বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় শূন্যতা হলো এক মহানুভব উদ্যমী নেতার। যিনি সাহস, বিশ্বাস, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে বোঝাপড়া করবেন। এই আধুনিক সভ্যতার বিভিন্ন কাঠামো, বিভিন্ন চিন্তা ও ধারার মধ্যে একটি নতুন পথ নির্মাণ করবেন। যে পথ অনুসরণ, অতিশয়োক্তি ও সীমা লঙ্ঘনের ত্রুটি থেকে মুক্ত হবে। যিনি বাহ্যিক আকৃতি, মুখরোচক প্রদর্শনী ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের ঊর্ধ্বে হবেন। তিনি ধারণ করবেন সত্য, প্রয়োজনীয় উপকরণ ও নিখাদ বিশ্বাস। বাহ্যিক চাকচিক্য পরিহারের শক্তি থাকবে তাঁর।
মুসলিম বিশ্বের জন্য একজন যোগ্য নেতা প্রয়োজন। যিনি হবেন অতুলনীয় প্রতিভার অধিকারী। তিনি দেশ ও জাতির জন্য এমন এক রাজপথ উন্মুক্ত করতে সক্ষম হবেন, যে পথে একদিকে এমন দীপ্ত বিশ্বাস থাকবে, যা কেবল নবুয়তের আলোয় আলোকিত এবং দ্বিন ও শরিয়ত থাকবে, যা আল্লাহ তাঁর রাসুলের মাধ্যমে এই উম্মতকে দান করেছেন। অন্যদিকে তিনি এমন জ্ঞানের বাহক হবেন, যা কোনো দেশ, জাতি বা সময়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট নয়। তিনি দ্বিন ও ধর্ম থেকে এমন অনুপ্রেরণা ও উদ্যম লাভ করবেন, যা মানবতার সেবা ও সভ্যতা নির্মাণের সর্বোত্তম রসদ হবে। তিনি এমন নির্ভুল গন্তব্য নির্ধারণ করবেন, যা কেবল আসমানি দ্বিন ও সঠিক ধর্মীয় প্রশিক্ষণ দ্বারা অর্জিত হতে পারে। একই সঙ্গে তিনি পশ্চিমা সভ্যতার উপহার আধুনিক উপায়-উপকরণগুলোও সংগ্রহ করবেন, যা পশ্চিমা বিশ্ব দীর্ঘকালের অধ্যয়ন, গবেষণা ও শ্রমের মাধ্যমে অর্জন করেছে। কিন্তু ঈমান ও সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণের অভাবে তা থেকে যথাযথ উপকার লাভ করতে পারেনি, বরং একে মানবতা হত্যা, সভ্যতার ধ্বংস বা অন্য কোনো অন্যায় কাজে ব্যবহার করছে। তিনি পাশ্চাত্য সভ্যতাকে এই দৃষ্টিতে দেখবেন না যে তা পূর্ণতা ও উন্নতির শেষ মঞ্জিল অতিক্রম করেছে এবং এর ওপর শেষ সিলমোহর লেগে গেছে। ফলে তাতে আর কোনো সংশোধন ও সংযোজনের কোনো স্থান নেই। আর তা তার দোষত্রুটিসহ গ্রহণ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই, বরং তিনি এর সামগ্রিক কাঠামোকে ভিন্ন ভিন্ন অংশ হিসেবে বিবেচনা করে তা থেকে যে অংশ বাদ দেওয়ার ইচ্ছা হয় বাদ দেবেন এবং যে অংশ গ্রহণ করার, তা গ্রহণ করবেন। এরপর তিনি এসব উপাদান দ্বারা জীবনের এমন এক কাঠামো তৈরি করবেন, যা তার উদ্দেশ্যগুলো, তার বিশ্বাস, তার নৈতিকতার মৌলিক বিষয়গুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল হয়। ইসলাম তাঁকে জীবনের যে পদ্ধতি, পৃথিবী সম্পর্কে যে বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি, মানবজাতির সঙ্গে আচার-আচরণে যে বিশেষ আদেশাবলি, পরকালের জন্য অবিরাম চেষ্টা ও অধ্যবসায় দান করেছেন, এর ওপর তিনি প্রতিষ্ঠিত থাকবেন। ফলে তা দ্বারা ওই জীবন প্রতিষ্ঠিত হবে, যে জীবন সম্পর্কে কোরআন সাক্ষ্য দিয়েছে, ‘মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে সৎকর্ম করবে, তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৭) ইমেইল: তামিরে হায়াত থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর