বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৩:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
তীব্র গরমে কালীগঞ্জে বেঁকে গেছে রেললাইন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক মেলান্দহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী দিদার পাশা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে শ্রীপুর পৌরসভার উদ্যোগে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে কর্মশালা রায়পুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা আলী আহমেদের কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা অব্যাহত পলাশবাড়ীতে প্রচন্ড গরমে ঢোল ভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তরমুজ বিতরণ জুড়ীতে টিলাবাড়ি ক্রয় করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আনারসের পাতার আঁশ থেকে সিল্ক কাপড় তৈরির শিল্পকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে-সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাউজানে পথচারীদের মাঝে যুবলীগের ফলমূল ও ছাতা বিতরণ

আমাদেরকে মানুষের ভাগ্য গড়তে হবে : প্রধানমন্ত্রী

বাসস :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২২

বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশে পরিণত করার মাধ্যমে দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোটাই তাঁর লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিদ্যমান অগ্রগতি ধরে রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা, দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এবং বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আজকের দিনে সে প্রত্যয়ই ব্যক্ত করছি।’ তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ যতটুকু পারি জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের দু:খী মানুষের ভাগ্যটা পরিবর্তন করে দিয়ে যাব এবং দেশবাসীকেও আমি সে আহ্বানই জানাই- আজকের যে অগ্রগতিটা হয়েছে সেটা ধরে রেখে আমরা যেন আরো এগিয়ে যেতে পারি সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার অপরাহ্নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে সভাপতির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর রামপুরাস্থ বাংলাদেশ টেলিভিশন সেন্টারের (বিটিভি) শহীদ মনিরুল আলম মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে সরাসরি স¤প্রচারিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর হাতে সময় পেয়ে জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে একেবারে তৃণমূলের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষমতায়ন করতে চেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই জাতির পিতা সাধারণ মানুষ তথা তৃণমূলের মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য পদক্ষেপ নিলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিলেন তখনই কিন্তু ১৫ আগস্টের আঘাতটা এল। এই আঘাতটা শুধু একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা নয়, এই আঘাত ছিল একটি স্বাধীন দেশের আদর্শ ও চেতনাকে হত্যা করা।
কেননা ১৫ আগষ্টের পর থেকে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা সেভাবেই রাষ্ট্রটা চালিয়েছিল। ১৫ আগস্টের খুনীরা স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারি-তারাই ক্ষমতায় বসেছিল। আর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কোন চেষ্টাই তারা করেনি। কাজেই যে মানুষগুলোর জন্য তিনি (জাতির পিতা) নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, আজীবন জেল, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছেন সেই মানুষগুলোর ভাগ্য গড়াটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, তাঁরা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, বার বার আমি ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি এবং সব থেকে বড় কথা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে আসার স্মরণে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটি পালন করতে পারছি।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক ড.কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী স্বাগত ভাষণ দেন।
ছোট ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহনে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপরই এতে মুজিববর্ষের থিম সং- ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা, হৃদয়ের বাতিঘর’ সমবেত কন্ঠে পরিবেশিত হয়।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতার স্বদেশে ফিরে আসার ওপর একটি ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার তাঁর বাবাকে লিয়ে লেখা ‘বাবা’ এবং মা’কে নিয়ে লেখা ‘রেনু আমার মা’ কবিতা দুটি অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করে শোনান বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।
জাতির পিতার ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্সের ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দেয়া ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ ও অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে ২৯০ দিন বন্দী থাকার পর ১৯৭২ সালের এই দিনে (১০ জানুয়ারি) লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতে ফিরে আসেন।
এরপর থেকে জাতি দিনটিকে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে । জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে ফিরে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে যে ভাষণ প্রদান করেছিলেন সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাষণটা ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা।
তিনি বলেন, ‘একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তাঁর এই ভাষণে আমরা পেয়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশ কি আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠবে, অসা¤প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় তিনি (বঙ্গবন্ধু) ব্যক্ত করেছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, তিনি তাঁর ভাষণে এটাও বলেছিলেন যখন তাকে ফাঁসি দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয় একটি দাবি তিনি শুধু করেছিলেন যে, আমাকে তোমরা মেরে ফেলতে পারো, কিন্তু আমার লাশটা আমার বাঙালির কাছে পৌঁছে দিও। আমার বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও এবং তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন সেই ভাষণে- আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে, বারবার মরে না। মৃত্যুকে কখনো ভয় করেননি, তিনি জয় করেছিলেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
পাকিস্তানি কারাগারে জাতির পিতার ওপর যে নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছিল তা কেউ কখনো জানতে পারেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ছোট বোন শেখ রেহানাকে দিয়ে তাঁরা বার বার বিষয়টি জানতে চাইলে জাতির পিতা শুধু একটা কথাই বলতেন- ‘এটা আমি বলতে চাইনা, তোরা সহ্য করতে পারবিনা।’
এই একটি কথা থেকে আমরা বুঝতে পারি পাকিস্তানের কারাগারে কি দু:সহ ষন্ত্রনার মধ্যে তাঁকে থাকতে থাকতে হয়েছে। পাকিস্তানের কারাগারে থাকাকালিন জাতির পিতার বিরুদ্ধে মামলা ও ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়, সেলের কাছে কবর খোঁড়া হয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা হয়তো জাতির পিতা সশরীরে আমাদের মাঝে ছিলেন না, কিন্তু বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাঁদের হৃদয়ে যে প্রেরণা তিনি ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যদিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন সেটা ধারণ করে এবং তাঁর আজীবন লড়াই-সংগ্রামের ফসলই ধারণ করেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করি। কেননা শরণার্থীদের পাশ^বর্তী দেশে আশ্রয় গ্রহণ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই জাতির পিতা করে যান, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যে ঘোষণা তৎকালিন ইপিআর এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয় এবং সাথে সাথে পাকিস্তানী বাহিনী ধানমন্ডী ৩২ নম্বরের বাড়ি আক্রমন করে জাতির পিতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আর পরদিন সেই বাড়ি আবার আক্রমন করে তাঁর মা ও রাসেল সহ অন্যদের গ্রেফতার করে ধানমন্ডীর একটি বাড়িতে আটকে রাখে।
দেশ ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হলেও তাঁরা ১৭ ডিসেম্বর ধানমন্ডীর সেই বাড়ির পাকিস্তানী বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন এবং তখনও জানতেন না তাঁর বাবার ভাগ্যে কি ঘটেছে। এরপর ৮ তারিখে পিতার প্রথম কোন সংবাদ জানতে পেরে তাঁরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারি তিনি (বঙ্গবন্ধু) প্রিয় স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন। তাঁর ফিরে আসাটা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল, কারণ এই বাংলাদেশ তিনি স্বাধীন করেছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে তিনি উন্নত, সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবেন এবং পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে ফিরে পরিবারের কাছে না এসে তিনি আগে তাঁর জনগণের কাছে চলে গিয়েছিলেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com