প্রকৃতির পালাবদলে এসেছে শীত। ঋতুচক্রের এই দেশে পৌষ ও মাঘ আতিথেয়তার মাস। শীতের শুরুতেই নদী-নালা, খাল-বিলে ছুটে আসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অলংকার নানা প্রজাতির অতিথি পাখি। হাজারো পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বুকচিরে প্রবাহিত আত্রাই নদী। এই দৃশ্য না দেখলে বুঝানো দায়, এ যে কী এক আলাদা অনুভূতি! পরিযায়ী পাখির কল-কাকলিতে ঘুম ভাঙে উপজেলার কুঞ্জবন এলাকার আত্রাই নদীর দুইপারের মানুষের। পাখির নিরাপদ আবাস করে দিতে প্রচেষ্টার কমতি রাখেনি সেখানকার সামাজিক সংগঠনগুলো। পাখি দেখতে দর্শনার্থীর ভীড় বাড়ছে প্রতিদিন। এলাকাবাসী জানায়, শীতপ্রধান দেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পরিযায়ী পাখি এসে নদীতে আশ্রয় নেয়। শীতের শুরুতে আসতে শুরু করে এসব পাখি। সারাদিন নদীতে থাকলেও রাতে পাখিগুলো ফিরে যায় পাশের বিল মোহাম্মদপুর, রামচন্দ্রপুর, মধুবনসহ কয়েকটি গ্রামে। ভোরে আবারও ফিরে আসে নদীতে। প্রায় ১২ বছর থেকে আত্রাই নদীর কুঞ্জবন, দশ কলোনি ও মধুবন এলাকাজুড়ে অতিথি পাখি আসছে শীত মৌসুমে। এ সময় নদীতে পানির পরিমাণও কম থাকে। বছরের ৪-৫ মাস পাখিগুলো এখানেই থাকে। সরেজমিনে দেখা যায়, নদীতে পানি ছুঁইছুঁই বাঁশ দিয়ে পাখিদের বসার উপযোগি করে গড়ে তোলা হয়েছে অভয়ারণ্য। মনোরম এ পরিবেশ উপভোগ করতে প্রতিদিন দূর-দূরন্ত থেকে আসছে দর্শনার্থী। কথা হয় শিল্পী খাতুন, মেরিনা আকতার, স¤্রাট হোসেনসহ ১০-১২ জন দর্শনার্থীর সাথে। তারা জানান, পাখির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র সব সময় তাদের ভালো লাগে। নয়নাভির এ দৃশ্য উপভোগ করতে তারা এখানে বার বার আসেন। সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি সরকারিভাবে পাখির অভয়ারণ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করেন তারা। কুঞ্জবন এলাকার বিচিত্র পাখি উৎপাদন গবেষণা পরিষদ নামের সামাজিক সংগঠনের পরিচালক মুনসুর সরকার জানান, আত্রাই নদীতে বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরাসহ ১০-১৫ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির বিচরণ। কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে এজন্য তারা কাজ করছেন। মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন বলেন, পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য ও পাখি কলোনি গড়ে ওঠায় দেশে এই উপজেলা প্রশংসিত হয়েছে।