকান বা স্টল এখনো বসেনি। বাচ্চাদের জন্য এগুলো থাকা দরকার ছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগারগাঁওয়ের তুলনায় পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের এই মেলা আকারে বেশ বড়। মেলায় আগত দর্শার্থীদের লাইনে দাঁড়িয়ে যাতে টিকিট কিনতে না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত কাউন্টার রাখা হয়েছে। প্রধান গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায়, মেলার প্রবেশ পথের দুই পাশে ফাঁকা মাঠ। বসার জন্য অনেক বেঞ্চ রাখা হয়েছে। আশপাশের ফাঁকা জায়গায় বসানো হয়েছে ফুলের টব। রয়েছে পর্যাপ্ত খালি জায়গা। যেখানে ক্লান্ত দর্শনার্থীরা বিশ্রাম নিচ্ছেন। কেউ আবার সেলফি তুলছেন। বাচ্চারাও ছোটাছুটি করছে।
ভেতরে দৃষ্টিনন্দন এক্সিবিশন সেন্টার, প্যাভিলিয়ন কিংবা দোকানগুলোতে রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত জায়গা, একটি প্যাভিলিয়ন থেকে আরেকটি প্যাভিলিয়নের মধ্যে বেশ দূরত্ব রক্ষা করা হয়েছে। রয়েছে খোলামেলা পরিবেশ, খাবারের জন্য বড় বড় রেস্টুরেন্ট আর সুবিশাল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এত সব আয়োজনের পরেও শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা রাখার দরকার ছিল। যেখানে থাকবে নাগর দোলা, ঝিকঝিক ট্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের রাইড। রাজধানীর নিকুঞ্জ থেকে মা-বাবার সঙ্গে মেলায় আসা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরুল আলম বলল, ‘মেলায় এসে এবার বেশি ভালো লাগছে না। গতবার মেলায় গিয়ে অনেক রাইডে চড়েছি, দোলনায় উঠেছি। এবার এখানে কিছুই নেই, তাই আমার কোনো বন্ধুও আসেনি।’ দুই মেয়ে, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে উত্তর বাড্ডা থেকে মেলায় এসেছেন আশিকুজ্জামান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বউয়ের প্যারায় মেলা ঘুরতে এলাম। এখন মেয়েদের সামলাতে পারছি না। তারা বাসায় চলে যেতে চাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘মেলায় ঘুরে দেখলাম শিশুদের কেনাকাটার জন্য তেমন কোনো দোকান নেই। ভাল কোনো খেলনার দোকানও পেলাম না।’ ছুটির দিন ভিড় থাকে, তাই আজ অফিস ডে-তে উত্তরা থেকে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মেলায় এসেছেন রোকসানা আক্তার পপি। তিনি বলেন, ‘মেলা মানেই শিশুদের খেলনার দোকান ও বিনোদনের জন্য ভিন্ন রাইডস থাকবে। কিন্তু এখানে এসে কিছুই পেলাম না। বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য এসব ব্যবস্থা রাখার দরকার ছিল।’
তিনি বলেন, ‘গতবার স্বামীর সঙ্গে মেলায় গিয়েছিলাম। সেখানে মেয়ের বায়না ছিল হেলিকপ্টারে চড়ার। হেলিকপ্টারে উঠে এবং বিভিন্ন রাইডে চড়ে সে খুব খুশি ছিল। কিন্তু এবার মেলায় এসে তার বিনোদনের মতো কিছুই পাইনি।’
শিশুদের বিনোদনের জন্য কিছু না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ইপিবি সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মেলায় আগত শিশুদের জন্য মিনি পার্ক কিংবা বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা দরকার ছিল। স্টল কম হওয়াতে রাখা হয়নি। তবে আগামীতে রাখা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আগামী শুক্রবার থেকে দুই-তিনটি রাইড রাখার চেষ্টা করছি। যাতে শিশুরা মেলা উপভোগ করতে পারে। মেলার সামনে অনেক ফাঁকা জায়গা রয়েছে, সেখানে এই ব্যবস্থা রাখা হবে। এতে শিশুদেরও মেলায় আসার আগ্রহ বাড়বে।’ উল্লেখ্য, আগারগাঁওয়ের মেলায় শিশুদের জন্য আলাদা পার্ক ছিল। পার্কে রঙিন সাম্পানে বসে মিউজিকের তালে তালে দোল খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। শিশু-কিশোরদের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদেরও দোল খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। ঝিকঝিক ট্রেন আর চরকি, নাগরদোলা, হানি সুইং ও দোলনার পাশাপাশি হেলিকপ্টারে আকাশে ওড়ারও ব্যবস্থা ছিল শিশুদের জন্য।