শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন

বরিশালে মাস্কবিহীন কেনাকাটা, বাজারে মানুষের ভিড় ‘টিকা লইছি’ হেইয়ার লইগা মাস্ক পরি না

শামীম আহমেদ বরিশাল :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২২

সারা দেশে সরকার করোনা ওমিক্রনের সংক্রমন থেকে রক্ষার জন্য ১৩ জানুয়ারী থেকে বিধি জারি করলেও তা উপেক্ষিত বরিশাল শহরে অলিগলি থেকে শুরু করে মাছ বাজার ও কাচা বাজারে। বরিশাল নগরীর র্পোট রোড মৎস্য পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে সাধারন মানুষের মধ্যে অধিকাংশই মাস্ক বিহীন। লক্ষ করা গেছে ব্যবসায়ীদের অনেকের মুখেই নেই মাস্ক । তবে দেশে বেশ কিছু দিন ধরে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের পাশাপশি ওমিক্রন সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিধি নিষেধ জারি করেছে সরকার। তার পরেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সর্তক হচ্ছে না বরিশালের মানুষ। বাজার এবং গণপরিবহনে যেন স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। যে যার মতো চলছে। অনেকের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৩ জানুয়ারী থেকে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে। সরকারী ছুটির দিনে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেট, মাছ বাজার, কাচা বাজার, খাবার হোটেল, ডাক্তারের চেম্বারে, লঞ্চ, গনপরিবহনে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। বেশিরভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। দূরত্ববিধি না মেনেই মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলোতে হচ্ছে জড়ো। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসের রোগীর সংখ্যা। এদিকে মাছ বাজারে আসা কবির তালুকদার নামে এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন ভাই আপনার মুখের মাস্ক কই। তিনি প্রশ্নে উত্তর দিলেন টিকা লইছি। তাই মাস্ক পারি না। মাস্ক না পড়ে বাজারে আসছেন কেন। উত্তর আপনার সমস্যা কি। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত লক্ষে বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধি নিষেধের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন নগরের বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামুলক প্রচার অভিযানের পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন। করোনা ওমিক্রনের সংক্রমণের হার হঠাৎ করে বরিশালেও ঊর্ধ্বমুখী হলেও মানুষের মধ্যে তেমন সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। নতুল্লাবাদ বাস র্টামিনালে গিয়ে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ব না মেনে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। বরিশাল থেকে পটুয়াখালী যেতে গাদাগাদি করে তারা উঠছে বাসে। খুব অল্পসংখ্যক মানুষের মুখে মাস্ক। অধিকাংশের মুখে নেই মাস্ক। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. হুমায়ুন শাহীন খান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে যে কোনো করোনা ওমিক্রন সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এর জন্য হাত ধোয়া, সঠিকভাবে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে নিয়মিত ভাবে।
বরিশাল বিভাগে করোনা শনাক্ত ॥
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশের শরীরে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। যা চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও ওই সময়ে কোন রোগী মৃত্যুবরণ করেননি। তবে এই অঞ্চলে করোনার সংক্রমন দিনে দিনে বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। শুক্রবার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের পরিচালকের কার্যালয় ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা: হুমায়ুন শাহীন খান জানান, নতুন করে ২১ জন শনাক্তের মধ্য দিয়ে বিভাগে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৫ হাজার ৪৪৬ জন এবং মারা গেছেন ৬৭৯ জন। এ সময় সুস্থ হয়েছেন ৪৪ হাজার ৬১৮ জন। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬ জনের। যা নিয়ে মোট শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৮৭ জন। পটুয়াখালীতে নতুন একজন নিয়ে মোট ৬ হাজার ২৪৪ জন, ভোলায় নতুন শনাক্ত ২ জন নিয়ে মোট ৬ হাজার ৮৭৩ জন, পিরোজপুরে নতুন করে কেউ শনাক্ত না হওয়ায় মোট ৫ হাজার ৩১০ জন, বরগুনায়ও নতুন শনাক্ত না হলেও মোট শনাক্ত ৩ হাজার ৯৬৬ জন এবং ঝালকাঠিতে নতুন ২ জন নিয়ে মোট শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৬৬ জন। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য সংরক্ষক জাকারিয়া খান স্বপন জানান, শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৪ জন ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় ১০২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ১২ জনের পজেটিভ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ শনাক্তের হার ১১.৭৬ শতাংশ যা এই বছরের সর্বোচ্চ।
গণপরিবহনে বালাই নেই স্বাস্থ্যবিধির ॥
গতবছর গণপরিবহনে কিছুটা স্বাস্থ্যবিধির মেনে চলতে দেখলেও বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই বলেই চলে। তাদের কোনো নির্দেশনাই পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করে দূরপাল্লার বাস চলাচলের অনুমতি দিয়ে ছিলেন সরকার। নির্দেশনাগুলো হলো, মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রী গাড়িতে ওঠানো যাবে না। চালক, সুপারভাইজার, হেলপার এবং টিকিট বিক্রিতে নিয়োজিতরাও মাস্ক পরবেন। তাদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান-পানি, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করার পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে বর্তমান ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে। যাত্রার শুরু ও শেষে গাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। কিন্তু বরিশালের পরিবহনগুলোয় এসব নির্দেশনার কিছুই পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। দূরপাল্লার বাসগুলোতেও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। প্রতিটি আসনে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি দাঁড়িয়েও নেওয়া হচ্ছে যাত্রী। এ বিষয়ে ব?রিশাল জেলা বাস মা?লিক গ্রু?পের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কি?শোর কুমার দে বলেন , অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন করার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে বাস মালিক ও চালককে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন সমিতি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেউ যদি সরকারি বিধান অমান্য করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পক্ষে রয়েছি সব সময়ই। এবং কি তা বাস্তবায়নও করছি।
মাস্ক পরাতেও অনীহা ॥
বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষনা করা হয়েছে মাক্স না পড়লে সেবা দেওয়া হবেনা। প্রতিটি শপিং মল, দোকান, খাবার হোটেল, মাছ বাজার, কাচা বাজারসহ দর্শনীয় স্থানে মাস্ক পড়তে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে করা হচ্ছে মাইকিং। কিন্তু ঘোষনা দেওয়ার দ্বিতীয় দিনই লক্ষ করা গেছে বাস্তবে তা উল্টো। মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছে মানুষ। এবং মাস্ক ছাড়াই বিভিন্ন স্থানে আসা যাওয়া করছেন তারা। বাজারে আসা অধিকাংশ মানুষের মুখেই নেই মাক্স। পাড়া মহল্লার দোকান এবং রাস্তাঘাটে মাস্কের ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার অনীহা সবচেয়ে বেশি। বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাস্ক ছাড়াই নিজ এলাকায় চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। এলাকার দোকানগুলোয়ও একজনের সঙ্গে আরেকজন গা ঘেঁষেই কিনছেন নিত্যপণ্য। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে খাবার হোটেলেও তাদের মধ্যে অনেকেরই মুখেই নেই মাস্ক। মাস্ক নেই কেন জানতে চাইলে বলেন, এলাকার ভেতরে তো, তাই পরা হয়নি। মাস্ক ছাড়া ক্রেতা এলে কিছু বলছেন না কেন জানতে চাইলে দোকানদার বলেন, এলাকার মানুষ তাদের কীভাবে বলি। আর কাস্টমার নিজে সচেতন না হলে কী করার আছে। এ ব্যাপারে বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, নিজেদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে হবে। একজন সচেতন নাগরিকের মতো দায়িত্ব পালন করতে হবে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। শুধু নির্দেশনা দিলে হবে না, সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না এ জন্য মনিটরিং জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বাইরে বের হলে মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সুস্থ থাকতে চাইলে এগুলো অবশ্যই মানতে হবে। বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, করোনা ওমিক্রনের সংক্রমন থেকে রক্ষার পাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। আসা করি বরিশালের মানুষ সরকারী নির্দেশ বাস্তবায়ন করবেন। তিনি আরো বলেন, বরিশালে যারা মাক্স ব্যবহার করবে না তাদের কোন সেবা দেওয়া হবে না। সরকারী বিধিনিষেধ অমান্যকারীকে প্রয়োজনে জেল-জরিমানা করা হবে। করোনা ওমিক্রনের সংক্রমন থেকে বাঁচতে হলে মাক্স এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে সবাইকে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com